ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

শিক্ষা

জাবি খুলছে, আবারও আন্দোলনের আশঙ্কা

ওয়ালিউল্লাহ, জাবি প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫১ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০১২
জাবি খুলছে, আবারও আন্দোলনের আশঙ্কা

জাবি: ঈদ ও ছাত্র-পুলিশ সংঘর্ষের কারণে দীর্ঘ ২৩ দিন বন্ধ থাকার পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের(জাবি) আবাসিক হলগুলো খুলে দেওয়া হচ্ছে শনিবার। রোববার থেকে ক্লাস শুরু হবে।



এদিকে শিক্ষার্থীদের হলে প্রবেশের ওপর আরোপিত নিয়মের বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে আন্দোলন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

২৪ আগস্ট শুক্রবার উপাচার্য অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট কক্ষে অনুষ্ঠিত হল প্রশাসন, প্রক্টরিয়াল টিম ও পদস্থ কর্মকর্তাদের এক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শনিবার বিকেল চারটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলসমূহ খুলে দেওয়া হবে। রোববার থেকে ক্লাস শুরু হবে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল প্রকার প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতর থেকে জানানো হয়।

প্রসঙ্গত, গত ১ আগষ্ট ছাত্র-পুলিশ সংঘর্ষে ঘটনায় পরদিন বিকেল থেকে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দিয়ে ঈদের ছুটি এক সপ্তাহ এগিয়ে এনে ২ আগস্ট ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এদিকে গত ১৪ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রভোস্ট এবং প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখার লক্ষ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শনিবার বিকাল ৪টায় আবাসিক হলগুলো খুলে দেওয়ার পর ছাত্র-ছাত্রীদের সংশ্লিষ্ট হলের আইডি কার্ড দেখিয়ে প্রবেশ করতে হবে। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীরা হলে প্রবেশ করতে পারবে। এ সময়ে পর্যায়ক্রমে হল প্রশাসনের নির্ধারিত রোস্টার অনুযায়ী আবাসিক শিক্ষকরা হল গেটে উপস্থিত থাকবেন। উক্ত সময় ব্যতীত ছাত্র-ছাত্রীরা হলে প্রবেশ করতে পারবেন না।

বটতলা ও অন্যান্য জায়গায় অবস্থিত খাবার দোকানগুলো রাত ১১টার মধ্যে বন্ধ করতে হবে। এসব দোকানের খাবার স্বাস্থ্যসম্মত ও মানসম্মতভাবে পরিবেশন করতে হবে। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনাক্রমে খাবারের দাম নির্ধারণ করা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানের জন্য কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন করা যাবে। কোনো অবস্থাতেই হল কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া পুলিশ হলে প্রবেশ করতে পারবে না। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরামর্শক্রমে পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়সহ ক্যাম্পাসের আশে-পাশের এলাকায় প্রয়োজন অনুযায়ী অভিযান পরিচালনা করতে পারবে।

এদিকে প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনগুলো। শিক্ষার্থীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্তগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্বশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
একই সঙ্গে ক্যাম্পাস খোলার সঙ্গে সঙ্গে এই নিয়মের বিরুদ্ধে আন্দোলনেরও হুমকি দেন তারা।

সংগঠনের নেতাকর্মীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হল মুক্ত চিন্তার জায়গা। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জারি করা নতুন নিয়ম এই মুক্ত চিন্তাকে বাধাগ্রস্ত করবে।
তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কোনো প্রাইমারী স্কুল নয় যে শিক্ষার্থীদের ধরা বাধা নিয়মের মধ্যে চলতে হবে। আবার এটাও আশা করা ঠিক নয় যে একজন শিক্ষার্থী প্রতিদিন পড়ালেখা করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের যেমন পড়ালেখা থাকবে তেমন আড্ডা, গান, বাজনা ইত্যাদিও থাকবে।

তারা আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে না পেরে শিক্ষার্থীদের ওপর নিয়ম আরোপ করছে। যেটা অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবির উপাচার্য থাকাকালীন সময়ে করত।

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাবি শাখার সভাপতি সৌমিত চন্দ জয়দ্বীপ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা শিক্ষার্থীদের স্বার্থ বিরোধী সিদ্ধান্ত। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে কাজ করছে। এর আগেও শিক্ষার্থীদের স্বার্থ বিরোধী অনেক আইন হয়েছিল। কিন্তু শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে প্রশাসন সে আইন স্থগিত করতে বাধ্য হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সুচনালগ্ন থেকেই শিক্ষার্থীরা যে কোনো স্বার্থ বিরোধী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে এবারো নিবে।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট জাবি শাখার আহবায়ক মৈত্রী বর্মন বলেন, যেহেতু নিয়মগুলো ছাত্র সংক্রান্ত সেহেতু ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে কথা বলে নিয়মগুলো প্রণয়ন করলে ভাল হতো। যেহেতু আমাদের সঙ্গে কথা না বলে নিয়ম প্রণয়ন করা হয়েছে সেহেতু আমরা এটি সঠিক মনে করছি না।

‘জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট’র সভাপতি কলি মাহমুদ বলেন, শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যে নিয়ম আরোপ করেছে তাতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষত্ব ক্ষুণ্ণ হবে।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বটতলা এলাকার খাবারের দোকানগুলোর খাবার স্বাস্থ্যসম্মত ও মানসম্মতভাবে পরিবেশন ও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনাক্রমে খাবারের দাম নির্ধারণ করা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেটি ভালো চোখেই দেখছেন তারা।

এছাড়া ফেসবুক, ব্লগসহ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে এই নিয়মের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ২৪ মার্চ ‘প্রক্টরিয়াল ল’ নামে একটি আইন জারি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ঐ আইনে ছাত্রদের জন্য রাত ৮টার মধ্যে হলে প্রবেশ ও ছাত্রীদের জন্য কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি বন্ধ হওয়ার ২ ঘন্টার মধ্যে হলে প্রবেশ করার একটি নিয়ম দেওয়া আরোপ করা হয়। সে সময় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আইনটি স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছিল।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০১২
সম্পাদনা: বেনু সূত্রধর,নিউজরুম এডিটর; নূরনবী সিদ্দিক সুইন, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।