ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

অর্থাভাবে পড়াশোনা বন্ধের আশঙ্কা হাবিবার

শাহিদুল ইসলাম সবুজ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫১ ঘণ্টা, মে ২১, ২০১৪
অর্থাভাবে পড়াশোনা বন্ধের আশঙ্কা হাবিবার ছবি:বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

জয়পুরহাট: সংসারের নিত্য টানাপোড়েন বার বার প্রতিবন্ধকতা তৈরি করলেও দমাতে পারেনি হাবিবাকে। বাড়ি থেকে স্কুল ১০ কিলোমিটার দূরে হলেও রোজ বাবার বাইসাইকেলে করে যাতায়াত করেছে সে।



চরম দারিদ্র ও প্রতিকূলতাকে মোকাবেলা করে পড়াশোনা চালিয়ে গেছে হাবিবা। অদম্য ইচ্ছাশক্তির বলে দরিদ্রতার সঙ্গে সংগ্রাম করে বিজয়ী হয়েছে সে।

এ বছর মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় (এসএসসি) সর্বোচ্চ ফলাফল করেছে জয়পুরহাট সদর উপজেলার দোঁগাছি ইউনিয়নের পেঁচুলিয়া গ্রামের দিনমজুর আব্দুল হাকিমের মেয়ে উম্মে হাবিবা।

উম্মে হাবিবা জয়পুরহাট সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ গোল্ডেন ৫ পেয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে।

তার এ সাফল্যে দরিদ্র বাবা-মা ও গ্রামবাসী দারুণ খুশি। সবার মুখে একই কথা, উম্মে হাবিবা দরিদ্র বাবার জীর্ণ কুটিরে চাঁদের আলো।

প্রাথমিক ও জেএসসি পরীক্ষাতেও বৃত্তি লাভ করা সহ প্রতিটি ক্লাসে মেধার স্বাক্ষর রাখা উম্মে হাবিবাকে গত ৫ বছর ধরে প্রায় ১০ কিলোমিটার পথ সাইকেলে বসিয়ে আসা-যাওয়া করেছেন বাবা। হতদরিদ্র বাবার স্বপ্ন ছিল মেয়েকে তিনি ডাক্তার বানাবেন। হাবিব‍াও স্বপ্ন দেখতো একদিন ডাক্তার হয়ে বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করবে সে।

কিন্তু হাবিবার সে স্বপ্নে বাঁধ সেধেছে আর্থিক সক্ষমতা। তার বাবার আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় এখন পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তার পরিবার পড়াশোনার খরচ যোগানোর চিন্তায় এখন বাধ্য হয়ে হাবিবার বিয়ের চিন্তা করছে।

ফলে ভালো ফলাফল করেও মুখে হাসি নেই উম্মে হাবিবার। বরং পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার আশঙ্ক‍ায় এখন তার দু’চোখ জুড়ে অশ্রুর বন্যা।

অন্যের বাড়িতে টুকটাক কাজ করা তার অসহায় মা জানিয়ে দিয়েছেন, আর পড়ালেখার খরচ জোগাতে পারবেন না। বিয়ে দিয়ে দুশ্চিন্তা ঘোচাতে চান তারা।

হাবিবার মা ফরিদা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, এতোদিন খরচ কম ছিল। কোনোমতে মেয়েটার লেখাপড়ার খরচ জোগাড় করেছেন। কিন্তু কলেজে লেখাপড়ার ব্যয় অনেক বেশি। তাদের পক্ষে এ খরচ কোনোভাবেই দেওয়া সম্ভব নয়।

হাবিবার স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা নাসরিন আকতার জুন বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি মেয়ে এতো ভাল রেজাল্ট করেছে। যা শহরের বিত্তবান শিক্ষার্থীদের জন্য অনুকরণীয়।

এ বিষয়ে যোগযোগ করা হলে জয়পুরহাট সদর উপজেলার দোঁগাছি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম জানান, দরিদ্র মেধাবী উম্মে হাবিবাদের মতো অসহায় মেয়েদের উচ্চ শিক্ষার জন্য সবার এগিয়ে আসা উচিৎ।

তিনি আশা প্রকাশ করেন হাবিবার কলেজের পড়াশোনার ব্যয় নির্বাহ করে বাবা-মা ও তার স্বপ্ন পূরণে সমাজের হৃদয়বানরা এগিয়ে আসবেন।

সমাজের দুঃস্থ ও আর্তপীড়িত মানুষের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে বাংলানিউজের নিজস্ব ত্বত্তাবধানে পরিচালিত হচ্ছে 'বাংলানিউজ সোশ্যাল সাভির্স' (বিএনএসএস) সামাজিক সেবা কর্মসূচি।

হাবিবাকে বাংলানিউজের মাধ্যমে সাহায্য করতে চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন, বিএনএসএস এর আহ্বায়ক শারমীনা ইসলাম, ফোন: ০১৯৩৭১৯৯৩৭৬ বা ইমেল: [email protected] এর মাধ্যমে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘণ্টা, মে ২১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।