ঢাকা: শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দরে ট্রাক বোঝাই সেবা ব্যাহত হওয়ার ফলে সৃষ্ট সঙ্কটের প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের জাহাজ শিল্পে। জাহাজগুলোর যাতায়াতে সময় বেশি লাগছে দুই থেকে তিনদিন।
বাংলাদেশের ব্যবসায়ী ও নৌ পরিবহনখাতের অপারেটররা জানান, এটি এখন আমাদের জন্য নিত্যদিনের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাধারণ ভাবে চট্টগ্রাম-কলম্বো-চট্টগ্রাম রুটে সমুদ্র যাত্রায় আগে ৮দিন সময় লাগলেও এখন তা বেড়ে ১০ থেকে ১১ দিন হয়েছে।
এটি বাংলাদেশের শিপমন্টের জন্য সবচেয়ে ব্যস্ততম রুটগুলোর মধ্যে একটি। কারণ এই নৌ রুটে চলাচলকারী জাহাজগুলো সিঙ্গাপুর বন্দরে না গিয়ে ইউরোপে পৌঁছাতে প্রায় চারদিন সময় বাঁচাতে পারতো।
শ্রীলঙ্কা এখন বিপুল পরিমাণ জ্বালানি সঙ্কটে পড়েছে। যা কন্টেইনার বহনকারী লরিগুলোর লোডিং-আনলোডিংয়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে।
কলম্বো বন্দর দক্ষিণ এশিয়ার ট্রান্সশিপমেন্টের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু। স্থানীয় একজন শীর্ষ শিপিং এক্সিকিউটিভ বলেন, কলম্বোর টার্মিনালগুলোতে ট্রাক স্বল্পতার কারণে বিশাল কনটেইনার জট তৈরি হয়েছে।
চট্টগ্রাম-কলম্বো-চট্টগ্রাম রুটের অন্যতম বড় ফিডার-সার্ভিস প্রদানকারী সি-কনসোর্টিয়ামের কান্ট্রি হেড ক্যাপ্টেন এএস চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের জাহাজগুলো এখন সেখানে কমপক্ষে তিনদিন বিলম্ব হচ্ছে। তিনদিনের ব্যবধানেও তারা মাদার ভেসেলের সঙ্গে সংযোগ করতে পারছে না। ’
দেশটির শিল্প সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে শ্রীলঙ্কার একটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কন্টেইনার পরিবহন-পরিষেবা প্রদানকারীরা কলম্বোর আন্তঃটার্মিনাল স্থানান্তর ট্রান্সশিপমেন্ট লোডের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ট্রাকের সংখ্যা যথেষ্ট পরিমাণে কমিয়ে দিয়েছে।
খবরে আরও বলা হয়েছে, ‘ট্রাক ঘাটতির কারণে এরই মধ্যে কন্টেইনারগুলো নির্ধারিত জাহাজ যুক্ত হতে পারেনি। ’
গ্লোবাল শিপিং জায়ান্ট এমএসসিতে কর্মরত একজন নির্বাহী বলেন, আমরা আটকা পড়েছি এবং শিপমেন্টের জায়গা পাচ্ছি না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা কলম্বো বন্দরে দেরিতে শিপমেন্ট এবং আটকাপড়াসহ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। ’
মহামারি করোনার কারণে পঙ্গু হয়েছে গেছে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি। আর্থিক সঙ্কটে চাপের মধ্যে রয়েছে দেশটি। দ্বীপ রাষ্ট্রটির বৈদেশিক মূদ্রা অর্জনের অন্যতম একটি খাত ছিল পর্যটন। পর্যাপ্ত ডলার না থাকায় জ্বালানি, ওষুধ ও খাদ্যশস্য আমদানি করতে পারছে না দেশটি।
লাইনে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর অপেক্ষা করলেও মিলছে না জ্বালানি তেল। লাইনে অপেক্ষা করে মারাও যাচ্ছে মানুষ। তেলের অভাবে গণপরিবহন বন্ধ। তেল না পেয়ে প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছে মানুষ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পেট্রোল পাম্পগুলোতে সেনাবাহিনীও মোতায়েন করেছে শ্রীলঙ্কার সরকার।
যাই হোক, শিপিং নির্বাহীরা এখন সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে ভারত বা ওমানের মধ্য দিয়ে বিকল্প পথ বেছে নিচ্ছেন। বাংলাদেশে আসা-যাওয়ার প্রায় ৪০ শতাংশ কন্টেইনার কলম্বো বন্দর হয়ে আসে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০২২
এসই/এমএমজেড