ঢাকা: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ চার শিক্ষার্থীর নামে তিনটি হল ও একটি লাইব্রেরির নামকরণ করেছে সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি।
বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে হল তিনটি ও লাইব্রেরিটির নামফলক উন্মোচন করেন নিহত শিক্ষার্থীদের পরিবার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
এ সময় সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইউসুফ মাহবুবুল ইসলাম, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. মোফাজ্জল হোসেন, ডিন অধ্যাপক ড. মো. সিরাজুল ইসলামসহ অন্যান্য শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির নিহত শিক্ষার্থীরা হলেন- বিবিএ বিভাগের ইমতিয়াজ আহম্মেদ জাবির, ইইই বিভাগের মো. রাব্বি মিয়া, টেক্সটাইল বিভাগের মো. রবিউল ইসলাম ও রাকিব হোসাইন। তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বিভিন্ন সময়ে নিহত হন।
নামফলক উন্মোচনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাল্টিপারপাস হলে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া মাহফিলেরও আয়োজন করা হয়। সেখানে নিহত চার শিক্ষার্থীর প্রত্যেকের পরিবারের হাতে ১০ লা টাকার চেক তুলে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের ছাত্রদের দাবি-দাওয়াগুলো কঠিন কিছু ছিল না। তারা কোটা বাতিল চায়নি। তারা চেয়েছিল সংস্কার। অথচ তাদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা হয়েছে। যার পরিণতি স্বৈরাচারের বিদায়। এ আন্দোলনে কতজন নিহত হয়েছে তা এখনো জানা যায়নি। তবে আমরা পত্র-পত্রিকায় দেখেছি ৭০০ এর বেশি মানুষ মারা গেছেন। এ লড়াইয়ে আমাদের ছাত্ররা বসে থাকেননি। তারাও লড়াই করেছেন। তাদের ওপর ত্রিমুখী হামলা হয়েছে। আমাদের ছাত্ররা বীরের মতো মৃত্যুবরণ করেছেন। সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির সব ছাত্রদের মনে তারা থাকবে। তারা হয়তো ফিরে আসবে না। কিন্তু তারা শহীদ হয়ে গর্ব করার মতো কাজ করে গেছেন।
অধ্যাপক ড. এম. মোফাজ্জল হোসেন বলেন, আমরা আমাদের এ চার বীর শহীদদের মনে রাখবো। তারা তাদের জীবনের বিনিময়ে আমাদের স্বৈরাচারের হাত থেকে মুক্তি দিয়েছে। তাদের মনে রাখতে হবে, যেমন করে আমরা ১৯৭১ এর শহীদদের মনে রাখি।
এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও শাস্তির দাবি করেন।
দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও অসুস্থ থাকায় তিনি আসতে পারেননি। এজন্য তিনি একটি লিখিত বক্তব্যে শহীদ শিক্ষার্থীদের পরিবারের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। পাশাপাশি লিখিত বক্তব্যে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। আহতদের সুস্থতা কামনা করছি। তাদের অবদান আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসায় আমাদের কোনো কার্পণ্য নেই। আমরা প্রতিনিয়ত আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার খোঁজখবর নিচ্ছি। যাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হারিয়েছে তাদের কৃত্রিম অঙ্গ প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনের পদক্ষেপ নিয়েছি। পাশাপাশি নিহতদের পরিবারকে ১০ লাখ করে আর্থিক সহায়তা দিয়েছি।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. ইউসুফ মাহবুবুল ইসলাম একটি কবিতা পাঠ করেন। এছাড়া অনুষ্ঠানে নিহত শিক্ষার্থীদের স্মৃতিচারণ করেন পরিবারের সদস্য ও সহপাঠীরা। এ সময় প্রত্যেকে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন।
শেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া ও মোনাজাতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৪
এসসি/আরআইএস