ঢাকা, রবিবার, ১২ আশ্বিন ১৪৩২, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫ রবিউস সানি ১৪৪৭

শিক্ষা

অভিযোগ খতিয়ে না দেখে ‘অনিয়ম’ নিয়ে ঢাবি প্রশাসন মিথ্যাচার করেছে: ছাত্রদল

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:১৫, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৫
অভিযোগ খতিয়ে না দেখে ‘অনিয়ম’ নিয়ে ঢাবি প্রশাসন মিথ্যাচার করেছে: ছাত্রদল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ছাত্রদলসহ বিভিন্ন প্যানেলের দেওয়া ‘অনিয়ম’ ও ‘অসঙ্গতির’ অভিযোগ খতিয়ে না দেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মিথ্যাচার করেছে বলে জানিয়েছে ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।

শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) এক বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের জবাবের বিরুদ্ধে পাল্টা প্রশ্ন তুলেছে সংগঠনটি।

এর আগে গত বুধবার বিভিন্ন প্রার্থীর অভিযোগকে ‘অস্পষ্ট’ ও ‘সুনির্দিষ্ট নয়’ বলে জানায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। একই সঙ্গে অভিযোগগুলোকে সারবত্তাহীন বলেও উল্লেখ করে প্রশাসন।

একই সঙ্গে সিসিটিভি ফুটেজ ও ভোটার তালিকা প্রকাশ বিধানে নেই বলেও জানায় প্রশাসন।

এসবের বিপরীতে ছাত্রদল বলছে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দেওয়ার পরও প্রশাসন কেন সেগুলোকে সারবত্তাহীন ও অনির্দিষ্ট বলছে, তা অত্যন্ত অস্পষ্ট। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কালক্ষেপণ করে অভিযোগ এড়িয়ে যাচ্ছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে সংগঠনটি।  

ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দপ্তর সম্পাদক মল্লিক ওয়াসি উদ্দিন তামী পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫-এর বিভিন্ন অনিয়ম ও অসঙ্গতি নিয়ে উত্থাপিত অভিযোগসমূহের বিষয়ে ২৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের উপ-পরিচালক ফররুখ মাহমুদ স্বাক্ষরিত একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নির্বাচনের অংশীদার হিসেবে প্রার্থীগণের পেশ করা আবেদনপত্রগুলো এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্রার্থীগণ কর্তৃক উত্থাপিত ১১টি অভিযোগের বিষয়ে ভালোভাবে বিশ্লেষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা ব্যতীতই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এই বিবৃতিটি প্রকাশ করেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিবৃতিতে মোটাদাগে সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণের আবেদনসমূহকে অনির্দিষ্ট বলা হয়েছে। কিন্তু প্রার্থীগণ তাদের আবেদনপত্রে সুনির্দিষ্ট হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল এবং শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল কেন্দ্রের কিছু নির্দিষ্ট বুথের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনার জন্য আবেদন করেছেন। আর ভোটার উপস্থিতির বিষয়ে শিক্ষার্থীগণ কর্তৃক উত্থাপিত সন্দেহের বিষয়টি নির্বাচনের দিনের সম্পূর্ণ সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ছাড়া নিরসন করা সম্ভব নয়। তাই ভোটকেন্দ্রের সিসিটিভি ফুটেজ পাবলিক ডকুমেন্ট নয় সেটি জেনেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে প্রার্থীগণ তা ব্যক্তিগতভাবে পর্যালোচনার আবেদন করেছেন।

