ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

জেএসসি’র ফল স্বাভাবিক নয়!

ইসমাইল হোসেন ও মাজেদুল নয়ন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৩
জেএসসি’র ফল স্বাভাবিক নয়! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: জেএসসির ফলাফল স্বাভাবিক হয়নি। পাশের হারের চিত্র ভালো হলেও, জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা অস্বাভাবিক।

পরীক্ষায় ঐচ্ছিক বিষয়ের অতিরিক্ত নম্বর যোগ হওয়ার কারণে এ সাফল্য দাবি করেছেন শিক্ষামন্ত্রী। তবে বিপুল পরিমাণে জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, প্রশ্ন উঠেছে প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি নিয়েও।

মাত্র এক বছরের ব্যবধানে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ লাখ ২৫ হাজার ২৬৬ জন বৃদ্ধির বিষয়টি বিস্ময়কর বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা।

রোববারে প্রকাশিত ফলাফলের সঙ্গে গত বছরের তুলনায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এবার কমেছে। ২০১২ সালে ১৯ লাখ ১০ হাজার ৫০৮ জন পরিক্ষার্থী অংশ নিলেও এবার এ সংখ্যা ৯ হাজার কমে হয়েছে ১৯ লাখ ১ হাজার ৯৮১ জন।

এর আগে ২০১০ সালে পরীক্ষার্থী ছিল ১৫ লাখ ৯ হাজার ৮৪৭ জন, ২০১১ সালে ১৮ লাখ ৬২ হাজার ৮৬৫ জন।

এবারে পাশের হারকে স্বাভাবিকই বলছে বিশ্লেষকরা। ২০১২ সালের মোট পাস করে ১৬ লাখ ১ হাজার ৭৫০ জন। এ বছর তা বেড়ে হয়েছে ১৬ লাখ ৭৫ হাজার ১০৯ জন। এর আগে পাশের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ২০১১ সালে ১৫ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ জন এবং ২০১০ সালে ১০ লাখ ২০ হাজার ৪৭ জন।

এবার সবচেয়ে বড় বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা। ২০১২ সালে জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা ছিল যেখানে ৪৬ হাজার ৯৪২ জন, সেই সংখ্যা এবার এক লাফে বেড়েছে সাড়ে তিনগুণেরও বেশি। এবার জিপিএ-৫ প্রাপ্তির এই সংখ্যা ১ লাখ ৭২ হাজার ২০৮ জন।

এর আগের দুই বছরে জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা যথাক্রমে ৩০ হাজার ৮৫২ জন এবং ৮ হাজার ৫৫৬ জন।
গত নভেম্বরে জেএসসি পরীক্ষা চলাকালীন সময়েই পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। সে সময় সংবাদ

মাধ্যমে পরীক্ষার পূর্বেই ফাঁস হওয়া প্রশ্ন প্রকাশ করা হয়। পরবর্তীতে সেই প্রশ্নেই পরীক্ষা নেওয়া হয়।

পরীক্ষা চলাকালীন শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং অভিভাবকদের কাছ থেকেও প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ আসে।

রাজধানীতে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ছিল মফস্বলের তুলনায় কম। বিজ্ঞান পরীক্ষার সৃজনশীল প্রশ্ন, ইংরেজি দ্বিতীয়পত্রের প্রশ্নপত্র ফাঁসের সুনির্দিস্ট প্রমাণ মিললেও সে সময় এসব প্রশ্নকে সাজেশন বলে উল্লেখ করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বোর্ড কর্তৃপক্ষ।

সেসময় রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং যথাসময়ে পরীক্ষা শেষ না করতে পারার আশঙ্কা প্রকাশ করে পরীক্ষা বাতিলের কোনো স্বিদ্ধান্ত নেয়নি মন্ত্রণালয়।

ফল প্রকাশের দিনে জিপিএ-৫ এর এই বিস্ফোরণের কারণ জানতে চাওয়া হয় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের কাছে। তিনি বলেন, এই ফল আপনাদের অস্বাভাবিক মনে হবে, তবে ঐচ্ছিক বিষয় থেকে ৪০ নম্বরের অতিরিক্ত নম্বর যোগ হওয়ার প্রভাব পড়েছে, ফলে জিপিএ-৫ বেড়েছে।  

প্রশ্ন ফাঁসের প্রভাব পড়েছে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, এটি সত্য নয়। প্রশ্নের ফাঁস নয় বরং সাজেশনের কথাই আবারো বলেন তিনি।

গত এইচএসসির ফল কিছুটা খারাপ হলে প্রধানমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন বিরোধীদলের কর্মসূচির কারণে ফল খারাপ হয়েছে। তবে এবার সুর পাল্টে তিনি বলেন, গত ৪ নভেম্বর থেকে সারা দেশে এই পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বিরোধীদলের কর্মসূচির কারণে পেছানো হয়। হরতাল-অবরোধসহ ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিয়েছে।

তিনি বলেন, অনাকাঙ্ক্ষিত (আনপ্রেসিডেন্ট) পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা কেন্দ্রে আসা-যাওয়া করতে হয়েছে। নিষ্ঠুর পরিবেশে মানুষ ও পশুকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। একজন পরীক্ষার্থীও মারা গেছে। এর মধ্য দিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ভালো ফল করায় আমি শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানাই। শিক্ষকদেরও ধন্যবাদ জানাই।
এবছর হরতালে এসএসসিতে ৪১টি ও এইচএসসিতে ৩৭টি বিষয়ের পরীক্ষা পিছিয়ে যায়। হরতাল-অবরোধে ৬ দিনে জেএসসি ও জেডিসিতে ১৭টি বিষয়ের পিছিয়ে যায়। সর্বশেষ প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনীর ৬টি বিষয়ের পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া হয়।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, গত এসএসসি এবং এইচএসসির অভিজ্ঞতা নিয়ে এবার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রতিকূলতার মধ্যেও পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার সাহস সৃষ্টি করেছি। এতে ফলে প্রভাব পড়েছে।  

পাসের হার এবং জিপিএ-৫ বৃদ্ধিকে খুব স্বাভাবিকভাবে দেখছেন না বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, শিক্ষার মান যাচাই করা প্রয়োজন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা, গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ঐচ্ছিক বিষয়ের কারণে জিপিএ-৫ বেড়েছে এটা ঠিক।
 
তবে শিক্ষার মান যাচাই যথাযথভাবে হচ্ছে বলে জোর গলায় বলতে পারছি না। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি বা টেকনিক্যাল ক্ষেত্রে ঠেকে যাচ্ছে। ৭০ শতাংশের বেশি নম্বরধারীরা ঢাবিতে চান্স পাচ্ছে না। জ্ঞানার্জনে কতটা সফল তা দেখার বিষয়। এজন্য গবেষণার প্রয়োজন।  
 
আর যে পরিস্থিতির মধ্যে পরীক্ষা দিয়েছে তাতে ফল বিপর্যয় হতে পারত বলে আশঙ্কা ছিল। কিন্তু শিক্ষার্থীরা ভালো করেছে এজন্য তাদেরসহ শিক্ষক-অভিভাবকেরা অভিনন্দন পাওয়ার যোগ্য।
 
প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ থাকলেও সেটাকে গুরুত্ব না দিয়ে তিনি বলেন, ফলে অতটা প্রভাব পড়েনি।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৩
সম্পাদনা: কবির হোসেন ও এম জে ফেরদৌস , নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।