ঢাকা: উত্তরা দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুলে সাম্প্রতিক বিমান বিধ্বস্তের ঘটনার পর থেকেই বন্ধ রয়েছে ক্লাস কার্যক্রম। কয়েক দফা তারিখ ঘোষণা করেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি খুলতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
স্কুল শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মধ্যে এখনো আতঙ্ক ও মানসিক চাপ বিরাজ করছে। ওই দিনের মর্মান্তিক ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তাই অনেক অভিভাবক এখনো সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে সাহস পাচ্ছেন না।
পরিস্থিতি সামাল দিতে ও শিক্ষার্থীদের ট্রমা কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করতে স্কুল কর্তৃপক্ষ গত কয়েকদিন ধরে স্কুল ক্যাম্পাসে একটি কাউন্সেলিং সেন্টার চালু করেছে। পাশাপাশি মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ শিক্ষার্থীদের জন্য বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সহায়তায় খোলা হয়েছে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সকাল ১০টায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্কুলের ভেতরে চালু করা হয়েছে কাউন্সেলিং ও চিকিৎসা সেবা। শিক্ষকরা ফোন করে শিক্ষার্থীদের খোঁজ নিচ্ছেন এবং কাউন্সেলিংয়ে অংশ নিতে আহ্বান জানাচ্ছেন। অসুস্থ শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা নিতে স্কুলে আসতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
স্কুলের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ রাসেল তালুকদার বাংলানিউজকে বলেন, আজ পর্যন্ত আমরা ৬২৩ জন শিক্ষার্থীকে দুইবার করে ফোন করেছি। ট্রমা রিকভারি সেন্টারে তাদের আসার জন্য অনুরোধ করছি। পাশাপাশি, কবে স্কুল খুললে তারা আসতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে সেটিও জানতে চাচ্ছি।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আগামী রোববার (৩ আগস্ট) মিলাদ মাহফিলের মাধ্যমে স্কুল খোলা হবে। এরপর সোমবার থেকে পূর্ণ ক্লাস কার্যক্রম চালু করা হবে। ইংলিশ ভার্সনের নবম ও দশম শ্রেণিতে ছয়শর বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের মধ্যে প্রায় ৪০০ জন শিক্ষার্থীর উপস্থিতি আমরা আশা করছি।
মাইলস্টোন স্কুলের দোয়েল শাখার শিক্ষার্থী হাকিম হাসান রিহাদের মা বাংলানিউজকে বলেন, আজকে ছেলেকে স্কুলে এনেছি ডাক্তারের পরামর্শ নিতে। ওই দিনের ঘটনায় সে খুব ভয় পেয়ে যায়। কয়েকদিন খেতে পারেনি, রাতে ঘুমাতেও পারেনি। এমনকি আমরা পর্যন্ত ঘুমাতে পারিনি। এখন ওকে ডাকলেও ঠিকমতো সাড়া দেয় না। সবচেয়ে খারাপ দিক হলো-সে এখন খুব অমনোযোগী হয়ে গেছে। আগে এমন ছিল না। জানি না, আবার ঠিক হতে পারবে কিনা।
স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যেসব শিক্ষার্থী এখনো মানসিক বা শারীরিকভাবে অসুস্থ-তাদের জন্য চিকিৎসা ও কাউন্সেলিং সেবা অব্যাহত থাকবে। সকল শিক্ষার্থী যেন নিরাপদে ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে স্কুলে ফিরতে পারে, সেজন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
২১ জুলাই মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় শিশু শিক্ষার্থী, শিক্ষিক ও পাইলটসহ অনেকে মারা গেছেন। এ পর্যন্ত পাইলট ও মাইলস্টোন স্কুলের শিক্ষিকসহ মোট ৩৩টি লাশ পরিবারের হস্তান্তর করা হয়েছে। এদের অধিকাংশই শিশু শিক্ষার্থী।
জিএমএম/এসআইএস