ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ ফাল্গুন ১৪৩১, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২০ শাবান ১৪৪৬

শিক্ষা

২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই ফ্যাসিস্টের আমলের: ভিসি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৫
২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই ফ্যাসিস্টের আমলের: ভিসি অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিন

বরিশাল: বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিন।

রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওতে তাকে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতেও দেখা যায়।

উপাচার্য সেখানে বলেন, আমি এখানে এসেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের কল্যাণের জন্য। প্রথম থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়গুলো সম্পর্কে গ্যাপ তৈরির চেষ্টা চলেছে। জুলাই আন্দোলনের পরে আমরা যারা বিভিন্ন জায়গাতে এসেছি, তাদের বিভিন্নভাবে বিভিন্ন সমস্যায় ফেলা হচ্ছে। এই কাজগুলো অত্যন্ত অনুচিত হচ্ছে, শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পেছনে ইন্ধন কারা যোগাচ্ছে, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এ বিষয়ে পুলিশ তদন্ত করছে, তারা তদন্ত করে বের করবে। এ বিষয়ে পুলিশকে যথাযথ তথ্যাদি দেওয়া হয়েছে, দেখানো হয়েছে। তারা আরও সংগ্রহ করছেন।

উপ-উপাচার্যকে তার দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়া এবং উপ-উপাচার্যের ডাকা মিটিংয়ে চেয়ারম্যানদের যেতে না দেওয়ার নোটিশ জারির বিষয়ে ড. শুচিতা শরমিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম প্রো-ভিসি (অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী) তিনি। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো প্রো-ভিসি ছিলেন না। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে যদি ভিসি কাজ না দেয়, তাহলে প্রো-ভিসির কোনো কাজ নেই। আমি প্রথমে ওনাকে একটু ধৈর্য্য ধরতে বলেছিলাম, সেইসঙ্গে কাজ দেওয়ারও চেষ্টা করছিলাম। ইউজিসির সঙ্গে কথা বলে ওনাকে কী কী সুবিধা দেওয়া যায় সেই ব্যবস্থাও করেছিলাম। উনি ঢাকাতে একটি সরকারি বাসায় থাকেন, আর এখানে উনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্ট হাউজে থাকছেন, সেই পারমিশন আমি দেইনি। কারণ আমি ওনাকে বলেছি, আপনি একজন উপ-উপাচার্য; আপনার সম্মানের জায়গা আপনাকে রক্ষা করতে হবে। আপনাকে বাসা ভাড়া করে সঠিকভাবে থাকতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে নয়। ... আমি নিয়মের বাইরে এ পর্যন্ত একটি কাজও করিনি, করবোও না।

উপ-উপাচার্য কর্তৃক চেয়ারম্যানদের চিঠি দেওয়ার পর উপাচার্যের আপত্তির বিষয়ে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির সঙ্গে কথা না বলে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য এ ধরনের চিঠি দিতে পারেন না, যদি ভিসি না বলে। এ ধরনের কাজের মধ্য দিয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা নষ্ট করেছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে কন্টিনিউওয়াসলি মিথ্যে এবং ভুল তথ্য দেওয়ার মধ্য দিয়ে, এমনকি শিক্ষকদের মধ্যেও উনি কাজগুলো করছেন। সিসি ক্যামেরা দেখলে আমরা বুঝতে পারবো। এর মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করাটা বর্তমান সরকারের আমলে আকাঙ্ক্ষিত নয়। আন্তরিকভাবে গতকাল পর্যন্ত এ কথাগুলো আমি বলিনি, আজ বলছি। কারণ এ কথাগুলো বলার সময় হয়ে গেছে। স্থিতিশীল পরিবেশটাকে অস্থিতিশীল করে ফেলা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার জন্য যখনই একটা পরিবেশ আমি তৈরি করছি তখনই গণ্ডগোল তৈরি করার জন্য ইন্ধন যোগাচ্ছে।

সিন্ডিকেট সদস্যের বিষয়ে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা বলেছে পূর্বের কেউ থাকবে না, আমি এখানে নতুন মানুষ, পূর্বে কে ছিল বা না ছিল তা আমাকে দেখতে হবে। আর সিদ্ধান্তও আসার জন্যও পূর্বে কে কে ছিল সেটা আমাকে দেখতে হবে।

এসময় তিনি বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয় ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত, সেইসময় থেকে এ পর্যন্ত যারা নিয়োগ পেয়েছেন, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং যারা শিক্ষার্থী তারা সবাই ফ্যাসিস্ট আমলের। এ পর্যন্ত নতুন কেউ যোগ করেনি এবং কেউ যদি বলে আমি ফ্যাসিস্টের কেউ নই, সেটা দাবি করতে পারবে না। সেই আমলে সে রিক্রুটেড, আমরা জানি কিভাবে রিক্রুটমেন্ট হয়েছে। এখন প্রশ্ন শিক্ষার্থীদের কেন উসকে দেওয়া হচ্ছে?

শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়ের মামলার বিষয়ে ড. শুচিতা শরমিন বলেন, যে ঘটনা ‍জুলাই আন্দোলনেও হয়নি, এবার তার চেয়ে বড় ঘটনা ঘটে গেছে বিশ্বিবিদ্যালয়ে। ভাইস চ্যান্সেলরের বাংলোর শুধু গেট ভাঙ্গা হয়েছে এমন নয়, কেচিগেটের ভেতরেও ভাঙার চেষ্টা হয়েছে। আর ওখানে সম্মানিত সিন্ডিকেট সদস্যরা উপস্থিতি ছিলেন। আমাদের সব শিক্ষার্থীর মধ্যে দুই-তিনজন যদি বিচ্যুত হয়ে যায় তাদের দিকেও আমাদের তাকাতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ নষ্ট থেকে শুরু করে সম্মান নষ্ট করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেজ নষ্ট করলে মামলা হতেই পারে।

তিনি বলেন, মামলা প্রত্যাহার করতে হলে শিক্ষার্থীদের আমার কাছে আসতে হবে, কথা বলতে হবে। তারা যে ভুল করেছে সেই অনুশোচনা হলে নিশ্চয়ই আমরা বিবেচনা করবো। আমরা শিক্ষার্থীদের ক্ষতি করার জন্য বসিনি। আমরা শিক্ষার্থীদের মানবিকতা, উন্নয়ন কল্যাণ দেখতে চাই, ধ্বংস দেখতে চাই না।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৫
এমএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।