ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

শিক্ষা আইনে থাকবে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ‘কঠোর’ সাজা

তাবারুল হক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৪ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৪
শিক্ষা আইনে থাকবে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ‘কঠোর’ সাজা

ঢাকা: প্রশ্নপত্র ফাঁসের অপরাধে জড়িতদের বিরুদ্ধে ‘কঠোর’ সাজা প্রদানের সংশ্লিষ্ট ধারা ‘শিক্ষা আইন-২০১৩’র খসড়ায় সংযোজন করতে যাচ্ছে সরকার। প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিরুদ্ধে সম্প্রতি দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সুশীল সমাজের আন্দোলনের ফলে সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে।



গত ৮ এপ্রিল প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি পরীক্ষার ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা স্থগিত করে শিক্ষা বোর্ড। পরবর্তীতে বিভিন্ন শিক্ষাবোর্ডে এইচএসসি’র অন্যান্য বিষয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে ওঠে।

এরপর থেকে শিক্ষাবিদরা বিশেষ করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জাফর ইকবাল প্রশ্নপত্র ফাঁসের জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ও কঠোর আইন প্রণয়নের দাবিতে জাতীয় শহীদ মিনারে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন।

এরপর গত ১১ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয় দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়নের বিষয়ে মতামত, পরামর্শ ও সুপারিশ গ্রহণের জন্য দেশের খ্যাতিমান অর্ধ শতাধিক প্রবীণ শিক্ষক, শিক্ষাবিদ ও বিশিষ্ট নাগরিকদের নিয়ে বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

বৈঠকে পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে কঠোর শাস্তির বিধান রেখে আইন করার সুপারিশ করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, শিক্ষকসহ বিশিষ্ট নাগরিকরা।

গতানুগতিক পদ্ধতিতে প্রশ্নপত্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এখন প্রশ্নপত্র করা হয় এনালগ পদ্ধতিতে আর যারা প্রশ্নপত্র ফাঁস করছে তারা থাকেন ডিজিটাল। তাই প্রশ্নপত্র তৈরি থেকে বিতরণ পর্যন্ত আধুনিক প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারসহ কঠোর শাস্তির বিধান রেখে আইন করা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে বলেও বক্তারা বৈঠকে অভিমত ব্যক্ত করেন।

এরপর শিক্ষাবিদ ও বিশিষ্ট নাগরিকদের পরামর্শে পাবলিক পরীক্ষাসহ সব ধরনের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অপরাধে জড়িতদের বিরুদ্ধে ‘কঠোর’ সাজা প্রদানের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট ধারা ‘শিক্ষা আইন-২০১৩’র খসড়ায় সংযোজন করতে উদ্যোগ গ্রহণ করে শিক্ষামন্ত্রণালয়।

এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রণালয়ে আইন কর্মকর্তা (উপ-সচিব) গৌতম কুমার বাংলানিউজকে বলেন,  ‘শিক্ষা আইন-২০১৩’ খসড়া চূড়ান্ত করে মন্ত্রিপরিষদে পাঠানো হয়েছিল। খসড়াটি চূড়ান্ত করতে জাতীয় পর্যায়ে সভা, সেমিনার ও তিনশ’-চারশ’ প্রতিষ্ঠানের মতামত নেওয়া হয়। মন্ত্রিপরিষদও এই আইনের বিষয়ে কিছু সুপারভিশন ও অবজারভেশন দিয়েছে।

তিনি বলেন, এরই মধ্যে প্রশ্নপত্র ফাঁস ও জড়িতদের কঠোর দণ্ড প্রদানের দাবি উঠে আসে। এরপর আমরা মন্ত্রিপরিষদ থেকে আইনের খসড়াটি আবার ফিরিয়ে নিয়েছি।

এই খসড়া ‘শিক্ষা আইন-২০১৩’র মধ্যে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অপরাধ ও সাজার ধারাটি সংযোজন করে পূণরায় মন্ত্রিপরিষদে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন গৌতম কুমার।

এদিকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী, জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি, এমবিবিএস, বিডিএস ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিসহ সব ধরনের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িতদের যাবজ্জীবন দণ্ড প্রদানের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে গত ১০ জুন একটি রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইউনুছ আলী আকন্দ।

নির্দেশনার পাশাপাশি বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার ঘটনা তদন্তের বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনের নির্দেশনাও চাওয়া হয় এই রিটে।

এ বিষয়ে ইউনুছ আলী আকন্দ বাংলানিউজকে বলেন, রিট আবেদনটি আগামী সপ্তাহে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আকবর হোসেনের অবকাশকালীন বেঞ্চে শুনানি হবে।

প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িতদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন চাওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এর আগে যে সব পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে এ বিষয়েও তদন্তে বিচার বিভাগীয় কমিশনের আর্জি জানানো হয়েছে।

এর আগে প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিরুদ্ধে পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইন, ১৯৮০ এবং সংশোধনী ১৯৯২-এর চার নম্বর ধারায় অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতো। এই ধারা মতে, প্রশ্নপত্র ফাঁস, প্রকাশ বা বিতরণের সঙ্গে জড়িত থাকার শাস্তি ন্যূনতম ৩ বছর থেকে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ড প্রদান। কিন্তু এ পর্যন্ত প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে হাতে গোনা কয়েকটি ছাড়া অধিকাংশ ঘটনার বিরুদ্ধে শাস্তির নজির নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।