ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষেই আগ্রহ

ইসমাইল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩০ ঘণ্টা, মে ৬, ২০১৪
মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষেই আগ্রহ ছবি: ফাইল ফটো

Ismail_hossainকক্সবাজার থেকে: ব্লাকবোর্ড আর চক-ডাস্টারের গতানুগতিক ক্লাসে বিরক্তি ধরে যেত, সবাই কথা বলাবলি করত। কিন্তু মাল্টিমিডিয়ায় ক্লাসরুমে সবার আকর্ষণ বেড়ে গেছে।

বেড়েছে আমাদের ক্রিয়েটিভিটি।

তথ্য-প্রযুক্তির উৎকর্ষতার যুগে শ্রেণিকক্ষেও যখন এর ছোঁয়া লেগেছে, তখন ল্যাপটপের মাধ্যমে প্রজেক্টরে ক্লাস করে নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করলেন কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী তাসনীম নাওয়া।

সমুদ্র তীরের শহর কক্সবাজারে তিনদিনব্যাপী শিক্ষক সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে আয়োজিত ‘একুশ শতকের শিক্ষক: দক্ষতা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনারে নিজের চাওয়ার কথা ব্যক্ত করেন তাসনীম।

‘একুশ শতকের শিক্ষায় আলোকিত শিক্ষক’ শ্লোগানে সোমবার এই সম্মেলন শুরু হয়েছে। এতে রয়েছে বেশ কয়েকটি সেমিনার। সেমিনারগুলোতে ডিজিটাল শিক্ষা পদ্ধতির উপরেই বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের উপস্থিতিতে একই সেমিনারে অংশ নিয়ে কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির সাইদ আব্দুল্লাহ বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে যে শিক্ষক শিক্ষা দেবেন তারাই আমাদের পছন্দের শিক্ষক। তার বিদ্যালয়েও মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমে কয়েকটি ক্লাস চালু আছেন বলে জানান সাইদ।

শিক্ষকরা নতুন প্রজন্ম তৈরির নিয়ামক শক্তি উল্লেখ করে একই সেমিনারে মন্ত্রী বলেন, গতানুগতিক শিক্ষা কৌশলের বাইরে শিক্ষকদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জন করতে হবে। ক্লাসরুমকে আনন্দদায়ক করতে না পারলে হবে না।

দুই বছর আগে ২০ হাজার ৫০০ স্কুল বাছাই করে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমে ল্যাপটপ, মডেম, প্রজেক্টরের মাধ্যমে ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি করে শিক্ষাদান শুরু হলেও এখন সেসব প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৩ হাজারের উপর বলে জানান মন্ত্রী।

প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষা অর্জনের উপর গুরুত্ব দিয়ে নাহিদ বলেন, ভবিষতে সব ক্লাসরুমকে মাল্টিমিডয়া ক্লাসরুম করা হবে। এজন্য সব শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তুলব যাতে তারা ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরির দক্ষতা অর্জন করতে পারে।  

পরে শিক্ষামন্ত্রী জেলার কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেন।
 
এর মধ্যে কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন নাহিদ।

এই স্কুলের ষষ্ট শ্রেণির ছাত্রী সাবরিনা সুলতানা হ্যাপী বলেন, ডিজিটাল ক্লাসরুম বেশি আনন্দদায়ক।

১৯১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত রামু খিজারী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ও পরিদর্শন করেন শিক্ষামন্ত্রী, বসেন শিক্ষার্থীদের বেঞ্চে।

এই স্কুলের শিক্ষার্থীরা মন্ত্রীর কাছে ডিজিটাল ক্লাসরুমের প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি সরবরাহের আবেদন জানান মন্ত্রীর কাছে।

শিক্ষামন্ত্রীকে কাছে পেয়ে উদ্বেলিত অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী কিশোর শর্মা ও শাহরিয়ার হোতা শাওন বাংলানিউজকে বলেন, স্যার (মন্ত্রী) আমাদের ডিজিটাল ক্লাসরুম করে দেওয়ার কথা বলেছেন।

বাংলার শিক্ষক অপির্তা চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে ডিজিটাল ক্লাসরুম আবশ্যক। এতে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ অনেক বাড়বে।

এদিকে কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পাশে বসানো মেলায় গণিতের ডিজিটাল কনটেন্ট নিয়ে এসেছেন কক্সবাজার মডেল হাই স্কুলের সহকারী শিক্ষক কানিজ ফাতেমা।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, তাদের স্কুলে দুজনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে মাত্র ১২ দিন। এ থেকে তারা তিনটি বিষয়ের কনটেন্ট তৈরি করছেন। শিক্ষার্থীদের আগ্রহের জন্য তাদের কাছে অন্য শিক্ষককরাও কনটেন্ট তৈরির কৌশল শিখছেন।

কানিজ ফাতেমা বলেন, ডিজিটাল ক্লাসরুমে বাচ্চারা আগ্রহ নিয়ে ক্লাস করে। সরঞ্জামাদির অভাবে প্রতিদিন সম্ভব না হলেও কবে ক্লাস হবে তার জন্য মুখিয়ে থাকে শিক্ষার্থীরা।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এ-টু-আই প্রোগ্রাম ও ব্রিটিশ কাউন্সিলের যৌথ উদ্যোগে এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় আয়োজিত শিক্ষকদের এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন দেশের ১০০ জন শিক্ষক। যারা মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরিতে বিশেষ অবদান রাখছেন।

শিক্ষকদের একুশ শতকের চেতনায় উদ্বুদ্ধকরণ, আধুনিক প্রযুক্তি-কলাকৌশলের মাধ্যমে পাঠদানে উৎসাহ প্রদান, শিক্ষায় তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা, পারস্পরিক মতবিনিময়ের সুযোগ সৃষ্টি, শিক্ষকদের পেশাগত উন্নয়ন এবং জাতি গঠনে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি প্রদানের উদ্দেশ্যেই এ সম্মেলনের আয়োজন।

শিক্ষক সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন সন্ধ্যায় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ৪২ জন শিক্ষককে পুরস্কৃত করবেন।

** ডিজিটাল-সনাতন কনটেন্টে গণিত-বিজ্ঞানের সহজ পাঠ
** শিক্ষায় তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহারে শিক্ষক সম্মেলন

 

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫১ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।