ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

জীবন বিমার ৫০০ বিলিয়ন টাকার আলাদা তহবিল!

শাহেদ ইরশাদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০২১
জীবন বিমার ৫০০ বিলিয়ন টাকার আলাদা তহবিল!

ঢাকা: পরিচালকদের ব্যাপক তহবিল অপব্যবহারের মাধ্যমে কথিত লঙ্ঘন থেকে বিমা গ্রহিতাদের স্বার্থ সুরক্ষায় প্রবিধানের মাধ্যমে জীবন বিমা শিল্পের জন্য ৫০০ বিলিয়ন টাকার একটি আলাদা তহবিল গঠন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিয়ন্ত্রণ সংস্থার এই পদক্ষেপ বিমা কোম্পানিগুলোর তহবিলের অভ্যন্তরীণ অপব্যবহার রোধসহ তহবিল ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে।

জীবন বিমা তহবিলে কোম্পানির পরিচালক এবং গ্রহিতা উভয়ের সমান অবদান রয়েছে। সাধারণত বিমা গ্রহিতাদের অংশ বড় থাকে। এ কারণে জীবন বিমা কোম্পানিগুলোকে বিমা গ্রহিতা কোম্পানি বলা হয়।

অভিযোগ রয়েছে জীবন বিমা কোম্পানিগুলোর পরিচালকদের অংশীদারিত্ব ১০ শতাংশ হওয়া সত্বেও তারা অনৈতিক ভাবে আর্থিক সুবিধা নেন।

সম্প্রতি ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পরিচালকদের বিরুদ্ধে ৩ হাজার ৬৮৭ কোটি দুর্নীতির অভিযোগ জানিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে চিঠি দিয়েছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা আইডিআরএ।

জীবন বিমা তহবিল বলতে সেই তহবিলকে বোঝানো হয় যা একজন বিমাকারীর কাছ থেকে রশিদের মাধ্যমে নেওয়া হয়। এটি বিমা গ্রহিতার প্রিমিয়াম হিসেবে দেওয়া অর্থের ভিত্তিতে নির্মিত হয়। যে অর্থ দিয়ে কোম্পানি ব্যবসা করে।

জীবন বিমা তহিবল বিনিয়োগের নীতিমালা করছে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। যা সাধারণ ভাবে সরকারি বন্ডের মত ঝুঁকিমুক্ত আর্থিক পণ্য, এমনকি আবাসনখাতেও বিনিয়োগ করা হবে।

বাংলাদেশে বর্তমানে দুই ধরনের বিমা পরিকল্পনা রয়েছে। একটি হলো অংশগ্রহণমূলক নীতি ব্যবস্থার মাধ্যমে যেখানে বিমা কোম্পানিগুলো তাদের আয় বিমা গ্রহিতাদের সঙ্গে বার্ষিক ভিত্তিতে বোনাস হিসেবে ভাগ করে নেয়। যা ব্যক্তিগত জীবন বিমা পণ্য।

আরেকটি হলো অ-অংশগ্রহণমূলক। যেখানে বিমাকারীরা তহবিল আয় করা মুনাফার ভাগ পায় না। এটা সাধারণ ভাবে গ্রুপ বিমা নামে পরিচিত। বড় বড় কোম্পানি ও একসঙ্গে একাধিক ব্যক্তি স্বাস্থ্য-বিমা গ্রহিতা। যেখানে কোম্পানিগুলো বিমা গ্রহিতাদের সঙ্গে মুনাফা ভাগ করে না। তবে এসব বিমার প্রিমিয়ামের অংকও কম।

সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এ বিষয়ে অংশীজনদের সঙ্গে সচিবালয়ে বৈঠক করেছে।

বৈঠকে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন, বিমা কোম্পানিগুলোর প্রধান নির্বাহীদের একটি প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরাম এবং বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) প্রতিনিধিরা যোগ দেন। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবদুল্লাহ হারুন পাশা।

বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন বাংলানিউজকে বলেন, এটি তহবিলের স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য বোঝানো হয়েছে। কারণ পলিসি হোল্ডারদের যাদের অবদান তহবিলে প্রায় ৯০ শতাংশ তাদের তহবিলের বিষয়ে ‘কোন কথা নেই’।

তিনি বলেন, পরিচালকরা যে তহবিলের অপব্যবহারের করেন, তার অনেক কিছুই জানেন। এ বিষয়ে প্রবিধান প্রণয়নের পরে বিমা শিল্প আরও আস্থা অর্জন করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। এটি বাস্তবায়নে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তবে এটি একবার হয়ে গেলে শিল্পের জন্য একটি বড় উল্লম্ফন হবে।

একটি বিমা কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) তহবিল অপব্যবহারের তিক্ত অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছিলেন। তিনি বলেন, জীবন বিমা কোম্পানির চেয়ারম্যান তাকে ২০০৭-২০০৮ সালে জীবন বিমা তহবিল থেকে একটি বড় অংকের তহবিল উত্তোলন করতে বাধ্য করেছিলেন।

দুটি বিদেশি কোম্পানিসহ দেশে বর্তমানে ৩৩টি জীবন বীমা কোম্পানি রয়েছে। এসব কোম্পানির গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৯০ লাখ।

জীবন বিমা তহবিলের মোট আকার প্রায় ৫০০ বিলিয়ন টাকা। এর মধ্যে ৩৬০ বিলিয়ন টাকা সরকারি সিকিউরিটিজ এবং এককালীন স্থায়ী আমানতে (এফডিআর) বিনিয়োগ করা হয়েছে।

তবে, বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষসহ (আইডিআরএ) আরও কয়েকটি সংস্থা সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে পরামর্শ করে সরকার এই প্রবিধান জারি করতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০২১
এসই/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।