ইরাসমাস মুন্ডুসে স্কলারশিপ প্রাপ্তির দিক থেকে বাংলাদেশ তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে। ১৩৭টি দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এ অর্জনকে একটি মাইলফলক বলে অভিহিত করছেন অনেকেই।
এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে স্কলারশিপ পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ সংখ্যক বলে জানিয়েছেন ইরাসমাস মুন্ডুস অ্যাসোসিয়েশনের (ইএমএ) সভাপতি ড. আশিকুর রহমান।
জানা যায়, ইরাসমাস মুন্ডুস জয়েন্ট মাস্টার্স স্কলারশিপে এ বছর মোট ১৩৯ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। যার মধ্যে ৯৫ জন পেয়েছেন ফুল-ফান্ডেড স্কলারশিপ। বাকি ৪৪ জন শিক্ষার্থী আংশিক স্কলারশিপ বা সেলফ-ফান্ডেড মডেলে বিভিন্ন ইউরোপীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ইরাসমাস মুন্ডুস জয়েন্ট মাস্টার্স-এ অধ্যয়ন শুরু করবেন।
বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে ড. আশিক বলেন, এ অর্জন শুধুমাত্র পরিসংখ্যান নয়—এটি বাংলাদেশের তরুণদের প্রতিভা, নিষ্ঠা ও আন্তর্জাতিক সক্ষমতার জীবন্ত প্রমাণ। বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের এ উত্থান আমাদের ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। আমি বিশ্বাস করি, আগামী কয়েক বছরে বাংলাদেশ আরও ওপরের অবস্থানে উঠে আসবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের কাছে আমাদের তথ্যগুলো সরাসরি পৌঁছায় না। বিভিন্ন গেইটের মাধ্যমে তথ্য অর্ধ বা বিকৃতভাবে উপস্থাপিত হয়। তাই বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা অনেকটা ইংরেজির প্রতি ভয় এবং ‘আমি চান্স পাবো ন ‘ এমন হীনম্মন্যতার কারণে অ্যাপ্লাই করতে চায় না।
এ তথ্য বিভ্রাট নিরসন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশে আমাদের দুজন রিপ্রেজেনটেটিভ আছে। এছাড়া সরাসরি তথ্য জানানোর জন্য আমাদের ফেসবুক গ্রুপ আছে যেখানে নিয়মিত তথ্য আপডেট করা হয়। এছাড়াও যারা স্কলারশিপ শেষে দেশে ফেরত যাচ্ছেন তারাও তথ্য বিভ্রাট নিরসনের বড় সোর্স। এছাড়া সরকারি উদ্যোগও আমরা কামনা করছি। সরকার চাইলে এ প্রসেসটা আরও স্মুথ এবং গতিশীল হতে পারে।
শিক্ষার্থীদের অর্থনৈতিক ভীতি ও রেজাল্ট ভীতির ব্যাপারে জানতে চাইলে ড. আশিকুর জানান, মেধাবী মানেই কিন্তু ভালো রেজাল্ট ধারী নয়। রেজাল্টের চেয়ে এখানে মেধাকে মূল্যায়ন করা হয় বেশি। আর অর্থনৈতিক কোনো সমস্যাই এখানে নেই। ইরাসমাস মুন্ডুসের ফুল ফান্ডেড প্রোগ্রামে যারা আসেন তাদের জন্য ১৪ শ’ ইউরো প্রতি মাসে ধার্য করা থাকে ব্যক্তিগত খরচের জন্য। এছাড়া টিউশন ফি, ভ্রমণ খরচ, স্বাস্থ্যবিমা ও ভিসা খরচের সবকিছুই ইরাসমাস বহন করে থাকে।
ড. আশিকুর রহমান আশা প্রকাশ করেন, আগামীতে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকেও আরও বেশি শিক্ষার্থী ইউরোপে উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন করবেন।
তিনি বলেন, একটি স্কলারশিপ বদলে দিতে পারে একটি জীবন। কিন্তু একটি সচেতন, দক্ষ ও সক্রিয় স্কলারদের নেটওয়ার্ক বদলে দিতে পারে একটি প্রজন্ম, এমনকি একটি দেশের ভবিষ্যৎ। বাংলাদেশের জন্য এ গর্বের মুহূর্ত আমাদের নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের জন্য এক বিশাল অনুপ্রেরণা। যারা স্বপ্ন দেখে, তাদের জন্য ইউরোপের দরজা এখন আরও প্রশস্ত। আমাদের তরুণরা আজ শুধু উচ্চশিক্ষায় নয়, নেতৃত্ব, গবেষণা ও বৈশ্বিক সংযোগেও একটি উল্লেখযোগ্য অবস্থান তৈরির পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত তিন বছর ধরে বাংলাদেশ ইরাসমাস স্কলারশিপপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যায় ধারাবাহিকভাবে বিশ্বে ৪র্থ অবস্থানে ছিল। ২০২২ সালে নির্বাচিত হয়েছিল ১৪১ জন, ২০২৩ সালে সংখ্যা ছিল ১৫১ জন এবং ২০২৪ সালে নির্বাচিত হয়েছিলেন ১১৯ জন। আর এবার ২০২৫ সালে সংখ্যাটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩৯ জনে, এবং বাংলাদেশ উঠে এসেছে ৩য় অবস্থানে।
আরআইএস