হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জে সরকারি একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিদ্যুতের ব্যবস্থা থাকার পরও তা ব্যবহার করতে না পারায় ছয় মাস ধরে আটকে আছে নতুন ভবন নির্মাণের কাজ। ফলে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হচ্ছে ৩০ বছর আগে নির্মিত ঝুঁকিপূর্ণ একটি টিনশেড ঘরে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ওই স্কুলের বিদ্যুৎ ব্যবহারে বাধা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও তার বক্তব্য, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ ব্যবহার করলে অনেক টাকা বিল আসবে। সেজন্য তাদের নতুন মিটার বসিয়ে কাজ করতে বলা হয়েছে।
জেলার বানিয়াচং উপজেলায় ৫৫ নম্বর মথুরাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এ ঘটনায় বিপাকে পড়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি)।
জানা গেছে, ওই বিদ্যালয়ে ১৯৯৩ সালে নির্মাণ করা একমাত্র টিনশেড ঘরটি এখন প্রায় ব্যবহারের অনুপযোগী। ফলে এলজিইডির পক্ষ থেকে সেখানে সরকারি বরাদ্দে একটি নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
এলজিইডি জানায়, ১ কোটি ৪৪ লাখ ১ হাজার ৭৮১ টাকা ব্যয় ধরে গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল এবং তা শেষ হওয়ার কথা চলতি বছরের ১৫ জুনের মধ্যে। তবে নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ৫৫ নম্বর মথুরাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ভবন নিমার্ণে পাইলিং করা হয়েছে। কিন্তু এরপর আর কাজ এগোয়নি। ফলে সেখানে থাকা নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, রডসহ কাঁচামালে মরিচা ধরে গেছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স শাহীন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী এমদাদুল হক শাহীন বলেন, পাইলিংয়ের পর অধিকাংশ কাজেই বিদ্যুৎ প্রয়োজন। তবে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে না দেওয়ায় কাজ করা যাচ্ছে না। ফলে সেখানে থাকা মূল্যবান যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল পড়ে রয়েছে। ফলে যন্ত্রপাতি মরিচা পড়ে নষ্টও হচ্ছে। এছাড়া সেখানে পড়ে থাকা মালামাল চুরি হওয়ার শঙ্কাও রয়েছে।
মথুরাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে না দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. কবিরুল ইসলাম। কেননা, তারা বিদ্যুৎ ব্যবহার করলে বিদ্যালয়ের ওয়্যারিং ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মূলত সেজন্য বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে দেওয়া হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে শিক্ষা কর্মকর্তা মো. কবিরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ ব্যবহার করলে অনেক টাকা বিল আসবে। তাই তাদের বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে দেওয়া হচ্ছে না। তবে নতুন মিটার বসিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ করতে বলা হয়েছে।
এদিকে, এলজিইডির বানিয়াচং উপজেলা প্রকৌশলী মো. মিনারুল ইসলাম বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ বিল দিতে চাইলেও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এতে নারাজ। ফলে উপকারভোগীরা বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি আরও সময়ক্ষেপণ হতে থাকলে নতুন করে দরপত্র আহ্বান করতে হবে। এতে সরকারের অর্থ ব্যয় হবে, কাজও অনিশ্চয়তায় পড়ে যাবে।
এ বিষয়ে বানিয়াচং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবুল কাশেম চৌধুরী বলেন, সরকারের উন্নয়ন কাজে শিক্ষা কর্মকর্তা মো. কবিরুল ইসলামের বাধা অত্যন্ত দুঃখজনক। ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আমরা আরও অনেক বিষয়ে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ পেয়েছি।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০২৩
এসআরএস