ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

৯ মাসে ৮০৫ কোটি টাকার ঋণ অবলোপন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৭, ২০২১
৯ মাসে ৮০৫ কোটি টাকার ঋণ অবলোপন

ঢাকা: চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) ৮০৫ কোটি টাকার ঋণ অবলোপন করেছে দেশের ব্যাংকগুলো। প্রভাবশালী গ্রহীতাদের ঋণ মওকুফ করায় খেলাপি ঋণ আদায় কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে ঢালাওভাবে ঋণ অবলোপন করায় দুই বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ আদায় কমেছে ১১ হাজার ২৭১ কোটি টাকা।

সাধারণত ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণ করতে ব্যর্থ হওয়ার পরে ঋণ অবলোপন করে। মহামারির কারণে ব্যাংকগুলো প্রভিশন সংরক্ষণ করতে না পেরেই ঢালাওভাবে ঋণ অবলোপন করেছে।

ঋণ অবলোপন করা হলে ব্যাংকের ব্যালেন্স শিট (হিসাব) থেকে মুছে ফেলা হয়, ফলে ভবিষ্যতেও এসব ঋণ আর পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা থাকে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলো ৮০৫ কোটি টাকার ঋণ অবলোপন করেছে। আগের বছর ২০২০ সালে অবলোপন করেছে ১ হাজার ১৪২ কোটি টাকা। ২০১৯ সালে অবলোপনকৃত ঋণের পরিমাণ ২ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা। একই ভাবে ২০১৯ সালে ব্যাংকগুলো ৩ হাজার ৫২৩ কোটি টাকার ঋণ অবলোপন করেছে।

এদিকে ব্যাংকগুলোর ঋণ অবলোপনের সুযোগ নিয়েছেন প্রভাবশালী ঋণ গ্রহীতারা। বছরের পর বছর তারা ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করছেন না। এতে খেলাপি ঋণ আদায়ের পরিমাণ কমে যাচ্ছে ধারাবাহিকভাবে।

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলো ৪ হাজার ১৯৫ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ আদায় করেছে। ২০২০ সালে খেলাপি ঋণ থেকে ব্যাংকগুলো আদায় করেছে ৫ হাজার ৮০২ কোটি টাকা। ২০১৯ সালে আদায়ের পরিমাণ ছিল ১৫ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা। দুই বছরের ব্যবধানে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ আদায় কমেছে ১১ হাজার ২৭১ কোটি টাকা।

মহামারির কারণে ব্যাংকগুলোকে নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণে ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এক সার্কুলারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক খেলাপি ঋণের বিপরীতে ৬০ শতাংশ নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণের নির্দেশনা দেয়।

যদিও নিয়মিত ঋণের বিপরীতে ০ দশমিক ২৫ শতাংশ পর্যন্ত নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখার নির্দেশনা রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। এছাড়াও নিম্নমানের খেলাপি ঋণের বিপরীতে ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দমানের ঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখার বিধান রয়েছে।

নির্দিষ্টমানের ঋণ অবলোপন করা হবে ধরেই ব্যাংকগুলো ওইসব ঋণের বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণ করে থাকে।

এ বিষয়ে বেসরকারি ব্যাংক ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, অনেক গ্রহীতা ঋণ পরিশোধ করছেন না। এতে ব্যাংকগুলোর অবস্থা ভালো নয়। মহামারির কারণে ঋণ পরিশোধ কমে গেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে খেলাপি ঋণ উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় দেশের ব্যাংকিং খাতে নিরাপত্তা সঞ্চিতির (প্রভিশন) ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়েছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোর নিরাপত্তা সঞ্চিতি ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২০৪ কোটি টাকা। যা আগের বছরের তুলনায় ৫০ গুণ বা ১৩৫ শতাংশ বেশি। ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১২৩ কোটি টাকা।

চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা, যা আগের বছরের প্রথম নয় মাসের তুলনায় ১৪ শতাংশ এবং এক বছরের তুলনায় ৭ দশমিক ১ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর সালেহ উদ্দিন বলেন, ব্যাংকিং খাতের সংকট সমাধানে ঋণ অবলোপন সমাধান নয়। ব্যাংকগুলোকে আদালতে মামলা করে খারাপ ঋণ উদ্ধার করতে হবে। মন্দমানের ঋণ হিসেবে ৩ বছর বদ্ধ রেখে ঋণ অবলোপন করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ঋণ শ্রেণিকরণে বাংলাদেশ ব্যাংকের শিথিলতা ব্যাংকগুলোর অধিক প্রভিশন সংরক্ষণ থেকে ছাড় দিয়েছে। এটা ঠিক হয়নি। যখন ব্যাংকের ভিত্তি দুর্বল হয়ে যায়, তখন মন্দমানের ঋণের বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণ কঠিন হয়ে পড়ে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০২১
এসই/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।