ইবি: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক নবীন শিক্ষার্থীকে র্যাগিংয়ের নামে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনার বিচার চেয়ে বিবৃতি দিয়েছে শাখা ছাত্রলীগ।
বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলের দিকে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত ও সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয় স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা যায়।
এদিকে ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর হল থেকে লাপাত্তা হয়েছেন অভিযুক্তরা। অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন হল প্রশাসন।
র্যাগিংয়ের ঘটনায় বিচার চেয়ে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ্য করা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সব মৌলিক ও যোগাযোগ লেখাপড়া সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য কাজ করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। কোনো শিক্ষার্থী তার সিনিয়র দ্বারা মানসিক বা শারীরিক হেনস্থার স্বীকার হোক বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা তা প্রত্যাশা করে না। উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে হল প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দুটি পৃথক তদন্ত কমিটির গঠন করেছেন।
অপরাধের কোনো গুষ্টি নেই, অপরাধের কোনো সাংগঠনিক পরিচয় নেই, অপরাধে সবচেয়ে বড় পরিচয় সে একজন অপরাধী বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কখনো কোনো অপরাধকে প্রশ্রয় দেয় না। আমরা চাই সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে উক্ত ঘটনার অপরাধের বিচারের আওতায় আনা হোক সেই সঙ্গে আবাসিক হওয়ার সময় ও দায়িত্বরত আবাসিক শিক্ষকদের হলে অবস্থান নিশ্চিত করতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট অনুরোধ জানাচ্ছি।
এদিকে একটি সূত্র জানিয়েছে, ঘটনা গোপন রাখতে হুমকির পাশাপাশি ভুক্তভোগীকে হাতে রাখতে বিশেষ সুবিধায় গণরুম অন্য কক্ষে সিঙ্গেল সিটে থাকার ব্যবস্থা করেছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। তাকে গণরুম থেকে হলের ৩০২ নম্বর কক্ষে সিঙ্গেল সিটে রাখার ব্যবস্থা করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ঘটনার পর ভুক্তভোগী অভিযুক্তদের সঙ্গে থাকতে অস্বীকৃতি জানানোর ফলে এ ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শাখা ছাত্রলীগ নেতারা। এর পর ঘটনার বিষয়ে নিজের কোনো দাবি নেই বলে হল প্রশাসনের কাছে লিখিত দিয়েছে ভুক্তভোগী।
সূত্র আরও জানায়, গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে লালন শাহ হলের ১৩৬ নম্বর কক্ষে ভুক্তভোগীকে বিবস্ত্র করে র্যাগিংয়ের নামে নির্যাতন করার পরদিন পর্যন্ত কয়েক দফায় সমঝোতা মিটিং করেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এরপর থেকে আর হলে দেখা যাচ্ছে না অভিযুক্ত মুদাচ্ছির খান কাফী, মোহাম্মদ সাগর ও তাদের সঙ্গে থাকা উজ্জ্বল ও ইউসুফ সানিকে।
এছাড়া হল প্রশাসন তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন বলে জানা গেছে। ঘটনার অভিযুক্ত ও ভুক্তভোগীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন লালন শাহ হলের প্রভোস্ট ড. আকতার হোসেন।
তিনি বলেন, ঘটনা জানার পর আমি দুপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ওই কক্ষে লোক পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু কাউকে পাওয়া যায়নি। ওরা একটু টেকনিক্যালি চলছে। তবে আমি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি। তারা বিষয়টি তদন্ত করে দেখবে।
হল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ড. আলতাফ হোসেন বলেন, অভিযুক্তদের সঙ্গে কথা বলতে পারিনি, ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা হয়েছে। তবে ভুক্তভোগী বলেছে, আমি কিছু বলতে চাচ্ছি না, আমি মানসিকভাবে খুব বিপর্যস্ত। আর আমি ঝামেলায় জড়াতে চাচ্ছি না। আমরা অন্যান্য সবার কাছে তথ্য চেয়েছি।
এদিকে ঘটনার পর শেখ রাসেল হলের প্রভোস্ট ড. দেবাশীষ শর্মাকে আহ্বায়ক করে আরও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে প্রশাসনের করা তদন্ত কমিটি এখনও কাজ শুরু করেনি বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. দেবশীষ বলেন, আমি এ বিষয়ে এখনো কোনো লিখিত ডকুমেন্ট পাইনি। নির্দেশনা পেলে শনিবার কাজ শুরু করবো।
প্রসঙ্গত, গত ৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ হলের গণরুমে এক শিক্ষার্থীকে রাতভর র্যাগিং, নগ্ন করে রড দিয়ে মারধর, পর্নগ্রাফি দেখানো ও টেবিলের ওপর কাকতাড়ুয়া বানিয়ে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিষয়টি ঘরোয়াভাবে সমাধান করায় এবং ‘বিশেষ চাপে’ প্রশাসনের কাছে কোনো অভিযোগ করেননি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। শুধু সেই দিনই নয়। একই কক্ষে প্রায়ই র্যাগিং হয় বলে হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন।
অভিযুক্তরা সবাই শাখা ছাত্রলীগ কর্মী ও শাখা সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়ের অনুসারী। এছাড়া কাফি ফেনীর পরশুরাম উপজেলা শাখা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক। অভিযুক্ত কাফী ও সাগরের বিরুদ্ধে হলের কক্ষে বিভিন্ন সময়ে নেশাগ্রস্ত হয়ে উচ্ছৃঙ্খল আচরণের অভিযোগ করেছে হলের অন্য শিক্ষার্থীরা।
বাংলাদেশ সময়: ২৩১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৪
এসএম