ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ডিজেল-কেরোসিনের দাম বাড়ায় দ্রব্যমূল্য বাড়বে

রেজাউল করিম রাজা ও গৌতম চন্দ্র ঘোষ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৪, ২০২১
ডিজেল-কেরোসিনের দাম বাড়ায় দ্রব্যমূল্য বাড়বে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, এ বি মির্জা মো. আজিজুল ইসলাম ও অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান

ঢাকা: জ্বালানি তেল ডিজেল-কেরোসিনের দাম বাড়ার ফলে অন্যান্য সব দ্রব্য বা পণ্যের মূল্য বাড়বে বলে মন্তব্য করেছেন দেশের রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিরা।

বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) ডিজেল-কেরোসিনের দাম বাড়ার ফলে সাধারণ মানুষ এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে কি প্রভাব হতে পারে জানতে চাইলে তারা বাংলানিউজকে এসব কথা বলেন।

তারা বলেছেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে, পণ্যের পরিবহন এবং উৎপাদন খরচ বাড়বে, ফলে পণ্যের মূল্য স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যাবে। দ্রব্যমূল্য বাড়ার ফলে মানুষের প্রকৃত আয় কমে যাবে, একই সঙ্গে মানুষের ক্রয় ক্ষমতাও কমবে। পাশাপাশি মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে।

ডিজেল-কেরোসিনের দাম বাড়া প্রসঙ্গে সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ডিজেল এবং কেরোসিনের মূল্য বাড়িয়ে সরকার মানুষের সর্বনাশ ডেকে আনছে। ইতোমধ্যেই সরকারের নীতির ফলে এবং লুটেরা ধনীক শ্রেণির লুটপাটের ফলে দ্রব্যমূল্য বাড়তে বাড়তে মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস উঠে গেছে। এমতাবস্থায় সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা, ন্যায্য মূল্যের দোকান খোলা এবং টিসিবির দোকান আরও বেশি করে চালু করা, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমানো। সেটা না করে সরকার লুটেরাদের লুটপাট করার সুযোগ করে দিয়েছে। দ্রব্যমূল্যের বাড়তি সময়ে বোঝার ওপর শাকের আঁটির মতো ডিজেল এবং কেরোসিনের দাম অযৌক্তিকভাবে হঠাৎ করেই বাড়ানো হয়েছে।

তিনি বলেন, এখানে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে দুটি, অকটেনের দাম বাড়ানো হয়নি কারণ অকটেন বড়লোকেরা ব্যবহার করে। ডিজেল এবং কেরোসিন গরিব মানুষের ব্যবহার করে। ডিজেল এবং কেরোসিনের মূল্য বাড়ানোর ফলে পরিবহন খাতসহ সবক্ষেত্রে অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি হবে। দ্রব্যমূল্য যেহেতু হু হু করে বাড়ছে, কিন্তু মানুষের আয় বাড়ছে না, শুধু অর্থনীতিবিদ নয় সাধারণ মানুষ এটা বোঝে যখন আয় কমে যায়, আয় এক জায়গায় স্থির থাকে, অন্যদিকে দ্রব্যমূল্য বাড়ে তখন জনগণের ক্রয় ক্ষমতা কমে যায়,  প্রকৃত আয় কমে যায়। অর্থাৎ সরকার জনগণের প্রকৃত আয় কমানোর নিষ্ঠুর পদক্ষেপ গ্রহণ করলো কেরোসিন এবং ডিজেলের মূল্য বাড়িয়ে। আমরা এর তীব্র নিন্দা এবং ধিক্কার জানাই।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ এ বি মির্জা মো. আজিজুল ইসলাম এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ায় ব্যবসা বাণিজ্য ও ভোক্তা পর্যায়ে প্রভাব ফেলবে। ডিজেল যেহেতু এনার্জি সোর্স কাজেই অনেক জায়গায় খরচ বাড়বে। বিশেষ করে ট্রান্সপোর্টে, এতে পরিবহন খরচ এবং পণ্যের দাম বাড়বে। এশিয়ার সব দেশের মধ্যে আমাদের মূল্যস্ফীতি বেশি। এর মাত্রা আরও বেড়ে যাবে। এর প্রতিফলন কিছুটা পড়বেই। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়েছে তার সঙ্গে সমন্বয় না করলে ভর্তুকি দিতে হবে। এটা কে দেবে। পাশাপাশি সরকারকে রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। সব কিছু মিলিয়ে কিছু করার নেই। কারণ আমরা যেহেতু আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভরশীল। অন্যদিকে কেরোসিন সাধারণ ভোক্তাদের কিছুটা অস্বস্তিতে ফেলবে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, জ্বালানির দাম বাড়াতে সামষ্টিক অর্থনীতিতে কিছুটি প্রভাবতো ফেলবেই। আন্তর্জাতিক বাজারে যেহেতু দাম বেড়েছে পাশাপাশি আমাদের পাশের দেশ ভারতেও এর দাম বাড়িয়েছে। তবে আমাদের এখানে সমন্বয়টা করতে হবে আস্তে আস্তে বাজারের মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে। এখন যেটা করা হয়েছে সেটা ভোক্তা, উৎপাদক পর্যায়ে প্রভাব পড়বে। কেরোসিনের দামটা আর একটু কম হলে ভালো হতো, যেহেতু এ তেলটা কম আয়ের মানুষ ব্যবহার করে থাকে। সরকার যেটা করেছে সামষ্টিক অর্থনীতির চাপ কমাতে সরকারের আর কোনো উপায় ছিল না।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০২১
আরকেআর/জিসিজি/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।