ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

প্রাথমিক-উচ্চশিক্ষায় অগ্রগতি, মাধ্যমিকে নয়

নুর মোহাম্মদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৪
প্রাথমিক-উচ্চশিক্ষায় অগ্রগতি, মাধ্যমিকে নয়

ঢাকা: পাসের হার বৃদ্ধি সত্ত্বেও শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে শিক্ষা দেওয়া হয়, তার মান যদি উপযুক্ত না হয়, তাহলে কাঙ্ক্ষিত চাহিদা পূরণ হবে না।

তিনি বলেন, প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও উচ্চশিক্ষায় অগ্রগতি হলেও মাধ্যমিকের অবস্থা ভালো নয়।

এখানে আরো কাজ করতে হবে।

তিনি বলেন, মাধ্যমিক শিক্ষার ব্যাপারে চিন্তা করার সময় এসেছে। এখানে সরকার বিনিয়োগ করছে। জনগণের ট্যাক্সের অর্থে শিক্ষকদের এমপিও দিচ্ছে। এটা করা হচ্ছে, মাধ্যমিকে শিক্ষার মান বাড়ানোর জন্য। কিন্তু, বাস্তবে কতটুকু বেড়েছে, তার চুলচেরা বিশ্লেষণের সময় এসেছে।

গণসাক্ষরতা অভিযান আয়োজিত ‘সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা (ইএফএ) ও ২০১৫ পরবর্তী এজেন্ডা: বাংলাদেশের সুশীল সমাজের প্রেক্ষিত’ শীর্ষক এক সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ফরাসউদ্দিন এসব কথা বলেন।

সারাদেশ থেকে আসা শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও উম্মুক্ত আলোচনায় শিক্ষাখাতে পাসের হার বৃদ্ধিসহ বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সত্ত্বেও কোচিং, টিউশনির মতো নানা অনিয়ম ও অবহেলার চিত্র তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। পরে শিক্ষামন্ত্রী এসব বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপ ও ঘাটতির কথাও বলেন।    

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বৃত্তিমূলক শিক্ষার ওপর জোর দিয়ে বলেন, ১৫ থেকে ৫৯ বছর বয়সী মানুষ এদেশে প্রায় ১০ কোটি আর ১৫-৪০ বছরের মানুষ রয়েছে ৫ কোটি। এদের বৃত্তিমূলক শিক্ষা দিয়ে মানবসম্পদে পরিণত করতে পারলে দেশের অগ্রগতি বর্তমানের চেয়ে আরো বেশি হতো।

এছাড়াও গ্রাজুয়েটের মান যদি উপযুক্ত না হয়, তবে তার যথার্থ বাজার চাহিদা সৃষ্টি হবে না।

প্রাইভেট টিউশন, কোচিং ও নকল- এই তিনটি বিষয় জাতীয় অগ্রগতিকে আটকে দিচ্ছে বলে এ সময় মন্তব্য করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক এ গভর্নর।

রাজধানীর এলজিইডি মিলনায়তনে শনিবার অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে আলোচকদের বক্তব্যে শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য, ভর্তি বাণিজ্য, শিক্ষকদের ক্লাসে অনিয়মিত পাঠদান, ভর্তিতে ডোনেশন বাণিজ্য, বাণিজ্যিক স্কুল প্রতিষ্ঠার হিড়িক ও সেখানে মোটা অংকের ডোনেশনসহ শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অনিয়মের চিত্রও উঠে আসে।  

এ সময় তারা অভিযোগ করেন, স্কুল পরিচালনা কমিটিতে (এসএমসি) নিরক্ষর লোকেদের ভিড়, শিক্ষকদের কর্ম ঘণ্টায় ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা, চরাঞ্চলে মাধ্যমিক শিক্ষার সুযোগের অভাবসহ নানা বিষয় শিক্ষার মূল অগ্রগতিকে আটকে ধরেছে।

জবাবে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, স্কুল পরিচালনা কমিটি (এসএমসি) বিধিমালা করে দিয়েছি। সেখানে ষ্পষ্ট বলা আছে, কারা কারা কমিটিতে আসবেন। তাতে সংসদ সদস্যদের হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই।

কিন্তু এখন বাস্তব কথা হলো, প্রভাবশালীরা এরপরও হস্তক্ষেপ করেন। কিন্তু, স্থানীয় লোকজন যদি এটার বিরুদ্ধে না দাঁড়ান, তবে এটা রোধ করা সম্ভব হবে না।

শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষকদের দেরিতে স্কুলে আসা ও আগেভাগে স্কুল থেকে চলে যাওয়ার ব্যাপারেও গ্রামবাসীর দায়িত্ব নেওয়ার বিষয় উল্লেখ করেন।

এ সময় তিনি বলেন, স্কুলে শিক্ষকরা কয়টায় আসেন আর কয়টায় যান, সরকার কীভাবে তা দেখবে! সেখানে গ্রামের লোকজন অন্তর্ভুক্ত হতে হবে। গ্রামবাসীদের সচেতন করতে এনজিওরা একটি বড় ধরনের অবদান রাখতে পারে।

মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে বেসরকারি শিক্ষকদের বেতনের শতভাগই দিয়ে থাকে সরকার। সে কারণে বর্তমানে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা এমপিও হিসেবে শিক্ষকদের দিতে হচ্ছে। শিক্ষা বাজেটের একটি বিরাট অংশ এই খাতে চলে যাচ্ছে।  

সঞ্চালকের বক্তব্যে গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, শিক্ষায় অবশ্যই বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এটা শুধু আমাদের দাবি নয়, সবার দাবি, শিক্ষায় মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৬ শতাংশ অথবা জাতীয় বাজেটের ২০ শতাংশ বরাদ্দ করতে হবে। এটা এখন সময়ের দাবি। না-হয় বিশ্ববাজারে আমরা টিকতে পারবো না।   
 
‘বাংলাদেশ ইএফএ-২০১৫ পরিবীক্ষণ’ শীর্ষক খসড়া প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইডির জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা মনজুর আহমেদ বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে নিট ভর্তির হার শতভাগের কাছাকাছি হলেও এক্ষেত্রে মান রক্ষায় যথেষ্ট অগ্রগতি হয়নি। শিক্ষায় সুশাসন ও ব্যবস্থাপনাতেও ঘাটতি রয়েছে।

নিম্ন মাধ্যমিকে (ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণী) নিট ভর্তির হার ৫০ শতাংশের নিচে। আর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে ঝরে পড়ার হারও বেশি।

ইএফএ নিয়ে সুশীল সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিতে করা প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরেন ব্র্যাকের শিক্ষা গবেষণা ইউনিটের কর্মসূচি প্রধান সমীর রঞ্জন নাথ।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে ভর্তিতে ছেলে ও মেয়েদের সমতার লক্ষ্য অর্জিত হলেও ছেলেরাই বেশি শিখছে। নবম শ্রেণীর পর মেয়েদের ঝরে পড়া বাড়ছে।

অনুষ্ঠানে গণসাক্ষরতা অভিযানের পক্ষ থেকে তিনটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।

এ সব প্রবন্ধে বলা হয়, শিক্ষার বিভিন্ন লক্ষ্য এবং তা অর্জনের উপায় ও  চ্যালেঞ্জ, শিক্ষাখাতে ইতোমধ্যে সরকারের অর্জন, পাসের হার বাড়লেও শিক্ষার্থীদের শিখন দক্ষতা না বাড়ার মতো ত্রুটি এ সব বিষয় নিয়ে সরকারকে এখনই জোরালোভাবে ভাবতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।