ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

পূর্ণতায় পরিতৃপ্ত প্রাণে প্রাপ্তির প্রশান্তি

সাখাওয়াত আমিন, ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ৭, ২০১৪
পূর্ণতায় পরিতৃপ্ত প্রাণে প্রাপ্তির প্রশান্তি ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: তোমাদেরকে মনে রাখতে হবে, আজকের এ সমাবর্তন তোমাদের অর্জনকে যেমন আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিচ্ছে, তেমনি দায়িত্বও অর্পণ করছে। সে দায়িত্ব নিজের পরিবারের প্রতি, সমাজের প্রতি, সর্বোপরি দেশ ও জাতির প্রতি।



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৮তম সমাবর্তনে নব্য গ্রাজুয়েটের উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলছিলেন রাষ্ট্রপতি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো: আবদুল হামিদ।

রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, দেশ ও সমাজ আজ তোমাদের এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। তাদের কাছে তোমরা ঋণী। তোমরা তোমাদের অর্জিত জ্ঞান, মেধা ও মনন দিয়ে দেশমাতৃকার কল্যাণ করতে পারলে সে ঋণ কিছুটা শোধ হবে।

রাষ্ট্রপতির এ আহ্বানকে প্রত্যাখ্যান করেননি সদ্য শিক্ষাজীবন শেষ করা এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পথে পা বাড়ানো নব্য গ্রাজুয়েটরা। দেশের কল্যাণে নিজেদের মেধা ও মনন কাজে লাগানোর কথা বললেন তারাও।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে সদ্য স্নাতক শেষ করা শরিফুল ইসলাম যেমন বলছিলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় গত চার বছরে আমাকে অনেক দিয়েছে। কিন্তু এবার আমার দেওয়ার পালা। শ্রদ্ধেয় শিক্ষকরা আমাকে যা শিখিয়েছেন সে শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে আমি দেশ ও জাতির কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করতে চাই।

তার মতো এমন শপথ নিলেন সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আনু্ষ্ঠানিক স্বীকৃতি পাওয়া কয়েক হাজার গ্রাজুয়েট। তাদের শিক্ষাজীবন যেন পূর্ণতার স্বাদ পেল। পাশাপাশি তাদের ওপর নতুন দায়িত্বও যেন অর্পিত হল। এ দায়িত্বকে কাঁধে তুলে নিতে প্রস্তুত তারা।

একাডেমিক শিক্ষাজীবনের পূর্ণতায় আজ পরিতৃপ্ত তাদের হৃদয়। প্রাপ্তির প্রশান্তিতে উদ্বেলিত তারা। সামনে লক্ষ্য একটাই কর্মজীবনে পা রেখে দেশমাতৃকার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করা।

বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতক শেষ করা রাশেদুল ইসলাম বলছিলেন, ছোটবেলায় প্রতিদিন মা আমাকে হাত ধরে স্কুলে নিয়ে যেতেন। আবার কড়া রোদের মধ্যে স্কুলের বাইরে অপেক্ষা করতেন, কখন আমার ছুটি হবে। ছুটি হলে আমাকে কোলে তুলে নিতেন আর বলতেন, এই যে তোর জন্য আমি এতো কষ্ট করি, তার বিনিময়ে তুই আমাকে কি দিবি? যখন আমি ঘাবড়ে যেতাম, তখন মা আমাকে আশ্বস্ত করে বলতেন, আরে বোকা আমাকে তোর কিচ্ছুটি দিতে হবে না। শুধু পড়াশোনা করে মানুষের মত মানুষ হবি। আমার সারা জীবনের কষ্ট স্বার্থক হবে।

আজ মনে হচ্ছে, আমার মায়ের সেই কষ্টের দাম কিছুটা হলেও আমি দিতে পেরেছি। এতোদিন আমার ওপর পরিবার ও সমাজ তাদের দায়িত্ব শেষ করেছে। এখন সময় এসেছে তাদের দায়িত্ব নিজের ঘাড়ে তুলে নেওয়ার।
 
গ্রাজুয়েটদের উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয়েল উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, সকল আন্দোলনের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ভাষা আন্দোলন, মহান স্বাধীনতা আন্দোলনসহ সকল আন্দোলনে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের অবদান এ দেশের ইতিহাসে চিরদিনের মতো অনপনেয় কালিতে মুদ্রিত হয়ে আছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে আমার সামনে উপস্থিত তরুণ-তরুণীরা তাদের চেতনা ও শোণিতে সেই বোধ, আকাঙ্খা ও আহ্বানকে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত বহন করবে।

