ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে

নেই কেন্দ্রীয় ড্রেনেজ ব্যবস্থা, বৃষ্টি হলে জলে ডোবে সব

হাসান নাঈম, শাবিপ্রবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩০ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০২৩
নেই কেন্দ্রীয় ড্রেনেজ ব্যবস্থা, বৃষ্টি হলে জলে ডোবে সব

শাবিপ্রবি (সিলেট): শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) অভ্যন্তরে পানি চলাচলের জন্য কেন্দ্রীয় ড্রেনেজ সিস্টেম নেই। তাই বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা তৈরি হয় ক্যাম্পাসে।

এতে চলাচলে দুর্ভোগ ও বেকায়দায় পড়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

কেন্দ্রীয় ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা ছাড়াও নিচু জায়গা ভরাট করে অপরিকল্পিতভাবে ভবন নির্মাণকে জলাবদ্ধতার জন্য দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। এমন পরিস্থিতিতে বর্ষার ভরা মৌসুমে চরম ভোগান্তির শঙ্কায় আছেন সবাই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ছোট ছোট যে ড্রেনগুলো আছে সেগুলো অপরিষ্কার, আগাছা আর মাটি ভরাট হয়ে আছে। দীর্ঘদিন ধরে পরিষ্কার না করায় পানি চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছে। কয়েক বছর আগেও বেগম সিরাজুন্নেছা চৌধুরী হল সংলগ্ন ‘ছোট খাল’, ‘ডি বিল্ডিং’র পার্শ্ববর্তী কালভার্ট দিয়ে বৃষ্টির পানি চলাচল করত। সেটা এখন বন্ধ হয়ে গেছে। সেখানে একাডেমিক ভবন ‘ডি’র এক্সটেনশন, বেগম ফলিলাতুন্নেছা মুজিব হল তৈরি হওয়াকে জলাবদ্ধতার কারণ হিসেবে দেখছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তবে কেন্দ্রীয় ড্রেনেজ ব্যবস্থা থাকলে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না বলেও অভিমত তাদের।

গত দুদিন (বুধ-বৃহস্পতিবার) টানা বৃষ্টিপাতের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউভার্সিটি সেন্টারের সামনে, একাডেমিক ভবন বি, ডি, এ’র সামনে, চেতনা-৭১’র সামনের সড়কে হাঁটু পর্যন্ত পানি উঠেছে। এছাড়াও হ্যান্ডবল গ্রাউন্ড, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, প্রথম ছাত্রী হল রোড, শিক্ষক কোয়ার্টার রোড, শাহপরান হলের মধ্যবর্তী স্থানে গোড়ালি থেকে হাঁটু পর্যন্ত পানি উঠেছে। এতে স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ফলে অনেকে অর্ধভেজা হয়ে ক্লাস-পরীক্ষা কিংবা দাপ্তরিক কাজে অংশ নিচ্ছেন। কেউবা পায়ের স্যান্ডেল হাতে নিয়ে রাস্তা পারাপার করছেন।

ফয়সাল আহমেদ নামে এক শিক্ষার্থী বাংলানিউজকে বলেন, ক্যাম্পাসে গত কয়েক বছর আগে ভারী বৃষ্টি হলেও এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না। এখন অল্প বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে। আগামী দিনে কি পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় তা নিয়ে শঙ্কায় আছি আমরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মচারী বাংলানিউজকে বলেন, গতবছর আকস্মিক বন্যায় ক্যাম্পাসে হাঁটু থেকে কোমর অব্দি পানি হয়েছে। এ বছর তো এখনো বন্যা হয়নি, তবুও রাস্তায় হাঁটু পরিমাণ পানি হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে যে ড্রেন আছে তা অনেকদিন ধরে পরিষ্কার করা হচ্ছে না। তাই পানি বের হতে না পেরে জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে।

প্রথম ছাত্রী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. জায়েদা শারমিন বাংলানিউজকে বলেন, এখন অল্প বৃষ্টি হলেই আমাদের হলের রাস্তায়ও হাঁটু পরিমাণ পানি হয়ে যায়। কয়েক বছর আগেও এমন পরিস্থিতি ছিল বলে মনে হয় না। ক্যাম্পাসে কেন্দ্রীয় কোনো ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টির পানি চলাচল করতে পারছে না। মনে হচ্ছে অপরিকল্পিতভাবে ভবনগুলো তৈরি হওয়ায় এ সমস্যা তৈরি হয়েছে। এ সমস্যা উত্তরণে সেন্ট্রাল ড্রেনেজ ব্যবস্থার কোনো বিকল্প নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শহিদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের ক্যাম্পাসের দুইপাশে অনেক খালি জায়গা রয়েছে। তবে দুই পাশের পানি বের হওয়ার জন্য সে রকম ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। ফলে বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে। তাই ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে যে কালভার্ট ও ড্রেন আছে তা আরও বাড়ানো দরকার। অন্যথায় দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা তৈরি হতে পারে।

রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মো. ফজলুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকগুলো কাজ হচ্ছে, মাটি ভরাট হচ্ছে, যার ফলে জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে। এটা খুব বড় ইস্যু না, আমরা চাইলে তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা নিতে পারব না। তবে এখন সমস্যাগুলো অবজারভেশন করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অবহিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সার্বিক বিষয়ে শাবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, বৃষ্টির কারণে পুরো সিলেট জুড়েই সমস্যা তৈরি হয়েছে। আমাদের ক্যাম্পাসেও যে সমস্যা হচ্ছে, এ ব্যাপারে আমরা সজাগ আছি। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সমাধান করতে না পারলেও সমস্যা নিরসনে কমিটিও গঠন করে দেওয়া হয়েছে। বৃষ্টিতে যে জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে, তা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনকে জানিয়েছি। তারা আমাদের বাজেট দিলে আমরা কাজ করতে পারব; এতে জলাবদ্ধতাও নিরসন হবে। এটা নিয়ে সবাই আন্তরিকতার সাথে কাজ করছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০২৩
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।