ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

বিদায়… হে বন্ধু বিদায়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৭, ২০১২
বিদায়… হে বন্ধু বিদায়

ঢাকা: ৬ ডিসেম্বর, ২০১২ বৃহস্পতিবার, দিনটিকে স্মৃতির মণিকোঠায় গেঁথে রাখতেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের বিবিএ (২০০৫-০৬), এমবিএ (২০০৯-১০) সেশন এর ১ম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা আয়োজন করে দিনব্যাপি শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠানের।

আর কেনই বা আয়োজন থাকবে না, বলুন? দিনটা যে এই বন্ধুদের শিক্ষা সমাপনী দিন —র‌্যাগ ডে!

২০০৬ সালের ১লা জুলাই বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের যাত্রা শুরু হয়েছিল।



এই আনন্দ আয়োজনে যারা রাত-দিন বিরামহীন পরিশ্রম করেছেন, তাঁদের কথা কি ভুলে থাকা যায়? তাই সবার মুখে মুখে তাঁদের নামগুলো ঘুরে-ফিরে উচ্চারিত হতে থাকে— মনির, নাছির, মিশুক, শিপলু, শোয়েব, সন্জীব, আরিফ, ইমরান, সাব্বির, ফিরোজ, অপু, পারভেজ, কালামসহ আরও অনেকের নাম। সন্দেহ নেই, তারা প্রত্যেকেই নিজের মেধা, বুদ্ধি, সাংগঠনিক ক্ষমতা আর অক্লান্ত পরিশ্রমে অনুষ্ঠানটি সার্থক করেছেন।

ব্যাচের শিক্ষার্থীরা সবাই ব্যস্ত নিজের বিভাগকে মনের মতো করে সাজাতে। কারও হাতে ফুল, কারও হাতে বেলুন, কারও হাতে রঙের ডিব্বা, কারও হাতে তুলি। কাজ করতে কারও কোনো ক্লান্তি ছিলনা।

ঐদিন সকাল ৯টায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে টি-শার্ট, ক্যাপ, ভুভুজেলা বিতরণ করা হয়।

সকাল ১১ টায় শিক্ষা সমাপনী দিবসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোহাঃ আলী নূর। তিনি শিক্ষার্থীদেরকে অভিনন্দন ও শুভ কামনা জানান।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মোঃ শফিকুল ইসলাম, প্রভাষক অনুপ কুমার সাহা, মোঃ ওমর ফারুক, মোঃ মিরাজ হোসেন।

আলোচনা সভায় শিক্ষকেরা মনে করিয়ে দিলেন আগামী দিনের সম্ভাবনার কথা, আশার কথা, বিশ্বাসের কথা। প্রভাষক অনুপ কুমার সাহা’র দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য উপস্থিত শিক্ষার্থীদের মনে অনুপ্রেরণা জাগায়।

সহপাঠী বন্ধু মিজান এর রুহের মাগফিরাত কামনায় এসময় ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

আলোচনা সভার পরই যেন শুরু হয় মূল উন্মাদনা, যার নাম আনন্দ শোভাযাত্রা। ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে, ব্যান্ড এর তালেতালে ভুভুজেলা বাজিয়ে, নেচে-গেয়ে সারা ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ শেষে জজ কোর্ট এর সামনে দিয়ে ভিক্টোরিয়া পার্ক প্রদক্ষিণ করে নতুন একাডেমিক ভবনের সামনে এসে থিতু হয় এই দল।

তারপর শুরু হয় ফটোসেশন। কাকে ছেড়ে কার সাথে ছবি তুলবে এটাই ছিল তখনকার উপভোগ্য বিষয়।

দুপুরের খাবারের পর ৩টায় শুরু হল অনুষ্ঠানসূচির মূল আকর্ষণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এত দিন যাঁরা সবটুকু সময় পড়ালেখায় দিয়েছেন, অন্য কোনো অনুষ্ঠানে তেমন দেখা যায়নি যাদের, তারাও আজ সব ভুলে নিজেদের উপস্থাপন করলেন নতুন রূপে।

কেউ কবিতা আবৃত্তি, কেউ গান, কেউ নাচ, কেউ কৌতুক, কেউ ফ্যাশন শো আবার কেউ একক অভিনয়সহ নানান বিষয়ে পারদর্শিতা দেখালেন।

গানের তালে তালে বাধ্যতামূকভাবে নাচতে হল উপস্থিত সবাইকে। আজ যেন কিছুতেই সময়কে আটকানো যাচ্ছে না। কখন যে, বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হল বুঝতেই পারলনা কেউ।

সবাই তখনো ব্যস্ত ছয়টি বছর একসঙ্গে পথচলার নানান স্মৃতিচারণায়। কেউই ভুলতে চান না তাদের প্রিয় ক্যাম্পাসটি, প্রিয় বন্ধু, প্রিয় সহপাঠীদের।

কিন্তু ‘সুখের সময় স্বল্প’—কথাটা তো একবারে মিথ্যা নয়। তাই একসময় গোটাতেই হলো এই আনন্দ-উৎসবের পসরা। বিদায়বেলায় সবার মুখেই বিষাদের ছাপ স্পষ্ট। ছয় বছরের হাসি-কান্নার দোসরদের আর একসঙ্গে পাওয়া হবে না এভাবে। তাদের সমবেত আড্ডায় আর মুখর হবে না একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস (এআইএস) বিভাগের করিডোর।

তবু থেমে থাকবে না কোনো কিছুই। জীবনের আহ্বানে এই বন্ধুরা সামনে এগিয়ে যাবে পেছনে রেখে সব পিছুটান।

তার মানে কি বন্ধুত্বের অবসান? মোটেও নয়। ‘দোস্ত, ফোন নম্বর তো আছেই। আর ফেসবুকেও নিয়মিত যোগাযোগ হবে। ’ সবার এই কথাই জানান দিচ্ছিল, বন্ধুত্ব চির অমলিন...

মোঃ তানভীর হাবীব (মিশুক)
১ম ব্যাচ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

সম্পাদনায়: আবুল কালাম আজাদ, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।