ইবি (কুষ্টিয়া): ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে ছাত্রলীগ নেত্রী ও তার সহযোগীদের দ্বারা র্যাগিংয়ের নামে প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফুলপরী খাতুনকে নির্যাতনে অভিযুক্ত পাঁচ ছাত্রীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
পাশপাশি কেন স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না সে বিষয়ে তাদের ৭ কার্য দিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছিল।
বুধবার (১৫ মার্চ) শেষ হয় সেই সময়। এরমধ্যে তাবাসসুম ইসলাম ও মোয়াবিয়া জাহান নোটিশের জবাব দেন। অপরদিকে ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরাসহ তিন অভিযুক্ত এখনো কারণ দর্শানো নোটিশের জবাব দেননি। নোটিশের জবাব দিতে আরও সময় চেয়েছেন তারা। সেজন্য প্রশাসন বরাবর আবেদন করেছেন।
বুধবার (১৫ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দফতর ও একাডেমিক শাখা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, তাবাসসুম ও মোয়াবিয়া নির্দিষ্ট সময়ে শোকজের জবাব দিলেও অন্তরা, উর্মি ও মীম শোকজের জবাব জমা দেননি। তারা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে সময় বৃদ্ধির আবেদন জানিয়েছেন। অন্তরা ও মীম সোমবার এবং উর্মী বুধবার সময় বৃদ্ধির আবেদন করেছেন। একই সঙ্গে তারা আবেদনে কর্তৃপক্ষের কাছে তদন্ত প্রতিবেদনের কপি ও হাইকোর্টের নির্দেশনার কপি চেয়েছেন।
এদিকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ চেয়ে গত ৬ মার্চ উপাচার্য বরাবর আবেদন করেছেন তাবাসসুম ও মুয়াবিয়া। তারা উভয়ই ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। আগামী ১৮ মার্চ তাদের প্রথম বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টার পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে বলে বিভাগীয় সূত্রে জানা গেছে।
অপরদিকে গত রোববার (১২ মার্চ) তাবাসসুম ইসলাম বিভাগীয় সভাপতি ড. বখতিয়ার হোসেন বরাবর উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন। তার পক্ষে ঝিনাইদহ জজকোর্টের আইনজীবী মোজাম্মেল হোসেন এই নোটিশ পাঠিয়েছেন। এতে তার মক্কেলকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ না দিলে আইনি ব্যবস্থা নেবেন বলে উল্লেখ করা হয়। এর প্রেক্ষিতে বিভাগীয় সভাপতি নোটিশটি সংযুক্ত করে রেজিস্ট্রার বরাবর চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে তিনি পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত দেওয়ার অনুরোধ জানান।
ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সভাপতি ড. বখতিয়ার হাসান বলেন, বহিষ্কারাদেশে তাদের দুইজনের (তাবাসসুম ও মুয়াবিয়া) একাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। যেহেতু তাদের একজন উকিল নোটিশ পাঠিয়েছে তাই প্রশাসনের কাছে সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত জানতে চেয়েছি। তবে আমাকে এখনো এ ব্যাপারে কিছু জানানো হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) এইচ এম আলী হাসান বলেন, সময় বাড়ানোর আবেদন ও পরীক্ষার বিষয়ে আবেদনগুলো ফাইল আকারে ভিসির কাছে পাঠানো হয়েছে। হাইকোর্টের ডেপুটি এটর্নি জেনারেল আমাদের বারবারই বলেছেন হাইকোর্টের বিষয়টি ফায়সালা না হওয়া পর্যন্ত যেন কোনো কার্যক্রম না করি। বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন প্রশাসকের মতামত নেওয়া হবে। আগামী দুইদিন ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় শনিবার ছাড়া এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
প্রসঙ্গত গত ১২ ফেব্রুয়ারি দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে রাত সাড়ে ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত র্যাগিংয়ের নামে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয় ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের নবীন শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুনকে। অভিযোগ ওঠে পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষবর্ষের শিক্ষার্থী ও ইবি শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার সহযোগীরা তার ওপর নির্যাতন চালিয়েছেন।
তার সহযোগীরা হলেন- ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তাবাসসুম ইসলাম, আইন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান মীম, চারুকলা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী হালিমা আক্তার উর্মী ও ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোয়াবিয়া জাহান।
ফুলপরীর অভিযোগ, অভিযুক্তরা তাকে নানাভাবে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করে। সেই সঙ্গে তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করে রাখেন।
এর পরদিন ১৩ ফেব্রুয়ারি সকালে ভয়ে হল ছেড়ে বাসায় চলে যান ফুলপরী। তবে, এঘটনার বিচার চেয়ে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি হল প্রভোস্ট, প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টা দপ্তর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে হল প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং শাখা ছাত্রলীগ পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এর মধ্যে বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী মো. মহসীন। গত ২০ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
রিটের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসককে তদন্ত কমিটি করার নির্দেশ দেন। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ফুলপরীকে নির্যাতনের প্রমাণ পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে ভুক্তভোগীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করারও প্রমান মেলে।
প্রতিবেদনে এ ঘটনায় প্রভোস্ট ড. শামসুল আলম, সহকারী রেজিস্ট্রার আব্দুর রাজ্জাক, কর্মকর্তা হালিমা খাতুন, একজন আয়া, ডাইনিং ম্যানেজার সোহেল রানা, হাউজ টিউটর মৌমিতা আক্তার, ইসরাত জাহানদের দায়িত্বে চরম অবহেলা এবং ফুলপরী ইস্যুতে তাদের ব্যাপক গাফিলতি ছিল বলে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া প্রক্টর শাহাদাত হোসেন আজাদের উদাসীনতার কথাও উল্লেখ করা হয়।
তদন্তে নির্যাতনের ঘটনা প্রমাণ হওয়ায় গত ১মার্চ সানজিদাসহ ৫ অভিযুক্তকে ক্যাম্পাস থেকে সাময়িক বহিষ্কার ও হল প্রভোস্টকে প্রত্যাহার করার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। সেই নির্দেশে ওইদিনই হল প্রভোস্টকে প্রত্যাহার ও গত ৪ মার্চ অভিযুক্তদের সাময়িক বহিষ্কার করে এক সপ্তাহের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ চায় প্রশাসন। এর আগে তাদের হল ও ছাত্রলীগ থেকেও বহিষ্কার করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩২ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২৩
এমএমজেড