ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

ইউজিসিতে পদোন্নতি

রিসিপসনিস্ট-টাইপিস্টরাই উপ-পরিচালক

শাহজাহান মোল্লা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৩ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১৪
রিসিপসনিস্ট-টাইপিস্টরাই উপ-পরিচালক

ঢাকা: দেশের উচ্চ শিক্ষা নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় মুঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) চলছে ভৌতিক পদোন্নতি। রিসিপসনিস্টকে পদোন্নতি দিয়ে করা হয়েছে উপ-পরিচালক।



শুধু তাই নয়, গ্রহণযোগ্য নীতিমালা না থাকায় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সখ্যতার সুযোগে প্রতিষ্ঠানটির তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীরা রাতারাতি হয়ে যাচ্ছেন প্রথম শ্রেণির গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য ও পরিসংখ্যানে জানা গেছে, ক্রুটিপূর্ণ পদোন্নতি ব্যবস্থার সুযোগে এক সময় প্রতিষ্ঠানটিতে তৃতীয় শ্রেণির পদে যোগদানকারী ব্যক্তিরাই এখন অধিষ্ঠিত হয়েছেন অতিরিক্ত পরিচালক, উপ-পরিচালক ও সিনিয়র সহকারী সচিবের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে।

ইউজিসি’র অতিরিক্ত পরিচালক এস এম মনিরুজ্জামান প্রতিষ্ঠানটিতে যোগ দিয়েছিলেন ল্যাব সহকারী (তৃতীয় শ্রেণী) পদে। শিক্ষা জীবনে তৃতীয় শ্রেণি প্রাপ্তরা সরকারি প্রথম শ্রেণির জন্য অযোগ্য। মনিরুজ্জামান তৃতীয় শ্রেণিতে বিএসসি পাস করেছেন।

তারপরেও তাকে কর্মচারী থেকে কর্মকর্তা বানানো হয়েছে। শুধু তাই নয় তাকে পদোন্নতি দিয়ে অতিরিক্ত পরিচালকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত করা হয়েছে।
রিসিপসনিষ্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠানটিতে ২০০০ সালের ১ জুন যোগ দিয়েছিলেন নাহিদ সুলতানা। পরবর্তীতে ২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসে হয়েছেন সককারি সচিব। এই নাহিদ সুলতানাই এখন প্রতিষ্ঠানটির উপ-পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

অভিযোগ রয়েছে তাকে পদোন্নতি দেওয়ার ক্ষেত্রে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সখ্যতাই আর্শীবাদ হিসেবে কাজ করছে।

বিএ পরীক্ষায় তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন নুর মোহাম্মদ মোল্লা। তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে যোগ দেন ইউজিসিতে। এই নুর মোহাম্মদই এখন প্রতিষ্টানটির উপ-পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগ)।
 
প্রতিষ্ঠানিতে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ৯৯ জন। এদের মাঝে ৩৩ জনই ইউজিসিতে চাকরি শুরু করেছিলেন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে। এই ৩৩ জনের ৫ জন আবার শুধুই এসএসসি পাস। এইচএসসি পাস আছেন আরো ৭ জন।
 
এছাড়াও অনেকেই প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, যাদের শিক্ষাজীবনে এক বা একাধিক তৃতীয় শ্রেণি রয়েছে।

কর্মচারী থেকে কর্মকর্তা বনে যাওয়া এই ব্যক্তিরা হলেন- এস এম মনিরুজ্জামান, নুর মোহাম্মদ মোল্লা, শাহ আলম, নাহিদ সুলতানা, দেওয়ান গোলাম সরোয়ার, আলমগীর তালুকদার, আব্দুল জলিল মিয়া, রফিকুল ইসলাম, শংকর কুুমার চক্রবর্তী, জালাল উদ্দীন, মোস্তাফিজুর রহমান, শফিকুর রহমান, জালাল আহমেদ, রাবেয়া খন্দকার, খোরশেদ আলম খন্দকার, সুলতান মাহমুদ, মো. শরিয়াতুল্লাহ, গিয়াস উদ্দীন, লিয়াকত হোসেন, সুরাইয়া ফারহানা, আনোয়ার হোসেন, রেখা রানী বাকচী, সৈয়দ এহতেসাম আলী, আমির হোসেন চৌধুরী, শহিদ উল্লাহ, সফিকুল ইসলাম, জাকির হোসেন পাটোয়ারি, দাউদ হোসেন, এনামুল হক, শাহজাহান মিয়া, শফিউল্লাহ, আব্দুল ওয়ারেজ ও মো. নজরুল ইসলাম।
 
এসব ব্যক্তিরা প্রতিষ্ঠানটিতে করণিক, টাইপিষ্ট, রিসিপসনিস্ট, এমএলএসএস, কম্পিউটার অপারেটর, টেকনিশিয়ান, ল্যাব সহকারীসহ ৩য় শ্রেণির বিভিন্ন পদে যোগদানের মধ্য দিয়ে চাকরি জীবন শুরু করেন।
 
প্রতিষ্ঠানটিতে জালাল উদ্দীন নামে একজন সিনিয়র সহকারী সচিবের দেখা মিলেছে। যিনি শিক্ষা জীবনে বি.কম পাস। এই কর্মকর্তা এসএসসি, এইচএসসি এবং বি.কম তিনটিতেই ৩য় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন।
 
ইউজিসিতে অর্থ ও হিসাব বিভাগের পরিচালকের দায়িত্বে আছেন মুহাম্মদ ইব্রাহিম কবির। শিক্ষাজীবনে তিনি এসএসসি এবং বি.কম পরীক্ষায় ৩য় বিভাগ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন।
 
নীতিমালা অনুযায়ী ইউজিসিতে সরাসরি পদোন্নতির কোনো ব্যবস্থা নেই। প্রতিটি পদোন্নতির জন্য প্রার্থীকে নতুন করে পরীক্ষা দিতে হয়। কিন্তু পদোন্নতির আদর্শ নীতিমালার অনুপস্থিতি এবং পূর্ণাঙ্গ কমিশনের একক ক্ষমতার কারণেই পদোন্নতির ক্ষেত্রে অযোগ্য ব্যক্তিরা রাতারাতি কর্মকর্তা বনে গেছেন। এ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির উচ্চ যোগ্যতা সম্পন্ন কর্মকর্তাদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ  করছে।
 
এ বিষয়ে  যোগাযোগ করা হলে ইউজিসি’র সচিব ড. মোহাম্মদ খালেদ গত বৃহস্পতিবার রাতে বাংলানিউজকে বলেন, কোনো পদোন্নতিই নিয়নীতির বাইরে হয়নি। প্রতিটি পদোন্নতি কমিশনের বৈঠকেই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে হাতে গোনা ৪/৫ জন আছেন যাদের কর্মদক্ষতা বিবেচনা করে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে তাদের শিক্ষাজীবন মূল্যায়ন করা হয়নি। ’
 
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৩ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।