এতে বলা হয়, তদুপরি যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসারে ডাকসু ও হল সংসদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন দিনের মধ্যেই আবেদন করার পরে বারবার মনোযোগ আকর্ষণের আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং সংবাদ সম্মেলন করে সুনির্দিষ্ট ১১টি অনিয়ম ও অসঙ্গতির অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেগুলোকে সারবত্তাহীন ও অনির্দিষ্ট কেন বলা হলো, তা অত্যন্ত অস্পষ্ট। সেই সঙ্গে যথাযথ প্রক্রিয়ানুসারে পেশ করা আবেদন ও অভিযোগসমূহের জবাব না দিয়ে বরং শুধুমাত্র সেসব লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনকেই গুরুত্ব দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যথাযথ প্রক্রিয়ার প্রতি তাদের আন্তরিকতার অভাব প্রকাশ করেছে। তবে কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সেই তথাকথিত ‘যথাযথ প্রক্রিয়া’ কেবল কালক্ষেপণ ও এড়িয়ে যাওয়ার কৌশল? এটি এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীর প্রশ্ন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যেকোনো নির্বাচনে প্রার্থীগণের নিকট ভোটার তালিকা থাকা এবং পোলিং এজেন্টগণ কর্তৃক ভোটগ্রহণ চলাকালেই ভোটার তালিকা অনুসারে উপস্থিতি যাচাইকরণ সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ার একটি অত্যাবশ্যকীয় বিষয়। ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫-এ কোনো পোলিং এজেন্টকেই সেরকম কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি। সে কারণে বাস্তবিক ভোটার উপস্থিতির তুলনায় ভোটার উপস্থিতির প্রকাশিত হার নিয়ে চরম বিতর্কের সৃষ্টি হলেও সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যতীত কারো কাছেই ছিল না এবং এখনো নেই। তবুও সে বিষয়ে ভোটগ্রহণের সময় কোনো রূপ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করে যথাসময়ে যথানিয়মে এসব অসঙ্গতির বিষয়ে সন্দেহ দূর করার লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট আবেদনপত্র দাখিল করা হয়েছে। তাছাড়াও নির্বাচনের আগে ছবি ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসহ ভোটার তালিকা জনসমক্ষে প্রকাশ করার বিষয়ে আইনি জটিলতার সৃষ্টি হয়। সে জটিলতাকে মাথায় রেখেই সকল গোপনীয়তা বজায় রেখে প্রয়োজনে ভোটারদের ছবি ও স্বাক্ষর মুছে শুধু উপস্থিতি চিহ্নিত করে শুধুমাত্র আবেদনকারীদেরকে ভোটার উপস্থিতির তালিকা পর্যালোচনা করার সুযোগ দেওয়ার জন্য সুনির্দিষ্টভাবে আবেদন করা হয়। তার পরেও এসব আবেদনকে অনির্দিষ্ট বা সারবত্তাহীন হিসেবে উল্লেখ করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কার্যক্রমে স্বচ্ছতার অভাব বলেই প্রতীয়মান হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, উক্ত বিবৃতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নীলক্ষেতে ব্যালট পেপার ছাপানো অসম্ভব বলে অভিযোগটিকে পুরোপুরি অস্বীকার করলেও সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এটি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে নীলক্ষেতেই ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫-এর ব্যালট পেপার ছাপানো হয়েছে। অর্থাৎ, এটি স্পষ্ট যে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্রার্থীগণের অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হওয়ায় উক্ত বিবৃতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এসব অনিয়ম ও অসঙ্গতি নিয়ে মিথ্যাচার করেছে।

এতে বলা হয়, যথানিয়মে ও যথাসময়ে পেশকৃত সকল আবেদন/দরখাস্ত/অভিযোগ যথাযথভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন না করেই সেসব অভিযোগ ও আবেদনসমূহকে সারবত্তাহীন ও অনির্দিষ্ট হিসেবে উল্লেখ করা দিনশেষে অভিযোগ এড়িয়ে যাওয়ার আরেকটি অপকৌশল বলেই আমরা সন্দেহ পোষণ করছি।

উল্লেখ্য, নির্বাচনের পরদিন অফিস বন্ধ থাকায় তার পরদিন চিফ রিটার্নিং অফিসার বরাবর আবেদন করা হয়। তৃতীয় দিন চিফ রিটার্নিং অফিসার উপাচার্য বরাবর আবেদন করার নির্দেশনা প্রদান করলে নির্বাচনের প্রার্থীগণ যথানিয়মে তা উপাচার্য বরাবর পেশ করেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও উক্ত বিবৃতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ‘২ সপ্তাহ পর উত্থাপিত অভিযোগ’ বলে ভিত্তিহীন প্রমাণের চেষ্টা করায় এসব অনিয়ম ও অসঙ্গতির বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মনের শঙ্কা এখন আরো ঘণীভূত হয়েছে।

অনিয়মের বিষয়ে উত্থাপিত অভিযোগসমূহের প্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সত্যিকার অর্থেই যোগ্যতাসম্পন্ন বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় স্বচ্ছ ও সঠিকভাবে তদন্ত সম্পন্ন করার পর সেগুলোর সুনির্দিষ্ট ও যুক্তিযুক্ত সত্য জবাব অনতিবিলম্বে শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপন করবে বলে আশা প্রকাশ করেছে ছাত্রদল।

এফএইচ/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।