ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

ড্যাফোডিল কোচিং সেন্টার বিশ্ববিদ্যালয়!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১০ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০১৪
ড্যাফোডিল কোচিং সেন্টার বিশ্ববিদ্যালয়! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: আশুলিয়ায় প্রাসাদসম লোক দেখানো একটি ক্যাম্পাস উদ্বোধন করলেও কোচিং সেন্টারের মতো ঢাকা শহরের অলিতে গলিতে গড়ে উঠেছে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির অবৈধ শাখা ক্যাম্পাস।
 
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিজস্ব ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠার জন্যে তাগিদ দিলে আশুলিয়ায় প্রত্যন্ত অঞ্চলে সবুর খান গড়ে তোলেন ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির অট্টালিকা।

২০১৩ সালে উদ্বোধন করা হয় স্থায়ী ক্যাম্পাসটি।
 
আশুলিয়ার দত্তপাড়ায় গড়ে ওঠা ক্যাম্পাসে ক্লাস শুরু হয়নি এখনো। রাজধানী থেকে যোগাযোগের ভালো মাধ্যম না থাকায় শিক্ষার্থীরা আগ্রহী হচ্ছেন না ওই ক্যাম্পাসে যেতে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও সেখানে পৌঁছানোর কোনো পরিবহন সেবা প্রদান করছে না।
 
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র বাংলানিউজকে বলেন, আইনের চোখকে ফাঁকি দেওয়ার জন্যে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের মাসে দুই-একটি ক্লাস নেওয়া হচ্ছে আশুলিয়াতে। আর ইউজিসিকে বোঝানো হচ্ছে, স্থায়ী ক্যাম্পাসে ক্লাস শুরু হয়েছে।
 
আশুলিয়াতে স্থায়ী ক্যাম্পাস উদ্বোধনের পরেও এখনো কোচিং সেন্টারের মতো শহরের বিভিন্ন স্থানে অবৈধ ক্যাম্পাস চালিয়ে যাচ্ছে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়। শহরে বিল্ডিং ভাড়া করে, মার্কেট ভাড়া করে, দোকান ভাড়া করে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়টির কার্যক্রম। ইউজিসির পক্ষ থেকে বারবার শাখা ক্যাম্পাস বন্ধের নির্দেশনা থাকলেও, সে নিয়মকে বুড়ো আঙ্গুল দেখাচ্ছে ড্যাফোডিল।

সূত্র জানান, এখনো শুক্রাবাদে ভাড়া ক্যাম্পাসের নামে ভর্তি কার্যক্রম চালিয়ে শাখা ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী ভর্তি করাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
 
আশুলিয়ার ক্যাম্পাসটিকে স্থায়ী আখ্যা দিয়ে, মিরপুর রোডের শুক্রাবাদ ক্যাম্পাসকে সবুর খান এবং তার পারিবার কেন্দ্রিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে ‘মূল ক্যাম্পাস’।
 
এ বিষয়ে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী (প্রতিমন্ত্রী) বাংলানিউজকে বলেন, এটি মানুষকে স্রেফ বোকা বানানো। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস আশুলিয়াতে আবার মূল ক্যাম্পাস ধানমন্ডির শুক্রাবাদে, এটা হাস্যকর এবং মানুষ ঠকানোর কৌশল।
 
অনুসন্ধানে জানা যায়, শুক্রাবাদে মূল ক্যাম্পাসের সঙ্গেই আরেকটি ভবন ভাড়া নিয়ে সেটির নাম দেওয়া হয়েছে প্রশাসনিক ভবন।
 
ঘোষণা দিয়েই শাখা ক্যাম্পাস চালাচ্ছে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি। ৪/২ সোবহানবাগ, ধানমন্ডি ঠিকানায় প্রিন্স প্লাজার উপরের কয়েকটি ফ্লোর ভাড়া নিয়ে সেখানেও চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। এ ক্ষেত্রে মার্কেটের গ্যারেজের অভ্যর্থনা কক্ষ ব্যবহৃত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যর্থনা কেন্দ্র হিসেবে। এ ক্যাম্পাসটিকে শাখা ক্যাম্পাস-৩ বলে অভিহিত করছে কর্তৃপক্ষ।
 
উত্তরায় তিনটি মার্কেটে শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে ড্যাফোডিল। ৩ নম্বন সেক্টরের ৭ নম্বর রোডের ৪ এবং ৬ নম্বর বাড়ির ঠিকানায় যে মার্কেটগুলো রয়েছে সেখানে চলছে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি। এসব ভবনে কোচিং সেন্টারের মতোই ৪ থেকে ৫টি কক্ষ ভাড়া নিয়ে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়। তবে দুই মার্কেটের এই কোচিং সেন্টারগুলোকে ডোফোডিল কর্তৃপক্ষ অভিহিত করছে, ‘উত্তরা ক্যাম্পাস-১’ নামে।
 
উত্তরায় ৩ নম্বর সেক্টরের ১৮ নম্বর রোডের ২৮ নম্বর বাড়িটি হচ্ছে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তরা ক্যাম্পাস-২। এ ভবনটির অবস্থা দেখে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং নয়, বরং উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের কোনো কোচিং সেন্টারই মনে হয় বেশি।
 
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে তোয়াক্কা না করেই চলছে এসব অবৈধ শাখা ক্যাম্পাস। এসব শাখা ক্যাম্পাস হয়ে উঠছে সনদ বাণিজ্যের আখড়া।
 
অনুসন্ধানে জানা যায়, এসব ক্যাম্পাসে ক্লাস হয় না নিয়মিত। শুধু শিক্ষার্থীরা এসে উপস্থিতি দিয়ে যায়। আর শিক্ষকরাও থাকেন সীমিত। আবার পরীক্ষা বা একাডেমিক কাজগুলো সারতে হয়, শুক্রাবাদের ক্যাম্পাসেই। শাখা ক্যাম্পাসে ক্লাস করার জন্যে শিক্ষার্থীদের গুনতে হয় বেশি বেতন।
 
কোচিং সেন্টারের আদলে চলা এ বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে ইউজিসি চেয়ারম্যান আরো বলেন, অবৈধভাবে যারা এ ধরনের শাখা ক্যাম্পাস চালাচ্ছে, তাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। আগামী ২ মাসের মধ্যেই বন্ধ করতে হবে এসব ক্যাম্পাস। আর ফিরতে হবে স্থায়ী ক্যাম্পাসে। স্থায়ী ক্যাম্পাসকে সাইন বোর্ড হিসেবে ব্যবহার করে, কোচিং সেন্টারের মতো শাখা ক্যাম্পাসকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না।
 
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়টি সম্পর্কে পূর্বেরও অভিযোগ রয়েছে প্রশাসনে আত্মীয়করণের।
 
এ বছরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে পুরোপুরি চলে না গেলে বিশ্ববিদ্যালয়টির কার্যক্রম বন্ধ করা হবে বলে জানান তিনি।
 
বাংলাদেশ সময়: ১০১০ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।