সমাবর্তন বক্তা ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর নিউক্লিয়ার রিচার্স’র(সার্ন) মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. রোলফ ডিটার হুয়েরও বললেন, আনুষ্ঠানিক শিক্ষাজীবন শেষ করে শিক্ষার্থীরা আজ থেকে জ্ঞানের এক নতুন ভুবনে প্রবেশ করল। এ জ্ঞানকে আরো শাণিত করতে প্রয়োজন মৌলিক গবেষণার ওপর জোর দেওয়া। মনে রাখতে হবে, বিজ্ঞানের কোনো ভাষা নেই। বিজ্ঞানের ভাষা এক ও অভিন্ন। তাই বিজ্ঞান ও মৌলিক গবেষণার ওপর জোর দিতে হবে।

তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষক বিশ্বের অন্যতম সেরা বিজ্ঞানী অধ্যাপক সত্যেন বোসের অবদানের কথাও স্মরণ করেন।

জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে ৪৮তম সমাবর্তনের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় বেলা বারোটা থেকে। এর আগে বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে কার্জন হল প্রাঙ্গণ থেকে এক শোভাযাত্রাসহ সমাবর্তনস্থলে প্রবেশ করেন রাষ্ট্রপতি, উপাচার্য, সমাবর্তন বক্তা, উপ-উপাচার্যদ্বয়, সিন্ডিকেট ও সিনেট সদস্য এবং শিক্ষকরা।

বেলা ১২টা ১৩ মিনিটে সমাবর্তন বক্তা ড. রোলফ ডিটার হুয়েরকে সম্মানসুচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ।
বেলা ১২টা ২০ মিনিটে রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মো: আবদুল হামিদকে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। এরপর শুরু হয় ডিগ্রি প্রদান পর্ব।

প্রথমে ডিগ্রি প্রদান করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করা ৩৮ জন গ্রাজুয়েটকে। এরপর পর্যায়ক্রমে এমফিল, এমবিবিএস, স্নাতকোত্তর ও স্নাতক ডিগ্রি প্রদান করা হয়।

বেলা ১২টা ৩৫ মিনিটে বিভিন্ন অনুষদ থেকে স্বর্ণপদক পাওয়া ৩৩ জন শিক্ষার্থীকে ‘স্বর্ণপদক’ পরিয়ে দেন রাষ্ট্রপতি।

বেলা ১টা ৫ মিনিটে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে ভাষণ দেন অধ্যাপক ড. রোলফ ডিটার হুয়ের। এরপর রাষ্ট্রপতি, সমাবর্তন বক্তা, আমন্ত্রিত অতিথি ও গ্রাজুয়েটদের ধন্যবাদ জ্ঞাপণ করেন উপ-উপাচারর‌্য(শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরিন আহমেদ।

বেলা ১টা ৩০ মিনিটে ভাষণ দেন রাষ্ট্রপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার‌্য এবং ৪৮তম সমাবর্তনের সভাপতি মো: আবদুল হামিদ। ভাষণের পরই তিনি সমাবর্তনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে শেষ হয় ৪৮তম সমাবর্তনের সমস্ত আনুষ্ঠানিকতা।

৪৮তম সমাবর্তনে অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন স্তরের ডিগ্রিধারী মোট ৮ হাজার ৩১২ জন গ্রাজুয়েট। গ্রাজুয়েটদের মধ্যে রয়েছেন, পিএইচডি ৩৮ জন, এমফিল ২৫ জন, স্বর্ণপদক ৩৩, এমডি-এমএস ৩৪ জন, বিভিন্ন অনুষদের অনার্স ৪ হাজার ৬৮০ জন, বিভিন্ন অনুষদের মাস্টার্স ৮৫৫ জন, এমবিবিএস ১ হাজার ৭২০ জন, বিডিএস ২৮২ জন, নার্সিং ২২১ জন, ফিজিওথেরাপি ২০১ জন, শিক্ষা অনুষদ ১ জন, হোমিও আয়ুর্বেদিক ৪৭ জন, বিএড ১০৩ জন এবং এমএড ৭২ জন।

সমাবর্তন শেষ হলেও নতুন জীবন শুরু হল আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পাওয়া দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের গ্রাজুয়েটদের। তাদের দায়িত্বশীলতা, দায়বদ্ধতা, দক্ষতা ও দেশপ্রেমই পারে একটি সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে। এমনটি প্রত্যাশা সমাবর্তনে আগত অতিথিদের।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩১ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।