ঢাকা, সোমবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩২, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ২২ শাওয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

ভিসির পদত্যাগের দাবিতে প্রতীকী গদি জ্বালালেন কুয়েট শিক্ষার্থীরা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০২৫
ভিসির পদত্যাগের দাবিতে প্রতীকী গদি জ্বালালেন কুয়েট শিক্ষার্থীরা

খুলনা: খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ভিসির প্রতীকী গদি জ্বালানো কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের লাগাতার আন্দোলনের অংশ হিসেবে শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকেলে ক্যাম্পাসে প্রতীকী গদি জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা।

কুয়েট ক্যাম্পাসের দুর্বার বাংলা পাদদেশে এ কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা একটি চেয়ারে ভিসির গদি লিখে সেটিকে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে বিক্ষোভ পালন করেন। তারা বলেন, কুয়েট ভিসির পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কর্মসূচি চলবে। শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ চলাকালে ‘দালাল ভিসি বহাল কেন-ইন্টেরিম জবাব চাই, জ্বালোরে জ্বালো-আগুন জ্বালো, কুয়েট ভিসির গদিতে-আগুন জ্বালো একসাথে’ এমন নানান শ্লোগান দেন।

এদিকে, কুয়েটের ভিসি বিরোধী আন্দোলনে দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়েছেন শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এরই মধ্যে শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনের বিপক্ষে প্রকাশ্যে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মানব বন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি করে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। পাশাপাশি কুয়েট শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে শিক্ষক লাঞ্ছনার বিষয়ে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এছাড়া শিক্ষক সমিতির শিক্ষক সমিতির সভাপতি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘ভিসি’র পদত্যাগের দাবি একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ’। সব মিলিয়ে কুয়েট পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে জটিলতার দিকে যাচ্ছে। তাছাড়া কুয়েটের গুটি কয়েক শিক্ষার্থী আন্দোলনে অংশ নিলেও সিংহভাগ এখনও ক্যাম্পাসে ফেরেনি। বিশেষ করে ছাত্রীহল এখনও তালাবদ্ধ। এর আগে ছাত্রদের ছয়টি হলের তালা ভেঙে ১৫ এপ্রিল প্রবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। মূলত তারাই ক্যাম্পাসে প্রতিদিন ভিসি বিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনে শিক্ষকদের একটি অংশ থাকলেও তারা প্রকাশ্যে আসছেন না। এজন্য কুয়েটের শিক্ষা ব্যবস্থায় অনেকটা অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

কুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. ফারুক হোসেন বলেন, শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার অভিযোগ এনে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কুয়েট শিক্ষক সমিতি।

বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টায় শিক্ষক সমিতির চতুর্থ সাধারণ সভায় এ সিদ্ধান্ত হয় বলেও তিনি জানান। কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে রয়েছেন এমই বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল্লা আল ফারুক ও সদস্য সচিব হিসেবে রয়েছেন সিএসই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবদুল আজিজ।

এছাড়া সদস্য হিসেবে রয়েছেন আইইপিটি বিভাগের প্রভাষক নাহইয়ান আহনাফ প্রতীক, টিই বিভাগের প্রভাষক কানিজ ফাতেমা মিশফা এবং আইপিই বিভাগের প্রভাষক জাহিদ হাসান আশিক।

অপরদিকে, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) একদল শিক্ষার্থীর ভিসি’র পদত্যাগের দাবি সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. সাহিদুল ইসলাম একটি বিবৃতি দিয়েছেন।  
বিবৃতিতে তিনি উল্লেখ করেন, সম্প্রতি কুয়েট ক্যাম্পাসে একটি ক্ষুদ্র সংখ্যক শিক্ষার্থীর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কর্মকাণ্ডে যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এরই মধ্যেই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পাঁচটি দাবি বাস্তবায়ন করেছে। তবুও ভিসি পদত্যাগের অযৌক্তিক দাবি তুলে আন্দোলন অব্যাহত রাখা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য এবং এটি একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ বলে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে।

বিবৃতিতে ‘শিক্ষার্থীরা দ্রুত তাদের বিভ্রান্তিমূলক পথ থেকে ফিরে আসুক এবং কুয়েটের স্বাভাবিক শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ বজায় থাকুক’ এমনটিও প্রত্যাশা করেন তিনি।

এর আগে ১৪ এপ্রিল (সোমবার) রাতে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০১তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে গত ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারির সহিংসতার ঘটনায় ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকা শিক্ষা কার্যক্রম আগামী ৪ মে এবং আবাসিক হলগুলো ২ মে খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে রাতেই প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। গত দুই দিন ধরে তারা প্রশাসনিক ভবনের সামনে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছিলেন। শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে নিজেরাই একের পর এক হলের তালা ভেঙে প্রবেশ করেন।

ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্রদল-যুবদলের সঙ্গে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক আহত হন। এ ঘটনার পর ২৫ ফেব্রুয়ারি সিন্ডিকেট সভায় অনির্দিষ্টকালের জন্য একাডেমিক কার্যক্রম ও হল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে রোববার (১৩ এপ্রিল) বন্ধ থাকা কুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন শিক্ষার্থীরা।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৬ ঘণ্টা,  এপ্রিল ১৯,  ২০২৫
এমআরএম/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।