ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

কর্ণফুলীর গহিনে আলোর ঝিলিক

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ৯, ২০২২
কর্ণফুলীর গহিনে আলোর ঝিলিক

ঢাকা: কর্ণফুলী নদীর গহিনে পৌঁছে গেছে আলোর রশ্মি। নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল ধরে এপারের আলো গিয়ে মিলেছে ওপারের আলোর সঙ্গে।

মাঝখানে চলছে এই বড় প্রকল্পের কর্মযজ্ঞ।

শুধু নদীর তলদেশে নয়, দুই পারেও লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া।

টানেল ঘিরে নির্মিত সড়কে বিটুমিনের প্রলেপ পড়েছে। চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই টানেল পথ দেখাবে নতুন বিনিয়োগ আর অর্থনৈতিক উন্নয়নে। খুলবে পর্যটনশিল্পের নতুন দুয়ার। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, এই টানেলকে কেন্দ্র করে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পার থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, গভীর সমুদ্রবন্দর, বিদ্যুেকন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। পর্যটননগরী কক্সবাজারের সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ আরো গতিশীল করবে টানেলটি। চট্টগ্রামের সিটি আউটার রিং রোড হয়ে বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষে সরাসরি টানেলে প্রবেশ করা যাবে। এতে চট্টগ্রাম শহরে যানজট কমবে।

প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, টানেলের ভেতরে তৈরি করা হচ্ছে পিচঢালা সড়ক। সংযোগ সড়কে এরই মধ্যে চারটি প্রলেপ দেওয়া শেষ। নিচের দুই লেয়ারে ব্যবহার করা হয়েছে ৬০-৭০ গ্রেড এবং ওপরের দুই লেয়ারে মডিফায়েড বিটুমিন। এই মেগাপ্রকল্পে ব্যবহার করা হচ্ছে বসুন্ধরা বিটুমিন। টানেলের ঠিক পাশের সড়কেই বিটুমিনের মিক্স প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের দৈর্ঘ্য ৯.৩৯ কিলোমিটার। তবে দুটি টিউবের প্রতিটির দৈর্ঘ্য ২.৪৫ কিলোমিটার এবং ব্যাস ১০.৪০ মিটার। এর নির্মাণ ব্যয় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। এটি নির্মিত হলে চীনের সাংহাই শহরের মতো চট্টগ্রামের সঙ্গে যুক্ত হবে পাশের উপজেলা আনোয়ারা। কাজের অগ্রগতি প্রসঙ্গে প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এরই মধ্যে দুটি টিউবের রিং প্রতিস্থাপনসহ বোরিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে টিউবের প্রয়োজনীয় অভ্যন্তরীণ নির্মাণকাজ চলছে। লেন স্ল্যাব ঢালাইয়ের কাজও প্রায় শেষ। টানেলের দুটি টিউবে প্রতিস্থাপিত হয়েছে ১৯ হাজার ৬১৬টি সেগমেন্ট কাস্টিং, যেগুলো বানানো হয় চীনের জিয়াংসু প্রদেশের জেংজিয়াং শহরে।

প্রকল্পের সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পের ৮১.৫০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আনোয়ারা প্রান্তে ৭২৭ মিটার ভায়াডাক্টের ডেক স্ল্যাব ও পেভমেন্ট নির্মাণকাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়ে গেছে। টাগ বোটের নির্মাণকাজও শেষ। টানেলের পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে মোট ৫.৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়কের নির্মাণকাজ চলছে। এই সড়কে বিটুমিনের প্রলেপ দেওয়া হচ্ছে।

প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ চৌধুরী জানান, প্রায় এক বছর ধরে সড়ক তৈরির কাজ চলছে। এই প্রকল্পের ইতিবাচক দিক হলো, এর মেয়াদ এবং ব্যয় কোনোটাই বাড়ানোর দরকার হয়নি। এমনকি নির্ধারিত সময়ের আগেই টানেলটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া সম্ভব হবে। কাজের গতি বাড়াতে বৃদ্ধি করা হয়েছে জনবল এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। করোনা মহামারির মধ্যেও সমানতালে চলেছে টানেলের কর্মযজ্ঞ। প্রকল্প পরিচালক বলেন, টানেল প্রকল্প অগ্রগতি ৮১.৫০ শতাংশের বেশি হয়েছে। করোনার কারণে প্রায় দুই বছর ধরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করতে হয়েছে। এতে সময় প্রয়োজনের তুলনায় বেশি লেগেছে। তার পরও প্রত্যাশিতভাবে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে এবং নির্ধারিত সময় আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করা যাবে।

প্রায় দেড় দশক আগে চট্টগ্রামে এক জনসভায় কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের অঙ্গীকার করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালের ৬ নভেম্বর এই প্রকল্প বাস্তবায়নের চুক্তি সই হয় এবং ওই বছরের ৫ ডিসেম্বর থেকে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩২ ঘণ্টা, মার্চ ০৯, ২০২২
নিউজ ডেস্ক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।