ঢাকা, সোমবার, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

যৌন নিপীড়নের অভিযোগ: রামু সরকারি কলেজের শিক্ষকের অপসারণ দাবি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১২ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০২৪
যৌন নিপীড়নের অভিযোগ: রামু সরকারি কলেজের শিক্ষকের অপসারণ দাবি

কক্সবাজার: কক্সবাজারের রামু সরকারি কলেজের এক ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে বাংলা বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ হোছাইনের অপসারণ ও শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

রোববার (১০ মার্চ) সকালে কলেজ প্রাঙ্গণে এ কর্মসূচিতে ছাত্রীদের জন্য নিরাপদ শিক্ষার পরিবেশ গড়ে তোলার দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।

এ সময় তারা ‘যৌন নির্যাতনকারী হোছাইনের শাস্তি চাই’, ‘অধ্যক্ষের মদদপুষ্ট শিক্ষক হোছাইনের অপসারণ চাই’, ‘যৌন নির্যাতনমুক্ত নিরাপদ শিক্ষাঙ্গন চাই’, ‘দুর্নীতিমুক্ত শিক্ষাঙ্গন চাই’, ‘কলেজের দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষ ও তার মদদপুষ্ট হোছাইনের শাস্তি চাই’সহ বিভিন্ন দাবি সম্বলিত পোস্টার ও প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।

মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা কলেজে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া নানা অনিয়ম-দুর্নীতির নিরপেক্ষ তদন্ত করে অধ্যক্ষসহ জড়িতদের শাস্তির দাবিও তোলেন।

গত বৃহস্পতিবার ৭ই মার্চের অনুষ্ঠান ফেলে রামু সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক মোহাম্মদ হোছাইন দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রীর সঙ্গে অনৈতিক কাজ করার চেষ্টা করলে ওই ছাত্রী তার সহপাঠী ও অভিভাবকদের বিষয়টি অবহিত করেন। পরে সহপাঠীরা হোছাইনকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন এবং তাকে পিটুনি দিয়ে কক্সবাজার আদালতপাড়ায় নিয়ে যান। সেখানে অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম কাজলের চেম্বারে ৩০০ টাকা নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে মুচলেকা (অঙ্গীকারনামা) দিয়ে মুক্তি পান হোছাইন।

অঙ্গীকারনামায় হোছাইন নিজের অপরাধ স্বীকার করেন এবং ভবিষ্যতে কোনো ছাত্রী বা অন্য কোনো মেয়ের সঙ্গে কোনো প্রকার অনৈতিক আচরণ করবেন না বলে অঙ্গীকার করেন। বিষয়টি নিয়ে বাংলানিউজে ‘কলেজছাত্রীকে যৌন হয়রানি: মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পেলেন শিক্ষক’ শিরোনামে সংবাদ ছাপা হলে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়।

রোববার সকালে কলেজ ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে শতাধিক শিক্ষার্থী এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন এবং শাস্তির দাবি জানান।

মানববন্ধনে কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মোশারেফা খানম বলেন, ‘অধ্যক্ষের মদদপুষ্ট হোছাইন স্যার এভাবে ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন করার সাহস কোথায় পেলেন? একজনের জন্য আমরা কী কলেজে আসতে পারব না?’

‘আমরা নিরাপদ শিক্ষাঙ্গন চাই। যৌন হয়রানিকরী শিক্ষকের শাস্তি চাই’, বলেন নাইয়া ইসলাম নিহা।

কলেজের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, ‘শিক্ষকের হাতে যদি ছাত্রীরা নিরাপদ না থাকেন, তাহলে কোথায় নিরাপদ থাকবেন? আমাদের সহপাঠীরা, মেয়েরা যদি নিরাপত্তা না পান, তাহলে বাসা থেকে কলেজে আসবেন কীভাবে? তাই আমরা নিরাপদ শিক্ষাঙ্গন চাই৷’

শিক্ষার্থী সাজ্জাদুর রহমান, মফিজুর রহমানসহ অনেক শিক্ষার্থী প্রায় একই রকম বক্তব্য দেন।

