ঢাকা: বাংলাদেশের বিদ্যুৎকেন্দ্র ইউনিক মেঘনাঘাট পাওয়ার লিমিটেডের ২৪ শতাংশ কিনে নিয়েছে কাতারভিত্তিকি কোম্পানি নেব্রাস পাওয়ার ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট (এনপিআইএম)।
দুবাইভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গালফ নিউজ তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এনপিআইএম এই শেয়ার কিনেছে ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসর্টস (ইউএইচআরএল) ও স্ট্র্যাটেজিক ফাইন্যান্স লিমিটেডের (এসএফএল) কাছ থেকে।
এ চুক্তি সংক্রান্ত আর্থিক কোনো বিবরণী প্রকাশ করা হয়নি, তবে নেব্রাসের সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট, বোর্ড অব ডিরেক্টরস, ইউএইচআরএল, এসএফএল ও জিইর এ বিষয়ে পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। মেঘনাঘাট পাওয়ার লিমিটেডের (ইউএমপিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে আছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী চৌধুরী নাফিজ সরাফাত।
চুক্তির বিষয়ে নেব্রাস পাওয়ারের চেয়ারম্যান নাসের আল-হাজরি গালফ নিউজকে বলেন, ইউনিক মেঘনাঘাট পাওয়ারের ইকুইটি শেয়ার অধিগ্রহণ ও এ খাতে স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান ইউএইচআরএল ও এসএফএলের সঙ্গে অংশীদারত্ব প্রতিষ্ঠা আমাদের শুধু জ্বালানির ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতেই সাহায্য করবে না, এটি নেব্রাসের বাংলাদেশি জ্বালানি খাতে প্রবেশের ক্ষেত্রে একটি কৌশলগত ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।
নেব্রাসের সিইও খালিদ মোহামেদ জোলো বলেন যে, তারা কোম্পানিটির পরিচ্ছন্ন জ্বালানির উৎসে ভবিষ্যৎ বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির বাজার হিসেবে বিবেচনা করেন।
ইউনিক মেঘনাঘাট নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁর মেঘানাঘাটে ৫৮৪ মেগাওয়াটের কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্ট তৈরি করছে। প্রজেক্টটির মূল শক্তির জোগানদাতা এবং এর কোরে ব্যবহার করা হবে বিশ্বের অন্যতম কার্যকর জিই কোম্পানির অত্যাধুনিক ৯এইচএ.জিরো ওয়ান গ্যাস টারবাইন। প্ল্যান্টটি সম্পূর্ণ হওয়ার পর এটি হবে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ ‘স্বাধীন বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী’ প্রকল্পগুলোর একটি। এটি আগামী ২২ বছরের জন্য বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে।
নেব্রাসের চিফ বিজনেস ডেভেলপমেন্ট অফিসার ফয়সাল আল-সিদ্দিকি বলেন, সর্বশেষ এ অধিগ্রহণ ও অংশীদারিত্ব শীর্ষস্থানীয় বৈশ্বিক জ্বালানি বিনিয়োগ কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি হওয়ার এবং আমাদের সম্পদের ভিত্তিকে বৈচিত্র্যময় করার যে উচ্চাকাঙ্ক্ষা, তারই উদাহরণ। এই চুক্তি অনুযায়ী, নির্ভরযোগ্য জ্বালানি সরবরাহ করার পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর আর্থিক রিটার্ন তৈরি করা গ্রিনফিল্ড ও ব্রাউনফিল্ডের উন্নয়নের ওপর মনোযোগ দেওয়া অব্যাহত রাখবে নেব্রাস।
জানা গেছে, নেব্রাস পাওয়ার, কাতার ইলেকট্রিসিটি অ্যান্ড ওয়াটার কোম্পানি (৬০%) ও কাতার হোল্ডিং (৪০%) এর একটি যৌথ উদ্যোগ। প্রতিষ্ঠানটি বিদ্যুৎ ও জল খাতে কৌশলগত বিনিয়োগকারী।
একনজরে ইউনিক মেঘনাঘাট পাওয়ার লিমিটেড
দেশে বিদ্যুতের ভবিষ্যৎ চাহিদা নিশ্চিতে বাস্তবায়ন হচ্ছে বিভিন্ন প্রকল্প। এ লক্ষ্যে বিদ্যুতের গতিতে এগিয়ে চলছে দেশের সবচেয়ে বড় ৫৮৪ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার একক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ। ইউনিক মেঘনাঘাট পাওয়ার লিমিটেড (ইউএমপিএল) নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাটে গ্যাসভিত্তিক এ কম্বাইন্ড সাইকেলের বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে। প্রায় ১৯ একর জমিতে নির্মাণ হচ্ছে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। এতে খরচ হবে ৪ হাজার ৭৩ কোটি টাকা। ২০২২ সালের মধ্যে বিদুৎকেন্দ্রটির উৎপাদনে যাওয়ার সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।
এ কেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুৎ প্রায় ৭ লাখ বাড়িতে সরবরাহ করা সম্ভব হবে। প্রকল্পটি সম্পন্ন করতে বিশ্বখ্যাত গ্যাস টারবাইন ম্যানুফ্যাকচারার ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেনারেল ইলেকট্রিককে নিযুক্ত করা হয়েছে। এর আগে, ২০১৯ সালের ২৪ জুলাই বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) ও অন্যান্য সরকারি সংস্থার সঙ্গে ২২ বছর মেয়াদি এই কেন্দ্রের বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি সই হয়। এটি এমন একটি প্রকল্প হতে যাচ্ছে, যা একাধারে প্রযুক্তি ও আধুনিকায়নের দিক থেকে সর্বাধুনিক, অন্যদিকে পরিবেশবান্ধব ও ব্যয়সাশ্রয়ী।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৪ ঘণ্টা, মার্চ ৫, ২০২২
কেএআর