জাবি: গণরুম বিলুপ্ত করাসহ তিন দফা দাবিতে অবস্থানরত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম প্রত্যয়ের ওপর হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়েছেন।
মঙ্গলবার (৬ জুন) রাত ১১ টার দিকে এই হামলা হয়।
অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের একটি অ্যাম্বুলেন্সও ভাঙচুর করেছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শিডিউল অনুযায়ী রাত ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ বন্ধ ছিল। সেই সুযোগে রাত ১১টার দিকে মীর মশাররফ হোসেন হল শাখা ছাত্রলীগের শতাধিক নেতাকর্মী হল থেকে বের হয়ে আসেন। এরপর তারা অবস্থানরত শিক্ষার্থীকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে মারধর শুরু করেন। এক পর্যায়ে তার কাঁথা-বালিশে আগুন লাগিয়ে দেন।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে কল করে অ্যাম্বুলেন্স ডেকে আনা হয়। একপর্যায়ে অবস্থানরত শিক্ষার্থীকে জোরপূর্বক অ্যাম্বুলেন্সে উঠিয়ে মেডিকেল সেন্টারে পাঠিয়ে দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
এ সময় বাধা দিতে গেলে জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সৌমিক বাগচীকে মারধর করা হয়। এ ছাড়া ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক আলিফ মাহমুদ, মাশিয়াত সৃষ্টি, মনিকা নকরেক এবং শারমিন সুরকে হেনস্তা করা হয়।
মারধরের শিকার জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সৌমিক বাগচী বাংলানিউজকে বলেন, বিদ্যুৎ না থাকার সুযোগ নিয়ে পরিকল্পিতভাবে আমাদের ওপর হামলা করা হয়। এ সময় আমাদের সাথে থাকা মেয়েদের শ্লীলতাহানি এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
এর আগে, সন্ধ্যায় মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষ ও গণিত বিভাগের অধ্যাপক সাব্বির আলম হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের নিয়ে অছাত্রদের তালিকা করতে যান। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্রলীগের নেতারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।
গৌতম কুমার দাস (৪৫ ব্যাচ), নোবেল (৪৩ ব্যাচ), রাব্বি (৪৫ ব্যাচ), মুরসালিন (৪৬ ব্যাচ), মুরাদ (৪৬ ব্যাচ), সোহেল (৪৬ ব্যাচ), তানভীর (৪৬ ব্যাচ), রায়হান (৪৬ ব্যাচ), রাহাত (৪৭ ব্যাচ), তুষায় (৪৫ ব্যাচ), ফেরদৌস (৪৫ ব্যাচ), তারেক মীর (৪৬ ব্যাচ), সজীব (৪৫ ব্যাচ), নাফিস (৪৬ ব্যাচ) হামলায় জড়িত বলে জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্স-চালক মো. কামাল বাংলানিউজকে বলেন, আমি মেডিকেল সেন্টারের ডাক্তারের মাধ্যমে জানতে পারি মীর মশাররফ হোসেন হলে শিক্ষার্থী অসুস্থ। এ সময় আমি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে মীর মশাররফ হোসেন হল থেকে অসুস্থ শিক্ষার্থীকে নিয়ে আসার পথে হলের শিক্ষার্থীরা অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুর করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের কর্তব্যরত চিকিৎসক আনিছুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, মীর মশাররফ হোসেন হল থেকে আমার কাছে একটি কল আসে। জানানো হয়, মীর মশাররফ হোসেন হলের এক শিক্ষার্থী অসুস্থ। ফোন রাখার পরে আমি অ্যাম্বুলেন্স পাঠাই। পরে দুইজন শিক্ষার্থী অ্যাম্বুলেন্সে আসে। এ মধ্যে প্রত্যয় নামে একজন ছিল।
চিকিৎসককে কল করা মোবাইল ফোন নম্বরটি বাংলানিউজের হাতে এসেছে। যোগাযোগ করে জানা যায়, মোবাইল নাম্বারটি শাখা ছাত্রলীগের নেতা গৌতম কুমার দাসের। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ঘটনা শুনে আমরা এসেছি। এখানে যে শিক্ষার্থীরা হামলা করেছে, তাদের আমরা শনাক্ত করতে পারিনি। তারা ছাত্রলীগ করে কি না, এটাও জানি না। কারা হামলা করেছে, আমরা তদন্ত করে বের করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।
সামিউল ইসলাম প্রত্যয়ের ওপর হামলার ঘটনার প্রতিবাদে রাত ১২টায় বিক্ষোভ মিছিল বের করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষার্থীরা। তারা মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের বাসভবনের সামনে গিয়ে অবস্থান নেন। এসময় পাঁচ দফা দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো, মীর মশাররফ হোসেন হলে অবস্থানরত মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের সূর্য ওঠার আগে বিতাড়িত করতে হবে ও পর্যায়ক্রমে সব হল থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস ছাড়া করতে হবে, ছাত্রী নিপীড়ন ও হামলাকারীর প্রত্যেককে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করে এবং তাদের বিরুদ্ধে উপাচার্যকে বাদী হয়ে রাষ্ট্রীয় আইনে মামলা করতে হবে, প্রক্টর এবং প্রভোস্টকে অব্যাহতি দিতে হবে, গণরুম গেস্টরুম সংস্কৃতির অবসান করতে হবে, প্রথম বর্ষ থেকে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর সিটের ব্যবস্থা করতে হবে।
দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৪ ঘণ্টা, জুন ৭, ২০২৩
আরএইচ