ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

রাবির ছাত্রী হলে দুর্বিষহ জীবন

রফিকুল ইসলাম, রাবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩০৮ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০১৪
রাবির ছাত্রী হলে দুর্বিষহ জীবন ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

রাবি(রাজশাহী): আড়াই হাত প্রস্থের একটি বেডে থাকতে হয় দুইজনকে। দুজনের জন্য একটি চেয়ার ও টেবিল।

মধ্যখানে দুই হাত ফাঁকা রেখে একটি বেডের পর আরেকটি বেড। ১৫ জনের জন্য উপযুক্ত এমন কক্ষে ৬০ থেকে ৭৫ জনের আবাস।

ব্যবহার্য জিনিসপত্র রাখতে হয় বেডের নিচে ট্যাংকের ভেতর অথবা বেডের ওপরই। খাওয়া দাওয়া, পড়ালেখা সব বেডের ওপর। চার বেডের জন্য একটি ফ্যান। নিজস্ব ফ্যান রাখার জায়গা নেই।

রাজশাহী বিশ্বদ্যিালয়ের (রাবি) প্রতিটি ছাত্রী হলের গণরুমের দৃশ্য এটি। আবাসন সঙ্কটে পড়ে আবাসিক হলের গণরুমে এভাবেই দুর্বিষহ জীবন-যাপন করতে হচ্ছে ছাত্রীদের।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হলগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে এ সঙ্কট চললেও নতুন আবাসনের ব্যবস্থা না হওয়ায় অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি ছাত্রী হলের ১৮টি গণরুমে একই অবস্থা। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের জন্য ১১টি আবাসকি হল থাকলেও ছাত্রীদের জন্য রয়েছে মাত্র পাঁচটি হল।

গণরুমের থাকা কয়েকজন ছাত্রী বাংলানিউজকে জানান, প্রচণ্ড অসুবিধার মধ্য দিয়ে ছাত্রীদের গণরুমে অবস্থান করতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর প্রথম বর্ষে হলে সিট পাওয়া যায় না। দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রীদের হলে প্রথমে গণরুমে থাকতে হয়।

গণরুম ছেড়ে ভালো কক্ষে ছিট পেতে হলে প্রায় এক থেকে দেড় বছর অপেক্ষা করতে হয়। গণরুমে ওঠার পর লেখপড়ার সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকায় অনেকেই পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের তাপসী রাবেয়া হলের ছাত্রী জোবায়দা শিরিন জ্যোতি বলেন, গণরুমে গাদাগাদি করে থাকতে হয়, তার ওপর আবার ভ্যাপসা গরম। বিশ্ববিদ্যালয় পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন মেসে সিট ভাড়া অনেক বেশি। এজন্য অনেকটা বাধ্য হয়েই হলে থাকতে হয়।

শুধু তিনি নন গণরুমে থাকা সকল ছাত্রীদের একই কথা। পড়ালেখার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে ছাত্রীদের জন্য আরো কয়েকটি হলের বিকল্প নেই বলে জানান ছাত্রীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর প্রায় ১২০০ নতুন ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী সংখ্যা প্রায় সাত হাজার। ছাত্রীদের পাঁচটি আবাসিক হলে আবাসনের ব্যবস্থা আছে তিন হাজার ৮০০ জনের। বাকি প্রায় তিন হাজার ছাত্রীকে ক্যাম্পাসের বাইরে মেসে অথবা বাসা ভাড়া করে থাকতে হয়।

ক্যাম্পাসে বাইরে থাকা এসব ছাত্রীকে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হয়। এছাড়া থাকা ও খাওয়ার জন্য খরচ করতে হয় অতিরিক্ত টাকা। পরিবহন সমস্যার কারণে ক্যাম্পাসে যাওয়া-আসা করতে মুখোমুখি হতে হয় নানা প্রতিবন্ধকতার।

সমাজকর্ম বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তৌহিদা ফাতেমা বাংলানিউজকে বলেন, ‘ক্যাম্পাসের বাইরে থাকতে অনেক টাকা খরচ হয়। কিন্তু একবছর পার হলেও আবাসন সমস্যার কারণে হলে ওঠা হচ্ছে না। আবাসন সুবিধা বঞ্চিত ছাত্রীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন হল নির্মাণ করা দরকার।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের আবাসন সঙ্কটের কথা চিন্তা করে ২০১১ সালের নভেম্বরে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল নামে একটি হলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর প্রায় আড়াই বছরে কেবল হলের গ্রাউন্ড ফ্লোরের নির্মাণ কাজ শেষ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা প্রফেসর ছাদেকুল আরেফিন মাতিন বলেন, ছাত্রদের জন্য ১১টি হল থাকায় তাদের আবাসন সঙ্কট তেমন নেই। তবে ছাত্রীদের জন্য মাত্র ৫টি হল থাকায় তাদের আবাসন সঙ্কট রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মিজানউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ছাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত হল না থাকায় তাদের কষ্ট করে গণরুমে থাকতে হচ্ছে। ছাত্রীদের আবাসন সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। শেখ ফজিলাতুন্নেসা নামে একটি ছাত্রী হলের নির্মাণ কাজ চলছে। আশা করছি এ বছরের মধ্যেই হলটির কাজ শেষ হবে। আরেকটি নতুন হল নির্মাণে অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৩০৮ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।