ইবি: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে এক নবীন ছাত্রীকে ছাত্রলীগ নেত্রী ও তার সহযোগীর দ্বারা নির্যাতনের ঘটনায় তদন্ত কার্যের জন্য উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে প্রশাসন।
শনিবার (১৮ ফ্রেুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য প্রকাশনা ও জনসংযোগ দপ্তরের উপ রেজিস্ট্রার রাশিদুজ্জামান খান টুটুলের এক বার্তায় এ তথ্য জানা যায়।
বার্তাতে তিনি জানান, ‘দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে দুজন শিক্ষার্থী মোছা. ফুলপরী খাতুন (নির্যাতিত ছাত্রী) ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগ, শিক্ষাবর্ষ ২০২১-২০২২ এবং সানজিদা চৌধুরী অন্তরা পরিসংখ্যান বিভাগ, শিক্ষাবর্ষ ২০১৭-২০১৮ এর নিকট থেকে প্রাপ্ত দুটি অভিযোগ পত্র বিবেচনায় নিয়ে এবং ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি দেশরত্ব শেখ হাসিনা হলে আনুমানিক রাত ১১টা থেকে রাত ৩.৩০ মিনিট পর্যন্ত উদ্ভূত পরিস্থিতি বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে একটি গণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।
উক্ত বিষয়ে কারোর কাছে কোনো তথ্য প্রমাণাদি থাকলে তা লিখিত আকারে/সশরীরে আইন বিভাগের সভাপতি ও সংশ্লিষ্ট তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. রেবা মণ্ডলের অফিসে আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি সকাল ১১টার মধ্যে জমা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো। তথ্য প্রদানকারীর পরিচয় গোপন রাখা হবে।
এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের করা তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. রেবা মণ্ডল বলেন, আমরা তদন্ত কমিটি মিটিং শুরু করেছি সকাল ৯টায়। তদন্তের সাপেক্ষে বিভিন্ন জায়গায় চিঠি দিয়েছি। প্রশাসন থেকে তদন্তের স্বার্থে উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।
আমরা সরেজমিনে তদন্ত করতে হলে এসেছি। ঘটনাস্থলসহ চার জায়গায় সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। ভুক্তভোগীর বক্তব্য ঘণ্টাব্যাপী শুনেছি। এছাড়া গণরুমের মেয়েদের বক্তব্য শুনেছি। আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্তদের ডেকেছি। প্রক্টরিয়াল বডিকে ভুক্তভোগীর নিরাপত্তা প্রদানে সর্বোচ্চ নির্দেশনা দিয়েছি। সবমিলিয়ে তদন্তের কাজে অনেকদূর এগিয়েছি।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও হল প্রশাসনে করা তদন্ত কমিটির ডাকে দুপুর সাড়ে ১২টায় ক্যাম্পাসে আসেন ফুলপরী। তদন্তের কাজ শেষে বিকেল সাড়ে ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়িতে করে তাকে ক্যাম্পাস থেকে বাড়ির উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়।
ভুক্তভোগী ফুলপরি বলনে, 'আমি এখন নিরাপদ আছি তদন্ত কমিটি আমার কাছে সবকিছু শুনেছে। আজকে আমি বাসায় যাচ্ছি। তদন্ত কমিটি যদি প্রয়োজন মনে করে আবার আমাকে আসতে বলেন তাহলে আমি আসবো। আমি অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। '
ভুক্তভোগীর বাবা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের আশ্বস্ত করেছেন সুষ্ঠু তদন্তের পর ন্যায় বিচার করা হবে। আমরা এখন বাড়ি পৌঁছানো পর্যন্ত নিরাপদে আছি। আমি চাই দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হোক যেন এমন ঘটনা দেশে তথা সমস্ত বিশ্বে আর না ঘটে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, সারাদিন ভুক্তভোগীর সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রদানে যা যা করণীয় আমরা তাই করেছি। দুপুরে মেয়েটি তার পরিবারসহ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। সন্ধ্যার আগে বক্তব্য শেষে তিনি ও তার পরিবার নিরাপদে বাড়ি ফিরে গেছেন।
হাইকোর্টের তদন্ত কমিটির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি আইন প্রশাসন দেখবেন।
প্রসঙ্গত, গত ১১ ফেব্রুয়ারি দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে রাত সাড়ে ১১টা থেকে রাত প্রায় সাড়ে তিনটা পর্যন্ত শারীরিক নির্যাতন করা হয় নবীন ওই ছাত্রীকে। ভুক্তভোগী ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তারা ওই ছাত্রীকে মারধর করে তার বিবস্ত্র ভিডিও ধারণ করে রাখে।
১৩ ফেব্রুয়ারি সকালে ভয় পেয়ে হল ছেড়ে বাসায় চলে যান ভুক্তভোগী ছাত্রী। র্যাগিংয়ের নামে শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্তার বিচার ও নিরাপত্তা চেয়ে মঙ্গলবার প্রক্টর ও ছাত্র-উপদেষ্টা দপ্তর বরাবর লিখিত দেন তিনি।
বিষয়টি নিয়ে হল প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং শাখা ছাত্রলীগ পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে। বিষয়টি হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। হাইকোর্টের নির্দেশে ক্যাম্পাস ছাড়েন অভিযুক্তরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৩
আরএ