খুলনা: আনন্দ, আড্ডা, আলোচনা, স্মৃতিচারণ, সাংস্কৃতিক নানা আয়োজনে উৎসবমুখর পরিবেশে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের (কুআ) তৃতীয় পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। পুনর্মিলনীকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাস সেজেছে বর্ণিল সাজে, আলোকমালায় উদ্ভাসিত গোটা ক্যাম্পাস।
পুনর্মিলনীর মূল কর্মসূচি শুরু হয় শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন কর্তৃক বেলুন ও ফেস্টুন উড়ানোর মাধ্যমে। পরে তার নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাদী চত্বর থেকে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে অদম্য বাংলা চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় উপ-উপাচার্য, ট্রেজারার, ডিন, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত), ডিসিপ্লিন প্রধান, শিক্ষক, অ্যালামনাই সদস্যরা অংশ নেন।
পরে বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের (কুআ) তৃতীয় পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটরা আলোকিত হয়ে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে। তাদের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত লব্ধজ্ঞান দ্বারা দেশ, জাতি ও সমাজকে আলোকিত করা। অন্যকে আলোকিত করার মাধ্যমেই তাদের শিক্ষার সত্যিকার প্রতিফলন ঘটে। গ্র্যাজুয়েটরা হচ্ছে দেশ ও জাতির সম্পদ। তাদের কর্মসাফল্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ও ভাবমূর্তি বৃদ্ধি করে।
উপাচার্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সমৃদ্ধিতে গ্র্যাজুয়েটরা নানাভাবে অবদান রাখতে পারে। তাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, মানুষ মাঝে মধ্যেই অতীতে হারিয়ে যায়। অতীত স্মৃতি তাকে আনন্দ বা বেদনা দেয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতিটা একটু ভিন্নতর। তারুণ্যদীপ্ত জীবনের সেই অতীত স্মৃতি চিরকাল অমলিন হয়ে থাকে। মনে হয় ফিরে যাই অতীতে। কিন্তু বাস্তবতা সত্য, তা চলমান। জীবনের এ ব্যস্ততার মধ্যেও মাঝে মাঝে ক্যাম্পাসে ফেরা, পুরনো বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হওয়া, আড্ডা-স্মৃতিচারণ, যোগাযোগ অপার আনন্দের। পুনর্মিলনী সেই সুযোগ করে দেয়। তিনি এমন একটি পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
এ সময় উপাচার্য পুনর্মিলনী উপলক্ষে প্রকাশিত স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য প্রফেসর ড. গোলাম রহমান।
তিনি বলেন, যে অভীষ্ট নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সূচনা করেছিলাম আজ তিন যুগ পর মনে হয়েছে সেই স্বপ্নের পথে এ বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে যাচ্ছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অব্যাহত সুনাম ও সমৃদ্ধি আমাকে আনন্দ দেয়। আমি বারবার প্রাণের টানে ফিরে আসি স্নেহের গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আবেগের জায়গা।
গোলাম রহমান বলেন, গ্র্যাজুয়েটদের, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের খোঁজ-খবর নেওয়া ও কল্যাণে কাজ করা অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের বড় দায়িত্ব। কুআ সে কাজটা যথাযথভাবে করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, মানুষ তার অন্তর দিয়ে কোনো কাজ করলে, কোনো কিছুকে ভালোবাসলে অনেক অবদান রাখতে পারে। এ সময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রারম্ভিক সময়ের নানা স্মৃতি তুলে ধরে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ঈর্ষণীয় অগ্রযাত্রার জন্য বর্তমান উপাচার্যকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য দেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোসাম্মাৎ হোসনে আরা, ট্রেজারার অমিত রায় চৌধুরী ও রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস। এতে সভাপতির বক্তব্য দেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. মনিরুল হাসান তুহিন। স্বাগত বক্তব্য দেন অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ ফজলে রেজা সুমন। এ সময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. সাইফুদ্দিন শাহ-এর শুভেচ্ছা বাণী পড়ে শোনান।
এবারের পুনর্মিলনীতে সপরিবারে তিন সহস্রাধিক অ্যালামনাই যোগ দিয়েছেন।
দিনব্যাপী অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান, পরিবারের সদস্যদের জন্য বিভিন্ন ইভেন্টে খেলাধুলা, সন্ধ্যা থেকে বিভিন্ন ব্যান্ডের অংশগ্রহণে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
২০০৯ সালে গঠিত খুলনা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের প্রথম পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হয় ২০১০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি। পরে ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর দ্বিতীয় পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হয়। যার ধারাবাহিকতায় এবার তৃতীয় পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০২২
এমআরএম/আরবি