ঢাকা: সারাদেশে ১৬টি উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীরা হাওর/দ্বীপ/চর ভাতা পাচ্ছেন। এ জন্য সাত কোটি ৫১ লাখ ৫৯ হাজার ৬০০ টাকা বরাদ্দ চেয়ে অর্থ বিভাগে চিঠি দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
রোববার (২৫ মে) প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি পাঠানো হয়। এতে বলা হয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ২০১৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি এক আদেশে সারাদেশে ১৬টি উপজেলাকে হাওর/চর/দ্বীপ উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করে। অর্থ বিভাগ থেকে ২০২২ সালের ২৬ জানুয়ারি এক স্মারকে উক্ত ১৬টি উপজেলায় কর্মরত কর্মচারীগণকে মাসিক হাওর/চর/দ্বীপ ভাতা প্রাপ্তির হার নির্ধারণ করা হয়। এর প্রেক্ষিতে বর্ণিত উপজেলাসমূহের কর্মচারীগণ সংশ্লিষ্ট ভাতা পেয়ে আসছিলেন। পরবর্তীতে অর্থ বিভাগের স্মারক অনুয়ায়ী হাওর/দ্বীপ/চর হিসেবে ঘোষিত উপজেলাসমূহের স্থায়ী বাসিন্দাগণ নিজ উপজেলায় কর্মরত থাকাকালীন এ ভাতা প্রাপ্য হবেন না- মর্মে উল্লেখ করা হয়। ফলে সংশ্লিষ্ট উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দাগণ উক্ত ভাতা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এরই প্রেক্ষিতে এ মন্ত্রণালয় হতে হাওর/দ্বীপ/চর অঞ্চলে অবস্থিত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়াধীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্থানীয় শিক্ষক ও কর্মচারীগণকে হাওর/দ্বীপ/চর ভাতা প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করতে অর্থ বিভাগের বর্ণিত নির্দেশনা বাতিল করার জন্য অনুরোধ জানায়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা-২০১৯ এর বিধি ৩ এর (৩) অনুযায়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ স্ব-স্ব উপজেলা ভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে নিজ উপজেলায় কর্মরত থাকেন। সেক্ষেত্রে হাওর/দ্বীপ/চর অঞ্চলে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকগণকে ঝুঁকি নিয়ে কাঁচা রাস্তার পথ হেঁটে, দুর্গম হাওর, দ্বীপ ও নদীপথ পাড়ি দিয়ে বিদ্যালয়ে গিয়ে পাঠদান কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হয়। বিশেষ করে নারী শিক্ষকদেরকে অনেক ঝুঁকি নিয়ে কষ্ট করে বিদ্যালয়ে পৌঁছাতে হয়। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকদের অধিকাংশই নারী হওয়ায় সুগম এলাকায় পদ শূন্য হলে তারা অন্যত্র বদলি সূত্রে চলে যান। সে কারণে বেশিরভাগ সময় এ সকল অঞ্চলের বিদ্যালয়সমূহে শিক্ষকের পদশূন্য থাকে। ফলে হাওর/দ্বীপ/চর ও দুর্গম এলাকায় বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ঘোষিত হাওর/দ্বীপ/চর অঞ্চল হিসেবে ঘোষিত ১৬টি উপজেলায় এক হাজার ৩০৭টি শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ শূন্য রয়েছে। গত ২ মার্চ অর্থ উপদেষ্টার সাথে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এবং গত ১২ মে অর্থ বিভাগের সচিবের সাথে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার এ বিষয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়। উভয় সভায় আলোচনাকালে আর্থিক সংশ্লেষসহ প্রস্তাব পাঠানোর জন্য অর্থ বিভাগ থেকে অনুরোধ জানানো হয়।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ২০১৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারির আদেশে হাওর/চর/দ্বীপ উপজেলা হিসেবে ঘোষিত ১৬টি উপজেলার অস্থানীয় শিক্ষকগণকে রাজস্ব বাজেটের আওতায় বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে নিয়মিতভাবে হাওর/দ্বীপ/চরভাতা প্রদান করা হচ্ছে। ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে এই খাতে ৩০ কোটি ৩৪ লাখ ২৬ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা আছে। এ ১৬ উপজেলার সকল (স্থানীয়/অস্থানীয়) শিক্ষক/কর্মচারীকে হাওর/দ্বীপ/চর অঞ্চল ভাতা প্রদান করতে হলে অতিরিক্ত সাত কোটি ৫১ লাখ ৫৯ হাজার ৬০০ টাকা প্রয়োজন হবে। হাওর/দ্বীপ/চর অঞ্চলে অবস্থিত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়াধীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্থানীয় শিক্ষক ও কর্মচারীগণকে হাওর/দ্বীপ/চর ভাতা প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য অর্থ বিভাগের প্রবিধি-৩ শাখা থেকে ২০২২ সালের ২৬ জানুয়ারি স্মারকে নির্দেশনা বাতিল করে অতিরিক্ত সাত কোটি ৫১ লাখ ৫৯ হাজার ৬০০ টাকা বরাদ্দ প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
এমআইএইচ/এমএম