ঢাকা: জাতীয়করণের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ সংলগ্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনে ২৬ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে অবস্থান করছেন স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষকরা।
আজকের (২৪ ঘণ্টা) মধ্যে সুস্পষ্ট কোনো ঘোষণা না পেলে তারা কঠোর কর্মসূচির দিকে যাবেন বলে জানিয়েছেন।
সোমবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুর একটা নাগাদ তাদেরকে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যেতে দেখা গেছে। সেখানে থেকেই আল্টিমেটাম দেন তারা।
ইতোমধ্যে ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধিদল শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেছেন।
প্রতিনিধিদলে রয়েছেন আন্দোলন বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক শামসুল আলম, সদস্যসচিব আল-আমিন, সদস্য আব্দুল হান্নান এবং সদস্য নুরুল আমিন।
স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদরাসাকে জাতীয়করণের দাবিতে গত ১৯ জানুয়ারি থেকে শিক্ষকরা রাজধানীর প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। রোববার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা ঘেরাওয়ের কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে তারা প্রেসক্লাব থেকে শাহবাগের দিকে পদযাত্রা করেন।
এ সময় শাহবাগে শিক্ষকদের উপর লাঠিচার্জ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। একই সঙ্গে জলকামান নিক্ষেপ করে। এতে অনেকেই আহত হন। তবে লাঠিচার্জ এবং জলকামান নিক্ষেপের পর এখনো শিক্ষকরা সড়কে অবস্থান করছেন।
সোমবার দুপুর ১টায় সরেজমিনে দেখা যায়, আন্দোলনেকারীরা সড়কে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন। আন্দোলনেকারীদের মধ্যে পুলিশের হামলায় আহত কয়েকজনও রয়েছেন।
ফিরোজপুর থেকে আসা শিক্ষক নুরুল আমিন বলেন, গতকাল আমাদের একটি প্রতিনিধিদলকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে নেওয়ার কথা বলা হয়। আমরা সেখানে পৌঁছানোর পর রাস্তায় আধঘণ্টা দাড় করিয়ে রাখেন তারা। তারপর প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী এসে আমাদের দাবি-দাওয়া জানতে চান।
তিনি বলেন, আমাদেরকে সেখানে সম্মান দেওয়া হয়নি। তারপর আমাদেরকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ডাকা হয়। সেখানে মাদরাসা অধিদপ্তরের ডিজি উপস্থিত ছিলেন। তারা আমাদের সঙ্গে আজ আলোচনায় বসতে চেয়েছেন।
তিনি বলেন, এই সরকার আমাদের সরকার। আমরা সময় দিতে চাই। কিন্তু তা লাগামহীন না। কিন্তু আজকের মধ্যে কোনো সুষ্পষ্ট ঘোষণা না দিলে আমরা কঠোর কর্মসূচিতে যাব।
কী চান শিক্ষকরা
বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষায় দুই ধরনের ইবতেদায়ি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তারমধ্যে সংযুক্ত এবতেদায়ি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা এমপিওভুক্ত হয়ে বেতন পান। কিন্তু স্বতন্ত্র এবতেদায়ি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা কোনো সরকারি বেতন পান না।
আন্দোলন বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য এজাজ কায়সার বলেন, ১৯৮৪ সালে ৭৮ অর্ডিনেন্স ১৭ এর ২ ধারা মোতাবেক শিক্ষা মন্ত্রণালয়েল নির্দেশে মাদরাসা বোর্ড কর্তৃক স্বীকৃতি লাভ করে। তখন থেকেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো এনসিটিবির পাঠ্যক্রমে শিক্ষার্থীদের পড়ানো হয়। ১৯৯৪ সালে একই পরিপত্রে ৫০০ টাকা ভাতা প্রাপ্ত হন। কিন্তু এরপর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেতন বৃদ্ধি পেয়ে জাতীয়করণ হয়েছে কিন্তু এবতেদায়ি শিক্ষকদের জাতীয়করণ হয়নি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রায় ১০ হাজার স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তারমধ্যে মাত্র ১৫১৯ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সামান্যকিছু ভাতা দেওয়া হয়। সে ভাতাও সময়মতো পাওয়া যায় না।
নুরুল আমিন বলেন, স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি প্রতিষ্ঠানের সকল কার্যক্রম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনুরূপ। তবুও জাতীয়করণ করা হয়নি। তারা ৬ দফা দাবি জানিয়েছেন। দাবিগুলো হলো- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা গবেষণা ইন্সটিটিউট (আইইআর) কর্তৃক স্টাডি রিপোর্টের সুপারিশের আলোকে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ন্যায় জাতীয়করণের ঘোষণা চাই; স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা রেজিস্ট্রেশন স্থগিত আদেশ ২০০৮ প্রত্যাহার করা; রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত কোড বিহীন মাদরাসাগুলো মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক কোড নম্বরে অন্তর্ভুক্তকরণ; স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার আলাদা নীতিমালা, পাঠদানের অনুমতি, স্বীকৃতি, বেতন-ভাতা, নীতিমালা-২০২৫ অনুমোদনকরণ; প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ন্যায় অফিস সহায়ক নিয়োগের ব্যবস্থাকরণ: প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ন্যায় স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসায় প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি খোলার অনুমোদনের ব্যবস্থাকরণ।
হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও নিন্দা
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মিছিল করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন ও ইনকিলাব মঞ্চ। রোববার সন্ধ্যায় তারা মিছিল নিয়ে শাহবাগ যান এবং অবস্থানরত শিক্ষকদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেন।
মিছিলের পর সমাবেশে এই দুই সংগঠনের নেতারা হামলার জন্য স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে জবাবদিহিতা চান।
মিছিলে সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের রওনক জাহান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিব আল ইসলাম ও রেজোয়ান রিফাত প্রমুখ বক্তব্য দেন।
এ ঘটনায় নিন্দা প্রকাশ করে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। সংগঠনটির শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক ফয়সাল মাহমুদ শান্ত পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তি বলা হয়, ১৯ জানুয়ারি থেকে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষকরা জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলন করলেও ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত রাষ্ট্রের কোনো দায়িত্বশীল প্রতিনিধি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। এটি চরম অবহেলার বহিঃপ্রকাশ। ২৬ জানুয়ারি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শিক্ষকদের আন্দোলনে হামলা করেছে, যা ২৪’র অভ্যুত্থান পরিপন্থি। আমরা এই ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এহেন পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০২৪
এফএইচ/এসএএইচ