ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

নেপালে হ্যান্ডসেট রপ্তানি শুরু করলো সিম্ফনি

ইসমাইল হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০২২
নেপালে হ্যান্ডসেট রপ্তানি শুরু করলো সিম্ফনি

সিম্ফনি কারখানা থেকে: দেশীয় মোবাইল ফোন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এডিসন গ্রুপ তাদের উৎপাদিত সিম্ফনি মোবাইল হ্যান্ডসেট নেপালে রপ্তানি শুরু করেছে।  বাংলাদেশ থেকে সিম্ফনি মোবাইলই প্রথম সরাসরি ব্র্যান্ড নেইম নিয়েই ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগযুক্ত স্মার্টফোন রপ্তানি করা হচ্ছে।

এটাকে তারা দেশের রপ্তানি খাতে নতুন এক মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করছে সিম্ফনি।

শনিবার (২২ জানুয়ারি) আশুলিয়ার আউকপাড়া এলাকায় এডিসন গ্রুপের ফ্যাক্টরিতে এক অনুষ্ঠানে কেক কেটে সিম্ফনি মোবাইল রপ্তানি কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. খলিলুর রহমান, বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার এবং এডিসন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর জাকারিয়া শাহীদ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও বিটিআরসির শীর্ষ কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

জাকারিয়া শাহীদ বলেন, গত অক্টোবরের শেষ দিকে নেপালে তিনটি মডেলের ১৫ হাজার ইউনিট স্মার্টফোন সরবরাহের মাধ্যমে রপ্তানি শুরু করা হয়। আজ বিভিন্ন মডেলের ১০ হাজার মোবাইল পাঠানো হচ্ছে। এভাবে প্রতি মাসে ১০ হাজার করে মোবাইল সেট পাঠানো হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ নীতির কারণে উৎপাদনকারী দেশ থেকে রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে জানিয়ে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, আজকে একটি ঐতিহাসিক দিন। আমাদের ছেলেমেয়েদের হাতে তৈরি হ্যান্ডসেট বিদেশে যাচ্ছে, এটি অত্যন্ত গর্বের। আজকে শুধু হ্যান্ডসেট তৈরি নয়, আমাদের ছেলেরা স্যাটেলাইট পরিচালনা করছে!

মোস্তাফা জব্বার বলেন, এই রপ্তানির মাধ্যমে সিম্ফনি বিশ্বে ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিত পাবে। চলুন সিম্ফনিকে বাংলাদেশের প্রতীকে রূপান্তর করি। হয়তো ভবিষ্যতে নেপালে সেট উৎপাদন করবে, কিন্তু আমাদের কাছ থেকে টেকনোলজি নিতে হবে। কারণ, নেপালের আমাদের বাংলাদেশের প্রতি কোনো কারণে দুর্বলতা রয়েছে।

টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে ট্যাক্স সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

দেশীয় কর্মীদের হাতে তৈরি হ্যান্ডসেট রপ্তানি করা নিয়ে বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, আপনারা সোনার মানুষ। আপনাদের হাতে তৈরি সেট বিদেশে যাচ্ছে। আমি কারখানা ভিজিট করে দেখেছি, এখানকার কর্মপরিবেশ চমৎকার। এটা ধরে রাখতে হবে। পণ্ডিতের উৎপাদন ও রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আশ্বাস দেন চেয়ারম্যান।

এডিসন গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর জাকারিয়া বলেন, নেপালের স্থানীয় ডিস্ট্রিবিউটরের মাধ্যমে রপ্তানি করা শুরু করা হয়েছে এবং পরবর্তীতে সেখানে আউটলেট করার পরিকল্পনা রয়েছে।

তিনি বলেন, ফ্যাক্টরিতে বর্তমানে ১৩-১৪শ’ কর্মী কাজ করছেন, যার শতভাগ বাংলাদেশি। ফ্যাক্টরি স্থানান্তরের পর আমাদের ছেলেরাই মেশিন সেটিং করেছে, যেটা বিদেশিদের দিয়ে করা হতো। ভবিষ্যতে আরও চারটি দেশে রপ্তানির করার জন্য কাজ চলছে। ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা, ওমানও নাইজেরিয়ায় রপ্তানি করা হবে। পণ্যের মান আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড এবং দামও সুলভ।

বর্তমানে প্রতিমাসে ফিচার ফোন ও স্মার্টফোন মিলে ৬ লাখের বেশি হ্যান্ডসেট উৎপাদন হচ্ছে জানিয়ে জাকারিয়া বলেন, এই সংখ্যা এই বছরের মধ্যে ১০ লাখে উন্নীত করা হবে। কয়েক মাসের মধ্যে কারখানায়  ট্যাবলেট উৎপাদন শুরু করা হবে। ল্যাপটপও উৎপাদন করা যাবে। এছাড়াও, বর্তমানে ব্যাটারি, চার্জার উৎপাদন করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে স্মার্ট গ্যাজেট এবং আগামী ছয় মাসের মধ্যে ফাইভজি ডিভাইস পর উৎপাদন শুরু করা হবে।  

প্রতিবন্ধকতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমদানি করতে ১০ শতাংশ করারোপ থাকায় সমস্যা হচ্ছে। সম্ভাবনাময় খাতে এটা তুলে নেওয়া হলে এবং ইনসেনটিভ দেওয়া হলে সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। এতে বাংলাদেশ থেকে মোবাইল ফোন আমদানি শুরু করবে অন্যান্য দেশ।

সিম্ফনি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২০১৮ সালে সিম্ফনি মোবাইল প্রায় ৫৫ হাজার স্কয়ার ফিট জায়গায় তাদের যাত্রা শুরু করে আশুলিয়ার জিরাবোতে। এখন আশুলিয়ার আউকপাড়া ডেইরি ফার্মে নিজস্ব জমিতে সিম্ফনি মোবাইলের ফ্যাক্টরিটি প্রায় ২ লাখ স্কয়ার ফিট জায়গার ওপর নির্মিত, যেখানে প্রতি বছর প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মোবাইল ফোন উৎপাদিত হচ্ছে।  

স্মার্টফোনের পাশাপাশি মোবাইল ফোনের নানা যন্ত্রাংশ এবং এক্সেসরিজও তৈরি করছে সিম্ফনি। সিম্ফনির কারখানায় প্রতি মাসে ৮ লাখ চার্জার, ৮ লাখ ব্যাটারি এবং ৮ লাখ ইয়ারফোন উৎপাদিত হচ্ছে, সামনে তা আরো বাড়বে। এছাড়াও মেইড ইন বাংলাদেশ ট্যাবলেট এর ঘোষণাও দিয়েছেন জাকারিয়া শাহীদ।

বিটিআরসি এবং টেলিযোগাযোগ বিভাগ জানায়, সরকারের ডিজিটাল প্রযুক্তিবান্ধব নীতির ফলে ২০১৮ সালের পর থেকে দেশে বিশ্বখ‌্যাত বিভিন্ন ব্র্যান্ডসহ ১৪টি কারখানায় হ্যান্ডসেট উৎপাদন শুরু হয়। গত এক বছরে (২০২০-২১) টু-জি, থ্রি-জি, ফোর-জি এবং ফাইভ-জি মিলিয়ে মোট দুই কোটি ৬১ লাখ মোবাইল হ‌্যান্ডসেট উৎপাদন ও বাজারজাত করেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০২২
এমআইএইচ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।