নাটোর: মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় (এমবিবিএস) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের দিনাজপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন নাটোরের লালপুর শাহাদাত হোসেন। এতে পরিবারের সবার চোখে-মুখে আনন্দ থাকলেও আড়ালে দেখা দিয়েছে দুশ্চিন্তা ও অনিশ্চয়তা।
শাহাদাত হোসেন বাড়ি উপজেলার সাদিপুর গ্রামে। তার বাবা মতিউর রহমান পেশায় কৃষক ও তার মা সাবিনা ইয়াসমিন গৃহিণী। বসবাস করেন টিনের ছাপড়ি ঘরে। তিন ভাই-বোনের মধ্যে শাহাদাত মেজ। বড় বোন মাহফুজা খাতুনের বিয়ে হয়েছে আর আর ছোট ভাই আরাফাত মাদরাসাতে অধ্যায়নরত।
শাহাদাতের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা (পিএসসি) ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেটের (জেএসসি) ফলাফল আশানুরূপ না হলেও মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেটে (এইচএসসি) ঘুরে দাঁড়ান শাহাদাত। তিনি সাদীপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ঈশ্বরদী সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন।
শাহাদাত হোসেন বলেন, এসএসসির প্রথম বর্ষে ফেল করায় মনটা ভীষণ খারাপ হয়েছিল। সেদিন আমার বন্ধু নাহিয়ান তানভীর কলেজে প্রথম হয়েছিল। পরে তার থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আস্তে আস্তে নিজেকে তৈরি করে নিয়েছি। পরেরবার কলেজে দ্বিতীয় হয়েছি। এবার মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আমার পড়াশোনার খরচ যোগাতে বাবা-মা, বোন অনেক কষ্ট করেছেন। শিক্ষক, খালা-খালুরা সর্বদা সহযোগিতা করেছেন। বাবা-মার কষ্ট ঘুচানোর পাশাপাশি আমি চাই একজন মানবিক চিকিৎসক হয়ে হতদরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দিতে।
ছেলের এমন সাফল্যে বাবা মতিউর রহমান বলেন, নিজস্ব আট শতক জমি চাষাবাদ করি এবং প্রতি বছর একটি করে গরু মোটাতাজা করে বিক্রি করি। সীমিত আয়ে ছেলে পড়াশোনার খরচ কোনোভাবে চালিয়ে এসেছি। মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার খবর শুনে পরিবারের কেউ সেদিন রাতে আনন্দে ঘুমাতে পারেনি। কিন্তু ভর্তি হতে অনেক টাকার দরকার। পড়াশোনার খরচ চালাতে প্রতি মাসে টাকা দিতে হবে। এজন্য চিন্তা-ভাবনা করেছি বাড়ির গরুটা বিক্রি করে দেব।
ছেলের ভর্তির টাকা জোগাড় করা নিয়ে চিন্তায় শাহাদাতের মা সাবিনা ইয়াসমিনও। তিনি বলেন, আমরা গরিব। অভাবের সংসার। কখনও ভাবতে পারিনি আমার ছেলে ডাক্তার হবে, গরিব-অসহায় মানুষের সেবা করবে। কিন্তু ভর্তির খরচ ও ভবিষ্যতের পড়াশোনা চালানো যে কতটা কঠিন, তা নিয়ে চিন্তিত।
এ বিষয়ে লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহেদী হাসান বলেন, লিখিতভাবে আবেদন জমা দিলে শাহাদাতকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০২৫
এসআরএস