বরগুনা: পিয়ন পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে সাড়ে ৪ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন আমতলীর উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের হালিমা খাতুন নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আনোয়ার হোসেন।
অভিযোগের প্রমাণ মেলায় সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে তাকে।
বুধবার (১২ জুলাই) এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন ওই বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ও গুলিশাখালী ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এইচ এম মনিরুল ইসলাম।
জানা গেছে, গুলিশাখালী গ্রামের আব্দুল হক জোমাদ্দারের ছেলে রিয়াজ জোমাদ্দারকে ওই বিদ্যালয়ের পিয়ন পদে চাকরি দেবেন বলে আশ্বাস দেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আনোয়ার হোসেন। এ বাবদ ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বরে রিয়াজের কাছ থেকে স্টাম্পে লিখিত চুক্তি করে ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা ঘুষ নেন। এর পর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও চাকরি না হওয়ায় সেই ঘুষের টাকা ফেরত চান রিয়াজ জোমাদ্দার।
এ নিয়ে অনেক দেনদরবার হলেও রিয়াজ তার টাকা ফেরত পায়নি। টাকা ফেরত না পেয়ে ওই বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতির কাছে ২০২৩ সালের ১৪ এপ্রিল একটি লিখিত অভিযোগ দেন রিয়াজ। সেই অভিযোগের পর সভাপতি ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন।
কমিটি তদন্ত করে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি প্রমাণ পায়। তারা অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিতে সভাপতি বরাবর লিখিত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।
প্রতিবেদন পাওয়ার পর সভাপতি গত ১০ জুলাই বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভা ডেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আনোয়ার হোসেনকে টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেনে। তিনি টাকা দিতে অস্বীকার করলে ওই সভার রেজুলেশনের মাধ্যমে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, চাকরি দেওয়ার কথা বলে রিয়াজ জোমাদ্দারের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।
এ বিষয়ে রিয়াজ জোমাদ্দার বলেন, হালিমা খাতুন নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আমাকে পিয়ন পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে দুই দফায় ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা স্টাম্পে স্বাক্ষর করে ঘুষ নেন। কিন্তু চাকরি না দিয়ে তিনি আমাকে ঘোরাতে থাকেন। ফেরত চাইলে তিনি টাকা দিতে অস্বীকার করলে আমি সভাপতির কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
রিয়াজ জোমাদ্দারের কাছ থেকে কোনো টাকা নেননি বলে দাবি করেছেন অভিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আনোয়ার হোসেন।
স্বাক্ষর দিয়ে টাকা নেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি কোনো উত্তর দিতে পারেননি।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, সভা চলাকালীন সময়ে চেয়ারম্যানের লোকজন আমাকে লাঞ্ছিত করেছে।
সাময়িক বরখাস্তের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, শুনেছি রেজুলেশনে করে আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ও গুলিশাখালী ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এইচ এম মনিরুল ইসলাম বলেন, চাকরি দেওয়ার কথা বলে রিয়াজ জোমাদ্দার থেকে সাড়ে ৪ লাখ ও পারভেজ খান নামে একজনের কাছ থেকে ২ লাখসহ একাধিক মানুষ থেকে ঘুষ নিয়েছেন শিক্ষক আনোয়ার হোসেন। কিন্তু কাউকেই তিনি চাকরি দিতে পারেননি। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির তদন্তে সত্যতা পেয়ে তাকে সভার মাধ্যমে টাকা ফেরত দিতে বলায় তিনি অস্বীকার করে। এজন্য তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। যাতে টাকা ফেরত দেওয়া না লাগে সেজন্য লাঞ্ছিত হওয়ার মিথ্যা নাটক সাজিয়েছেন তিনি।
আমতলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জিয়াউল হক মিলন বলেন, হালিমা খাতুন নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে চাকরি দেওয়ার নামে ঘুষ নেওয়ার বিষয়ে মৌখিকভাবে শুনেছি। তবে এখনো কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২০ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০২৩
এসএএইচ