ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

‘সংকটকে’ সঙ্গী করেই ২০ বছরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০২৪
‘সংকটকে’ সঙ্গী করেই ২০ বছরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

জবি: প্রতিষ্ঠার ১৯ বছর পেরিয়ে ২০ বছরে পদার্পণ করলো বিশ্ববিদ্যালয়টি। ২০০৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ৮ম জাতীয় সংসদের ১৮তম অধিবেশনে ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫’ সংসদে উত্থাপিত হয়।

ওই বছরেরই ২০ অক্টোবর সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে জগন্নাথ কলেজকে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঘোষণা করে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ২০ অক্টোবরকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে পালন করে আসছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে এর যাত্রা আরো পুরোনো।  

পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রার ১৯ বছর পার হলেও সংকটে জর্জরিত বিশ্ববিদ্যালয়টি। প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে ৩৮টি বিভাগ ও দুইটি ইন্সটিটিউটে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৭ হাজারেরও বেশি, শিক্ষক রয়েছে ৭ শতাধিক। তবে মাত্রে সাড়ে সাত একর জায়গায় অবস্থিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় সংকট হলো আবাস। নেই পর্যাপ্ত পরিবহন, ক্যান্টিন, ল্যাব, লাইব্রেরি ও মেডিক্যাল সুবিধাও।

জানা যায়, কলেজ থাকাকালীন সময়ে পুরান ঢাকার বিভিন্ন পরিত্যক্ত বাড়িতে তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের শিক্ষার্থীরা যেসব ছাত্রাবাস তৈরি করেছিলেন, ১৯৮৫ সালের পর থেকে সেগুলো একে একে স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে চলে যেতে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের কয়েক দফা আন্দোলনের মুখে হল উদ্ধারে সরকার একাধিক কমিটি গঠন করলেও বেদখল হওয়া ১১টি হলের মধ্যে দুটি ছাড়া বাকিগুলো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। নতুন করে আবার এসব হল আবার উদ্ধারের চেষ্টা করছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থীরা। এদিকে লাগাতার আন্দোলনের পর ২০১৪ সালে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রী হল নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এটিই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র হল। লিয়াকত এভিনিউয়ের সেই হলে ২০২২ সালের মার্চে ৬২৪টি আসনের বিপরীতে ১২০০ জন ছাত্রীর থাকার ব্যবস্থা হয়।

এছাড়াও প্রায় ১৮ হাজার শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টিতে রয়েছে একটি ক্যাফেটেরিয়া। অবকাশ ভবনে অবস্থিত ক্যাফেটেরিয়াটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালীন। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ফটকের সামনে নতুন একটি ক্যান্টিন তৈরির প্রস্ততি নেয় জবি প্রশাসন। তবে শুধুমাত্র নকশাতেই আটকে আছে তা। এদিকে ক্যাফেটেরিয়ায় নিম্নমানের খাবার  উচ্চ মূল্যে কিনতে হয় শিক্ষার্থীদের। ভর্তুকির নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকেও। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে ১৮ হাজার শিক্ষার্থীর বিপরীতে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির আসন সংখ্যা মাত্র ৩৫০ টি। যার ফলে একপ্রকার গাদাগাদি করেই কেদ্রীয় লাইব্রেরিতে বসতে হয় শিক্ষার্থীদের। আসন সংকট ছাড়াও নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি। পড়াশোনার জন্য যে ধরনের পরিবেশ দরকার তাও পর্যাপ্ত নেই লাইব্রেরিতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভবনের ৬ষ্ঠ তলায় অবস্থিত কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে নেই পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা, বসার জায়গা এতোটাই কাছাকাছি যে প্রতি আসনে বসে পড়াশোনা করা কষ্টসাধ্য।

উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা ও আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামাদি নেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র মেডিকেল সেন্টারে। শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী সবার জন্য রয়েছে একটিমাত্র মেডিকেল সেন্টার। মেডিকেল সেন্টার যাত্রা শুরু করে ২০০৫ সালে। যাত্রালগ্নে ছিলেন দু'জন চিকিৎসক, উনিশ বছর পর এসেও এই সংখ্যাটা একই আছে। দৈনিক প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী এই সেন্টার থেকে চিকিৎসা নেন। কিন্তু লোকবল আর বরাদ্দের অভাবে শিক্ষার্থীদের যথাযথ সেবা দেওয়া সম্ভব হয় না। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এখানে মাথাব্যথা, জ্বর ও পেট খারাপের ওষুধ ছাড়া কিছুই মেলে না। মানুষের মৌলিক চাহিদা চিকিৎসাসেবার কথা উল্লেখ থাকলেও তা বাস্তবায়নে পরিপূর্ণভাবে ব্যর্থ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আবার জবির মেডিকেল সেন্টারকে কেউ কেউ মজা করে নাপা সেন্টারও বলে থাকেন।

২০১৯ সালের ৯ অক্টোবর কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়ায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনে ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়নের জন্য প্রকল্প অনুমোদন করে একনেক। প্রায় ২০০ একর জমিতে এক হাজার ৯২০ কোটি ৯৪ লাখ ৩৯ হাজার টাকার এ প্রকল্প ২০২০ সালের অক্টোবরের মধ্যে বাস্তবায়ন করার কথা ছিল। চার বার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লেও এখনো শেষ হয়নি প্রথম ধাপের কাজ। তবে অনুমোদনের পর সাত বছর পার হলেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। নতুন ক্যাম্পাসের কাজ দ্রুত শেষ করার মাধ্যমে আবাসনসহ অন্যান্য সংকট সমাধানের দাবি তুলছেন শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শেখ ইমন বলেন, ১৯ বছরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকট কাটেনি এখনও। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যে সুযোগ সুবিধা পায় তা থেকে বঞ্চিত আমরা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট দাবি জানাই অতিদ্রুত এই মৌলিক সমস্যা গুলোর সমাধান হোক।  

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য  ড.রেজাউল করিম বলেন, ১৯ বছরে অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়ায় কারণ বিগত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গাফিলতি। আমরা সকল কাজ শুরু করে দিয়েছি ,আসলে সবকিছু সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে আমরা ইতিমধ্যে সকল পরিকল্পনা সেরে ফেলেছি, খুব শীঘ্রই অবকাঠামোগত সমস্যাগুলোর সমাধান করা হবে। তবে কিছু কিছু সমস্যা আমাদের হাতের বাইরে যার বিকল্প পথও আমরা ভেবে ফেলেছি। আশা করি একে একে সকল সমস্যার সমাধান হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০২৪
এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।