জাবি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) প্রথম বর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের মধ্যরাতে জঙ্গলে ডেকে র্যাগ দিয়েছেন দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা বিষয়টি হাতেনাতে ধরেছেন।
রোববার (২৮ মে) দিবাগত রাত একটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিডনি ফিল্ড সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। র্যাগ দেওয়ার সময় সেখানে হঠাৎ উপস্থিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের একাধিক সদস্য। এ সময় পালিয়ে যান দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্ররা।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে জানা যায়, রাত সাড়ে আটটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিডনি ফিল্ড সংলগ্ন এলাকায় উপস্থিত হতে বলা হয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ৫১ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের। একই বিভাগের ৫০ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা জরুরিভাবে এ নির্দেশ দেন বলে জানান ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। তবে রাত সাড়ে আটটায় উপস্থিত হতে বলা হলেও সিনিয়ররা আসেন রাত সাড়ে এগারোটায়। পরে সেখানে এসেই আগে থেকে উপস্থিত থাকা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে নানা ধরনের উদ্ভট নির্দেশ দেন তারা। ক্ষিপ্ত হয়ে জুতা ছুড়ে মারার ঘটনাও ঘটে।
ঘটনার খবর পেয়ে সেখানে উপস্থিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্য ও সাংবাদিকরা। তবে তাদের উপস্থিতির কথা জানতে পেরে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ৫০ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা দৌড়ে পালিয়ে যান। এ সময় আব্দুল্লাহ আল কাফি নামে এক শিক্ষার্থীকে পাকড়াও করেন প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে র্যাগিংয়ের সঙ্গে জড়িত অন্য শিক্ষার্থীদের কথা জানান তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৫১ ব্যাচের এক শিক্ষার্থী বাংলানিউজকে বলেন, রাত আটটায় বড় ভাইয়েরা (৫০ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা) সিডনি ফিল্ড সংলগ্ন জঙ্গলে আমাদেরকে ডাকেন। কিন্তু ভাইয়েরা আসেন রাত ১১টায়। এরপর প্রায় দেড় ঘণ্টার মতো আমাদের র্যাগ দেওয়া হয়। এ সময় আমাদেরকে মানসিকভাবে হেনস্তা করা হয়। ম্যানার শিখানোর নামে সিনিয়ররা আমাদের গালিগালাজ করেন। সিনিয়রদের সালাম না দেওয়ায় শাসান এবং আমাদের একজনের গায়ে জুতা ছুড়ে মারা হয়।
এদিকে ঘটনার পরেই র্যাগিংয়ের ঘটনায় অভিযুক্তদের শাস্তি দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ১২ শিক্ষার্থী।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত এ বি এম আব্দুল্লাহ আল কাফি বলেন, আজকে আমাদের ডিপার্টমেন্টের জুনিয়রদের ডাকা হয়েছিলো। আমরা ৫০ ব্যাচের দশ বারোজন ছিলাম। এর মধ্যে ছিল নূর ইসলাম, তানভীর ইসলাম, মো. আবদুস ছবুর, প্রিন্স কুমার রায়, আহমেদ ইজাজুল হাসান আরিফ, চিরঞ্জীত মন্ডল, মো. রাসেল হোসাইন, সিজান, খন্দকার মোয়াজ ইসলাম, মিঠুন রায়। এসময় ওদেরকে র্যাগ দেওয়া হয় তবে আমি দিইনি। আমি কিভাবে যেনো আজকে এসে পড়ছি। আমি ভুল স্বীকার করছি আর এমনটা হবে না।
জুনিয়রদের লক্ষ্য করে জুতা নিক্ষেপের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জুতা ছুড়ে মারছিলো, তবে কে মারছে আমি ঠিক জানি না।
তিনি আরও বলেন, আমাকে বহিষ্কার করা হলে আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ও ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সহকারী অধ্যাপক এস এম এ মওদুদ আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, আমরা রাতে জানতে পারি যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিডনি ফিল্ড সংলগ্ন জঙ্গলে নবীন শিক্ষার্থীদের র্যাগিং করা হচ্ছে। এমন খবরের ভিত্তিতে প্রক্টর স্যারের নির্দেশে আমরা দুইজন সহকারী প্রক্টর ঘটনাস্থলে যাই। যাওয়া মাত্রই কয়েকজন সেখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে যায়। তবে আমরা আব্দুল্লাহ আল কাফী নামে একজনকে ধরতে পারি। কারা সেখানে উপস্থিত ছিলো সে তাদের নাম জানিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নবীন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের অভিযোগও পেয়েছি। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৬ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০২৩