ঢাকা, সোমবার, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

বাঁকখালীতে ফল-পিঠার উৎসবে মাতলো শিক্ষার্থীরা

সুনীল বড়ুয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৮ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০২৪
বাঁকখালীতে ফল-পিঠার উৎসবে মাতলো শিক্ষার্থীরা

কক্সবাজার: চারদিকে সাজ সাজ রব, উৎসবের আমেজ। বিদ্যালয়ের উঠোনে ফল ও পিঠার পসরা।

সব স্টলেই ভরপুর গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী পিঠাপুলি ও হরেক রকম দেশীয় ফলমূল। আর বর্ণিল এই উৎসবকে ঘিরে চলছে শিক্ষার্থীদের প্রাণের উচ্ছাস। যেখানে শামিল শিক্ষকসহ আমন্ত্রিত অতিথিরাও।

বুধবার (১২ জুন) ‘দেশীয় ফলই-দেশীয় ঐতিহ্য, দেশীয় পিঠাই-দেশীয় সংস্কৃতি’ শীর্ষক প্রতিপাদ্যে রামুর বাঁকখালী উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বর্ণিল এ উৎসব বসে। এ আয়োজনকে ঘিরে পুরো প্রাঙ্গণে বসে হাজারো শিক্ষার্থীর মিলনমেলা। সবার পোশাকেও ছিল উৎসবের রঙ।

উৎসবে অংশ নেওয়া সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সাফওয়ানুল ইসলাম উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলে, গতকাল থেকে আমরা উৎসবের প্রস্তুতি শুরু করেছি। স্টল সাজিয়েছি, ঘর থেকে পিঠা তৈরি করে এনেছি, ফলমূল নিয়ে এসেছি। আজ খুবই ভালো লাগছে।

সে বলে, প্রতিটি স্টলেই নানা রকম পিঠা ও ফল  আছে। আমাদের (সপ্তম শ্রেণি) স্টলে ৪১ রকম দেশীয় ফল ও পিঠা প্রদর্শন করা হয়েছে। আমরা খেয়েছি, পরিচিত হয়েছি। দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির ফলের বৈজ্ঞানিক নাম জানার পাশাপাশি ফলের পুষ্টিগুণ ও গুণাগুণ সম্পর্কেও জ্ঞান অর্জন হয়েছে।

দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আশফা হক বলে, উৎসবে অনেক ঐতিহ্যবাহী ফল ও পিঠার প্রদর্শনী হয়েছে। যেমন কাঁঠাল, গাবফল, তাল, কমলা, ডাব। এছাড়া পিঠার মধ্যে পাটিসাপটা, মুচা, হৃদয়হরণ,তাল পিঠা, চাঁচের পিঠা, ভাবা পিঠা, আতিক্কা পিঠাসহ অনেক মুখরোচক পিঠাপুলি ছিল।

দশম শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী কাশপিয়া নাসরিন সেজান বলে, ‘আমি ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে এ বিদ্যালয়ে উৎসবটি উদযাপন করে আসছি। যার যার সাধ্য অনুযায়ী আমরা চেষ্টা করি উৎসবকে বর্ণিল করে তুলতে।

সেজান বলে, দশম শ্রেণির স্টলে ৪০ রকমের দেশীয় ফল ও ঐতিহ্যবাহী পিঠা প্রদর্শন করা হয়েছে। আমাদের দাদা-দাদিদের মুখে নাম শুনতাম কিন্তু কোনোদিন চোখে দেখিনি। এরকম অনেক পিঠা ও ফলের সঙ্গে আজ আমরা পরিচিত হয়েছি।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আসমাতুল এলা বলেন, উৎসবটি শিক্ষার্থীদের কতটা আন্দোলিত করেছে তা ভাষায় বোঝানো কঠিন। গতকাল থেকে অনেক শিক্ষার্থী নিজেদের স্টল সাজাতে রীতিমত প্রতিযোগিতায় নেমেছে। অনেকে কাজ শেষ করতে না পারায় সন্ধ্যার পরেও স্কুলে অবস্থান করেছে। প্রতিটি স্টলে কত বেশি বাঙালিয়ানা ফুটিয়ে তোলা যায় সেই চেষ্টা ছিল সবার মাঝে। আমি মনে করি, প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের উৎসব আয়োজন করা উচিত।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইজত উল্লাহ বলেন, এ ধরনের উৎসবের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ তো ঘটেই, পাশাপাশি আমরা সমাজকে, দেশের মানুষকে একটা ইতিবাচক বার্তা দিতে চাই। আমাদের দেশীয় ফলমূলগুলো দিন দিন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। অথচ এসব ফলের পুষ্টিগুণ অনেক বেশি এবং বাজারের হাইব্রিড ও ফরমালিন যুক্ত ফলের চেয়ে হাজারগুণ নিরাপদ।  

‘আমাদের বাবা-মা বা দাদা-দাদীর মুখে যেসব পিঠাপুলির নাম শুনতাম তা এখন কেবলই স্মৃতি। বেশিরভাগ পিঠার বাস্তবে দেখা মেলে না। অথচ এসব পিঠা আমাদের ঐহিত্য। আমরা সেই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে চাই’, যোগ করেন ইজত উল্লাহ।

তিনি বলেন, প্রতি বছর রামুর শিক্ষক, অভিভাবক, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি—সব শ্রেণির সচেতন মানুষ আমাদের এ আয়োজনে শামিল হন, আমরা প্রাণিত হই। এভাবেই সবার সহযোগিতায় এ বিদ্যালয় লেখাপড়ার মানের দিক দিয়ে উপজেলায় শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে।

দুপুরে উৎসবের উদ্বোধন করেন কক্সবাজার জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নাছির উদ্দিন। বাঁকখালী ফাউন্ডেশনের সভাপতি এ কে খাঁনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু তাহের দেওয়ান, কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদের নব-নির্বাচিত নারী ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপিকা রোমেনা আকতার, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের প্রভাষক ডা. মিজানুর রহমান।

এ সময় অন্যদের মধ্যে রামু খিজারী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, পানিরছড়া এসএইচডি মডেল হাই স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক আবদুল হালিম, বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সদস্য অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সুনীল কুমার শর্মা, রামু সরকারি কলেজের অধ্যাপক আব্দুল হক, বাঁকখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালক হোসনে আরা বেগম, আওরঙ্গজেব টিপু, ডা.শফিকুল ইসলাম, এসএম জাফর, নুরুল আমিন, রামু প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সোয়েব সাঈদ, পশ্চিম মেরংলোয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেবী বড়ুয়া, বাঁকখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দুলাল কান্তি দাশ প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ২২০৭ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০২৪
এসবি/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।