ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা প্রাঙ্গন। যেখান থেকে বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনে প্রতিবছর বের করা হয় বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা।
বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) সরেজমিনে দেখা গেছে, চারুকলার প্রবেশ পথ দিয়ে পা বাড়াতেই চোখে পড়ছে দৃষ্টিনন্দন শিল্পকর্ম। যা বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছে অনুষদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
স্টলে থাকা ২৪তম ব্যাচের ফাইজানা বাংলানিউজকে জানালেন বিভিন্ন শিল্পকর্মের দাম। এবার তুহিন পাখি ৫০ টাকা, মুখোশ ছোট সাইজেরগুলো ৩০০ টাকা আর বড়গুলো ৮০০-২০০০ টাকা। ছোট সরা ২০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা আর বড় সরা ৮০০ টাকা ২০০০ টাকা। বরাবরই চারুকলার শিক্ষার্থীদের তৈরি করা মুখোশের চাহিদা থাকে ব্যাপক। শোভাযাত্রার সেটি বহন করে বিভিন্ন বয়সী মানুষ-সংস্কৃতিপ্রেমীরা।
জয়নুল গ্যালারির বিপরীতে থাকা স্টলে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের আঁকা বিভিন্ন ছবি বিক্রির জন্য প্রদর্শন করা হচ্ছে। কযেকজন শিক্ষককের শিল্পকর্মের দাম ৫০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ৩০তম ব্যাচের ফরহাদ বাংলানিউজকে বলেন, শিক্ষকদের ছবি সর্বনিম্ন ৫ হাজার টাকা। আর শিক্ষার্থীদের আঁকা ছবি ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকার মধ্যে।
শোভাযাত্রায় প্রতিবারিই থাকে বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতি। এবারের প্রতিকৃতি নিয়ে জানালেন সংশ্লিষ্ট শিল্পী শাহাদাত হোসেন।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, এবার নীলগাই, টেপা পুতুল, ময়ূর, বাঘ, হাতি ও ভেড়ার বাচ্চা। আমাদের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। শোভাযাত্রার আগ মুহূর্তে আমাদের সব কাজ সম্পন্ন হবে।
এছাড়া পুরো চারুকলা অনুষদ ঘিরে বিরাজ করছে সাজ সাজ রব। অনুষদের বিভিন্ন দেওয়ালে আঁকা হয়েছে পহেলা বৈশাখ নিয়ে নানা শিল্পকর্ম বা দৃশ্য। অপরদিকে নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বর্ণাঢ্য কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ১৪ এপ্রিল ঢাবিতে বাংলা নববর্ষ ১৪৩০ উদযাপনে 'বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি' প্রতিপাদ্য নিয়ে সকাল ৯টায় চারুকলা অনুষদ থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হবে। মঙ্গল শোভাযাত্রা শাহবাগ মোড় হয়ে পুনরায় চারুকলা অনুষদে গিয়ে শেষ হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বৃহস্পতিবার চারুকলা অনুষদে মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি ও নববর্ষ উদযাপনের সার্বিক আয়োজন পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে উপাচার্য বলেন, বাঙালি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ ও চিরন্তন প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। আবহমান কাল থেকে বাঙালি জাতি নিজস্ব ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, রীতি-নীতি ও বর্ণাঢ্য আয়োজনের মাধ্যমে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করে আসছে। বাংলা নববর্ষের উৎসব একটি সর্বজনীন উৎসব। এর সঙ্গে আদিবাসী জনগোষ্ঠীসহ বাংলাদেশের সব নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। পহেলা বৈশাখ সব ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি, পেশা ও বয়সের মানুষের মাঝে নতুন প্রাণের সঞ্চার ঘটায়। নববর্ষের প্রেরণায় বাঙালির মাঝে উদার মানবিক মূল্যবোধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা নতুনভাবে জাগ্রত হয়, মানুষে মানুষে গড়ে ওঠে সাম্য, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি।
উপাচার্য আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, অতীতের গ্লানি, দুঃখ, জরা মুছে অসুন্দর ও অশুভকে পেছনে ফেলে নতুন কেতন উড়িয়ে বাংলা নববর্ষ-১৪৩০ সকলের জীবনে আরও সমৃদ্ধি বয়ে আনবে। তথ্য-প্রযুক্তি ও জ্ঞান নির্ভর 'স্মার্ট বাংলাদেশ' বিনির্মাণে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিসহ সবক্ষেত্রে নতুন নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে দেশ নব উদ্যোমে এগিয়ে যাবে।
অনুষ্ঠান শেষ হবে বিকেল ৫টার মধ্যে
বিশ্ববিদ্যায়ের বিজ্ঞপ্তি অনুয়ায়ী, পহেলা বৈশাখে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের মুখোশ পরিধান এবং ব্যাগ বহন করা যাবে না। তবে চারুকলা অনুষদ কর্তৃক প্রস্তুতকৃত মুখোশ হাতে নিয়ে প্রদর্শন করা যাবে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভুভুজিলা বাঁশি বাজানো ও বিক্রি করা থেকে বিরত থাকার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। ক্যাম্পাসে নববর্ষের সব অনুষ্ঠান আগামীকাল বিকেল ৫টার মধ্যে শেষ করতে হবে। আগামীকাল অপরাহ্ন ৫টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে প্রবেশ করা যাবে। ৫টার পর কোনোভাবেই ক্যাম্পাসে প্রবেশ করা যাবে না, শুধু বের হওয়া যাবে। ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের যানবাহন চালানো যাবে না এবং মোটরসাইকেল চালানো সম্পূর্ণ নিষেধ। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বসবাসরত ব্যক্তিরা নিজস্ব গাড়ি নিয়ে যাতায়াতের জন্য শুধুমাত্র নীলক্ষেত মোড় সংলগ্ন গেইট ও পলাশী মোড় সংলগ্ন গেইট ব্যবহার করতে পারবেন। সর্বসাধারণের চলাচলে এই সাময়িক অসুবিধার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করেছে। শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের সম্মুখস্থ রাজু ভাস্কর্যের পেছনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেইট বন্ধ থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আগত ব্যক্তিরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের জন্য চারুকলা অনুষদ সম্মুখস্থ ছবির হাটের গেইট, বাংলা একাডেমির সম্মুখস্থ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেইট ও ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট সংলগ্ন গেইট ব্যবহার করতে পারবেন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে প্রস্থানের পথ হিসেবে ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট সংলগ্ন গেইট, রমনা কালী মন্দির সংলগ্ন গেইট ও বাংলা একাডেমির সম্মুখস্থ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেইট ব্যবহার করা যাবে। নববর্ষ উপলক্ষে নিরাপত্তার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা ও আর্চওয়ে স্থাপনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০২১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২৩
এসকেবি/এএটি