শুধু শিক্ষার্থী নন, এমন অশোভন আচরণে ক্ষুব্ধ কলেজটির শিক্ষকরাও। আইসিটি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আকতার জাহান কাকলী বলেন, ‘ব্যাপারটা আমাদের জন্য খুবই লজ্জাজনক ও দুঃখজনক। আমাদের অধ্যক্ষও খুবই লজ্জিত। ’

তিনি যোগ করেন, ‘আমরা তো ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবক। ওরা যদি আমাদের কাছেই নিরাপদ না হয়, মা-বাবারা তাদের সন্তানদের আমাদের কাছে কীভাবে পাঠাবেন?’

অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন তিনি।

ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ওহিদুল কবির বলেন, ‘শিক্ষক হিসেবে আমরা খুবই লজ্জা বোধ করছি। রামু কলেজে চাকরি করি, কোথাও বের হতে পারছি না। ফোনে বা সামনাসামনি আমাদের শুনতে হচ্ছে আপনারা শিক্ষক হয়ে কীভাবে এ ধরনের ঘটনা ঘটান!’

কলেজের সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আবদুল হক বলেন, ‘আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য দুঃখজনক। আমি আশা করি অধ্যক্ষ মহোদয় বিষয়টা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। ’

অধ্যক্ষের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে থাকা কলেজের গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুপ্রতিম বড়ুয়া বাংলানিউজকে বলেন, ‘অধ্যক্ষ মহোদয় জরুরি কাজে বাইরে আছেন। যৌন নির্যাতনের অভিযোগের বিষয়টি আমাদের জন্য খুবই লজ্জাজনক। অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’

এদিকে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করলেও অভিযুক্ত মোহাম্মদ হোছাইন কলেজে উপস্থিত ছিলেন না বলে অভিযোগ মিলেছে। বক্তব্য নেওয়ার জন্য তাকে একাধিকবার মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ মুজিবুল আলমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এরই মধ্যে তাকে শোকজ করার প্রস্তুতি চলছে। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কাল থেকে কমিটি কাজ শুরু করবে।

এর আগেও বিতর্কে জড়িয়েছেন অভিযুক্ত শিক্ষ
কলেজের শিক্ষকরা জানান, মোহাম্মদ হোছাইনের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ নতুন কোনো ঘটনা নয়। এর আগে এ ধরনের কর্মকাণ্ডে একাধিকবার তিনি ধরা পড়েছেন এবং মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন।

যৌন নির্যাতন ছাড়াও এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কলেজের বিভিন্ন প্রকল্পে আর্থিক দুর্নীতি এবং সিনিয়র শিক্ষকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে।

গত বছরের অক্টোবরে বাংলানিউজের অনুসন্ধানে কলেজের বিভিন্ন প্রকল্পে বড় ধরনের অনিয়ম ও আর্থিক দুর্নীতির খবর প্রকাশিত হয়। এসব অনিয়ম-দুর্নীতির প্রধান হোতা হিসেবে অধ্যক্ষ মুজিবুল আলমের নাম উঠে আসে এবং তার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে বাংলা বিভাগের প্রভাষক মোহাম্মদ হোছাইনের নামও আলোচনায় আসে।

অভিযোগ মিলেছে, কলেজের কিছু শিক্ষক এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে দাঁড়ালে হোছাইন নানাভাবে তাদের নামে বিষোদগার করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১১ অক্টোবর কলেজের অধ্যক্ষ ও একাধিক সিনিয়র শিক্ষকের সামনে এক নারী শিক্ষককে মারতে তেড়ে যান তিনি। সবার সামনেই তাকে যাচ্ছেতাই গালাগাল করেন।

এসব ঘটনায় অধ্যক্ষের ঘনিষ্ঠজন এবং দুর্নীতির দোসর বলে পরিচিত হোছাইনের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কলেজ কর্তৃপক্ষ।

যোগাযোগ করা হলে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর রেজাউল করিম বলেন, এ ধরনের নৈতিক স্খলনজনিত ঘটনায় ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি তদন্ত করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৫ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০২৪
এসবি/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।