ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হল ক্যান্টিন। গত কয়েকমাসের ব্যবধানে এখানে প্রায় সব পদের খাবারের দাম বেড়েছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, খাবারের দাম বাড়লেও মানে কোনো পরিবর্তন হয়নি। বিস্বাদ খাবারে প্রাণ ওষ্ঠাগত। তরকারিতে তেল-লবণ-মসলা দেওয়া হয় না ঠিকমতো। ফলে পুষ্টিসম্পন্ন খাবার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। শুধু বিজয় একাত্তর হলই নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে ক্যান্টিন সম্পর্কে একই অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের ক্যান্টিন ঘুরে দেখা যায়, স্যার এ এফ রহমান হলে কিছুদিন আগেও যে মুরগির মাংস বিক্রি হয়েছিল ৪৫ টাকায়, তা এখন ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও ৩০ টাকার ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। একই দামে ডিম বিক্রি হচ্ছে মাস্টার দা সূর্যসেন হলেও। মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে ৩৫ টাকায় বিক্রি হওয়া পাঙ্গাশ মাছ এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। ৪৫ টাকায় বিক্রি হওয়া খাসির মাথা দিয়ে মুগডাল শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের পুকুর পাড়ের ক্যান্টিনে বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়। কিছুদিন আগেও যে তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হয়েছিল ৩৫ টাকায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ক্যান্টিনে তা এখন ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও চন্দনা ইলিশ মাছ, বিগ্রেড মাছ, রুই মাছ, শিং মাছ, খাসির ভেপসাসহ প্রায় প্রত্যেকটি পদেই ৫/১০ টাকা দাম বেড়েছে।
দাম বৃদ্ধির কারণে দৈনন্দিন খাবারের খরচ প্রায় দেড়গুণ বেড়ে গেছে বলে জানান বিজয় একাত্তর হলের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের এক শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, আমি দিনে সাধারণত কম খরচ করার চেষ্টা করি। গত কয়েক মাস আগেও আমার দিনে ১১০ টাকার মতো খরচ হতো। এখন তা ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিনই খরচ বাড়ছে।
হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী ইসমাইল হোসেন বলেন, অন্যান্য হলগুলোর তুলনায় আমাদের হলে সব খাবারের দাম ৫ টাকা বেশি। আগে তেহারি বিক্রি হতো ৫০ টাকায়। এখন সেটাই ‘মুরগির কাচ্চি’ নামে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য হলে মুরগি ৪৫ টাকায় বিক্রি হলেও এখানে বিক্রি হয় ৫০ টাকায়।
একই কথা বলছেন সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের সমাজকল্যাণ গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী তপু রায়হান। তিনি বলেন, এখানে অধিকাংশ খাবারই বাধ্য হয়ে খাই। খাবারে মসলা ঠিকমতো দেওয়া হয় না। কখনো কখনো ঠিকভাবে সেদ্ধ করা হয় না।
বঙ্গবন্ধু হলের শিক্ষার্থী মো. রিদান ইসলাম বলেন, অন্যান্য হলের তুলনায় আমাদের হলের খাবার কিছুটা ভালো। তবে সামগ্রিকভাবে খাবারটি ভালো নয়। তাছাড়া আগের তুলনায় খাবারের পরিমাণ কম দিচ্ছে। এখানে খাবারের বৈচিত্র্যও খুব কম। প্রতিদিন প্রায় একই ধরনের খাবার তৈরি করা হয়। শাক-সবজিও তেমন থাকে না।
শিক্ষার্থীরা জানান, হলগুলোয় খাবার রান্নার পর ঢেকে রাখা হয় না। বরং বড় ট্রেগুলোয় বিক্রির জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়। তাছাড়া ক্যান্টিনের খাওয়ার যে পরিবেশ, তাও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। ফলে বিভিন্ন সময় খাবারের সাথে চুল, মাছি ও পোকামাকড় পাওয়া যায়। এদিকে পরিবেশন করা প্লেট ও টেবিলও অপরিষ্কার থাকার অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে একাধিক ক্যান্টিন ম্যানেজারের সাথে কথা হয় বাংলানিউজের। তারা জানান, প্রত্যেকটি দ্রব্যের বর্তমান বাজার মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় বাধ্য হয়েই তাদের দাম বেশি রাখতে হচ্ছে। এ ছাড়া ছাত্রলীগ নেতাদের কক্ষে খাবার পাঠাতে হয়। রুমগুলোয় পাঠানো এইসব খাবারের অধিকাংশের টাকা পরিশোধ করা হয় না। অনেকেই ক্যান্টিনে ‘ফাও’ খেয়ে চলে যায়। ক্যান্টিন বয়দের ধমক দিয়ে খাবার দিতে বলে। এ সবের পরে কম দামে খাবার বিক্রি করা তাদের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়ে বলে দাবি ক্যান্টিন মালিকদের।
হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের ক্যান্টিন ম্যানেজার আলমগীর হোসেন জানান, প্রতিনিয়ত বাজারে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির কারণেই খাবারের দাম বাড়াতে হয়েছে। যে মুরগি ১৬০ টাকায় কেজি কিনতাম তা এখন কিনতে হচ্ছে ২১০ টাকা দামে।
মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের নতুন ক্যান্টিনের ম্যানেজার ফরহাদ বলেন, সব হলের ক্যান্টিন থেকেই রুমে রুমে খাবার পাঠাতে হয়। রুমগুলোয় খাবার না পাঠিয়ে হলে কেউ ক্যান্টিন চালাতে পারবে না।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির আহ্বায়ক ও বিজয় একাত্তর হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক আব্দুল বাছির বাংলানিউজকে বলেন, খাবারের মান খারাপ থাকা উচিত নয়। পরিমাণ ও মানের ওপর খাবারের দাম নির্ভর করে। এখানে যারা ক্যান্টিন পরিচালনা করেন তাদের লাভেরও একটা বিষয় আছে। এসব বিষয়ে আমরা বসে আলোচনা করে সমাধান করব।
রুমে খাবার পাঠানোর বিষয়ে তিনি বলেন, এরকম তো কোনো নিয়ম নেই। শুধুমাত্র কেউ অসুস্থ হলে আমাদের স্বাস্থ্য সেবকরা খাবার পৌঁছে দেবেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০২৩
এমজে