ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ভাষা শহীদ আবুল বরকতের স্মৃতি ধরে রাখার উদ্দেশ্যে ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় ‘ভাষা শহীদ আবুল বরকত স্মৃতি জাদুঘর ও সংগ্রহশালা’। ভাষা আন্দোলনের নানা তথ্যে সমৃদ্ধ এ প্রতিষ্ঠানটি লোকবল সংকটে প্রতিষ্ঠার দশ বছর পার করলেও দর্শনার্থীদের পর্যাপ্ত সেবা নিশ্চিত করতে হিমশিম খাচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জহরুল হক ও সলিমুল্লাহ মুসলিম হল সংলগ্ন পলাশী মোড়ের পাশে এ সংগ্রহশালা অবস্থিত। পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন ঢাবির ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান ও কলা অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. আবু মো. দেলোয়ার হোসেন। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, জরুরি ভিত্তিতে আমাদের লোক দরকার। পর্যাপ্ত বাজেট ও লোকবল না থাকায় প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে একজন অফিস সহকারী রয়েছেন। একইসঙ্গে তিনজন নিরাপত্তা প্রহরী রয়েছেন যারা তিন শিফটে দায়িত্ব পালন করেন। প্রদর্শকের দায়িত্বে যিনি ছিলেন তিনিও একবছর আগে মারা গেছেন। ফলে একজন অফিস সহকারী সংগ্রহশালার কাজ একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজেও যেতে হয়। তখন জাদুঘরে কোনো দর্শনার্থী এলে তাদেরকে পর্যাপ্ত সময় কিংবা অফিসিয়াল প্রক্রিয়াগুলো মানা সম্ভব হয় না। গ্রন্থাগারে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের ওপর প্রায় ৮শ’ বই থাকলেও নেই কোনো গ্রন্থগারিক।
বাগান মালি না থাকায় জহুরুল হক হল থেকে অস্থায়ী ভিত্তিতে মালি এনে কাজ করানো হয়। নেই সুইপারও। রাস্তার পাশে হওয়ায় দর্শনার্থী ছাড়াও পুলিশ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা ওয়াশরুম ব্যবহার করছেন নিয়মিত। অনেকে রাতের বেলায় দেওয়াল টপকে জাদুঘরের ভেতরে অবস্থান করতে চান। জায়গাটা কিছুটা নির্জন হওয়ায় রাতের বেলা একজন সিকিউরিটি গার্ড দায়িত্ব পালন করতে সমস্যার সম্মুখীন হন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট পদের জন্য আবেদন করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নিচতলায় জাদুঘরে ভাষা শহীদ আবুল বরকতের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সার্টিফিকেট, নম্বরপত্র, ব্যবহৃত কাপ-পিরিচ ও পদক সংরক্ষিত আছে। এছাড়া ভাষা আন্দোলনের পূর্বাপর বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের ছবিও সন্নিবেশিত করা হয়েছে। তৎকালীন বিভিন্ন দৈনিকের ভাষা আন্দোলন সম্পর্কিত প্রতিবেদনগুলো সাজিয়ে রাখা হয়েছে। দ্বিতীয় তলায় গ্রন্থাগারে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত বই রাখা হয়েছে। দর্শনার্থী কিংবা গবেষকরা তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন।
দর্শনার্থী কেমন আসে জানতে চাইলে অফিস সহকারী এনামুল হক জানান, এটি একেক সময় একক রকম থাকে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে টিম সহকারে বেশি আসে। তবে ব্যক্তিগত প্রয়োজনে তথ্য সংগ্রহেও অনেকে আসেন। যারা আসে তাদেরকে আমরা সাধ্যমতো সহযোগিতা করার চেষ্টা করি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের ইতিহাস জানতে হবে। দ্বিতীয় বর্ষে থাকাকালীন আমাদের ভাষা আন্দোলনের ওপর যখন ক্লাসে লেকচার শুনেছিলাম তখন স্যারের কাছে শুনে সেখানে গিয়েছিলাম। তখন অনেক কিছু জানতে পেরেছিলাম। মূল্যবান ডকুমেন্টগুলো সরাসরি দেখায় এখনো মানসপটে গেঁথে আছে। আমি মনে করি, কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে আরও গুরুত্ব দেওয়া দরকার।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। একটি সংগ্রহশালা বা জাদুঘর করতে যা লাগে তা একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করা হয়নি। এটি স্থানীয় সরকার থেকে করা হয়েছিল। সব বিবেচনায় নিয়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী জায়গা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘর করার চিন্তা করছি, যেখানে বড় একটা অংশজুড়ে থাকবে বর্তমান বরকত সংগ্রহশালা।
বাংলাদেশ সময়: ১২১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২৩
এসকেবি/এসআইএস