ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি): কুষ্টিয়ার চৌড়হাস শাখা অগ্রণী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার সোহেল মাহমুদ কর্তৃক মারধরের শিকার হন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর, শিক্ষক সমিতি ও রেজিস্ট্রার বরাবর পৃথক তিনটি লিখিত অভিযোগ দেন।
গতকাল বুধবার (৭ জুন) রাতে ভুক্তভোগী মোস্তাফিজুর রহমান লিখিত অভিযোগ দেন। বৃহস্পতিবার (৮ জুন) সকাল ৯টার দিকে বিভাগের ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। এসময় কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহের উভয় পার্শে প্রায় চার কিলোমিটার রাস্তা যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা।
মোস্তাফিজুর তার লিখিত অভিযোগে বলেন, বুধবার ভোর পৌনে ছয়টার দিকে তিনি হাউজিং ডি-৪৭০ নম্বর বাসায় পাশে হাউজিং ডি ও সি-ব্লকের মাঝামাঝি রাস্তায় হাঁটছিলেন। তিনি সি ব্লকের কুষ্টিয়া কৃষি কলেজের সামনে আসা মাত্রই হাউজিং ডি- ব্লকের ১৬৭ নম্বর প্লটের বাসিন্দা ও চৌড়হাস শাখা অগ্রণী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার সোহেল মাহমুদ তার ওপর অতর্কিত হামলা চালায় ও শারীরিকভাবে আঘাত করেন।
তিনি ঘটনাস্থল থেকে কোনোরকম নিজেকে রক্ষা করে সহকর্মী অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান ও অধ্যাপক ড. আব্দুল বারীকে ফোন করেন। পরে তারা বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদকে জানান। তিনি সহকারী প্রক্টর ড. হুমায়ূন শাহেদকে পাঠালে তার সহযোগিতায় কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে ১০ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি হন মোস্তাফিজুর রহমান। সেখানে তিনি প্রাথমিক চিকিৎসা নেন ও চিকিৎসকের কাছ থেকে ব্যবস্থাপত্র নিয়ে বাসায় আসেন। তিনি এখন নিজ বাসায় চিকিৎসাধীন।
অভিযোগে তিনি আরও বলেন, হামলাকারী ব্যক্তি আমাদের পাঁচ শিক্ষকের নির্মাণাধীন বিল্ডিংয়ের প্রতিবেশী। এর আগেও ২০২২ সালের একই তারিখ বিকেলে আমি ও অধ্যাপক ড. আব্দুল বারী একই সন্ত্রাসী দ্বারা আক্রান্ত হই। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়ে ২০২২ সালের ৮ জুন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ প্রদান করি। এছাড়াও আমাকে ফোনে একাধিকবার এবং অধ্যাপক ড. মহিব্বুল ইসলাম ও তার পরিবারের সদস্যদের সরাসরি প্রাণনাশের হুমকি দেন সোহেল। বর্তমানে আমি ও আমার পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর, শিক্ষক সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের সদয় অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করছি।
এদিকে অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমানের ওপর হামলাকারী সোহেলের বিচারের দাবিতে বৃহস্পতিবার ত্রিশ মিনিট মহাসড়ক অবরোধ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. শফিকুল ইসলাম, সহকারী প্রক্টর সহকারী অধ্যাপক শরিফুল ইসলাম জুয়েলসহ প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা। সকাল ১০টায় শিক্ষার্থীরা প্রক্টরিয়াল বডির আশ্বাসে রাস্তা ছাড়েন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের প্রাণপ্রিয় শিক্ষকের ওপর হামলা করা হয়েছে। হামলাকারী চিহ্নিত। হামলার ২৪ ঘণ্টা পার হলে গেলেও এখন পর্যন্ত হামলাকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। আমরা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীকে গ্রেপ্তার ও তাকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি। হামলাকারী যেহেতু অগ্রণী ব্যাংকের কর্মকর্তা তাই তার শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত ব্যাংকের ইবি শাখা বন্ধ থাকবে। আমাদের দাবি মেনে নেওয়া না হলে পরবর্তীতে কঠোর আন্দোলনে নেমে পড়বো।
প্রক্টরের দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, গতকাল কুষ্টিয়ায় একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। সেই ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছে। তাদের দাবি যৌক্তিক। আমি তাদেরকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। নিয়মের মধ্যে থেকে আমরা বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করবো।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৩ ঘণ্টা, জুন ৮, ২০২৩
এমজে