ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

৯৪ বছরে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড

সাখাওয়াত আমিন, ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩২ ঘণ্টা, জুলাই ১, ২০১৪
৯৪ বছরে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: বাংলাদেশের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ এবং ভাষা আন্দোলন, মহান  ‍মুক্তিযুদ্ধসহ বাঙ্গালি জাগরণ ও সংগ্রামের সুতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

মঙ্গলবার দেশের সর্বোচ্চ ও শ্রেষ্ঠতম এ বিদ্যাপীঠ হাঁটি হাঁটি পা পা করে সুদীর্ঘ ৯৩ বছর পার করে ৯৪ বছরে পদার্পণ করলো।



‘অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় উচ্চশিক্ষা’ প্রতিপাদ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ৯৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করবে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার।

১৯২১ সালের ১ জুলাই ব্রিটিশ শাষনের ভারতবর্ষের পূর্ববঙ্গে পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে প্রতিষ্ঠিত হয় এ একটি বিশ্ববিদ্যালয়। নাম তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

একে একে ৯৩ বছর পার করে দীর্ঘ যাত্রায় জ্ঞান বিতরণের পাশাপাশি একটি দেশের স্বাধীনতা অর্জনের মধ্য দিয়ে জন্ম, ও এর পরবর্তীতে সে দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ধারাবাহিক অবদান রেখে ৯৪ বছরে পা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।  

এ উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে প্রিয় প্রতিষ্ঠানের জন্মদিন পালনের সমস্ত প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই সম্পন্ন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

ইতোমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনসহ প্রতিটি একাডেমিক ভবনে মনোরম আলোকসজ্জা করা হয়েছে।

দিবসটি উপলক্ষে ক্যাম্পাসে দিনব্যাপী কর্মসূচিও গ্রহণ করা হয়েছে।

সকাল সোয়া ১০টায় প্রশাসনিক ভবন সংলগ্ন মল চত্ত্বরে জাতীয় পতাকা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও হলসমূহের পতাকা উত্তোলন, কেক কাটা এবং উদ্বোধনী সংগীতের মধ্য দিয়ে দিবসটির কর্মসূচি শুরু হবে।

জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে দিনব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধন ঘোষণা করবেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।

এছাড়া অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল ১০টায় নিজ নিজ বিভাগে বিজ্ঞান বিষয়ক প্রদর্শনী এবং সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে প্রাচীন পান্ডুলিপি প্রদর্শনী।

সকাল ১০টায় চারুকলা অনুষদে শিশুদের জন্য চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ছাড়াও বিকেলে জয়নুল গ্যালারিতে প্রদর্শীত হবে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল চিত্রকর্ম।

বায়োমেডিকেল ফিজিক্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের উদ্ভাবিত চিকিৎসা প্রযু্ক্তির যন্ত্রপাতি ও গবেষণা কর্মের প্রদর্শনী থাকছে সকাল ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত।

দুপুর দেড়টা থেকে ২টা পর্যন্ত ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট ও ভালনারেবিলিটি বিভাগে অনুষ্ঠিত হবে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান ‘ভুমিকম্প মহড়া’।

সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় নাটমন্ডলে প্রদর্শীত হবে শেক্সপিয়রের বিখ্যাত নাটক ‘হ্যামলেট’।

উল্লেখ্য, ১৯২১ সালে ঢাকার রমনা সিভিল স্টেশন এলাকায় প্রায় ৬০০ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রথমে তিনটি অনুষদ, ১২টি বিভাগ, অনার্স ও মাস্টার্সসহ ৮৫০ শিক্ষার্থী ও ৬০ শিক্ষক নিয়ে শুরু হয়েছিল শিক্ষা কার্যক্রম।

প্রতিষ্ঠার পরপরই ক্রমেই বাড়তে থাকে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সংখ্যা। দেশের মোট ছাত্র-ছাত্রীর চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে বৃদ্ধি করা হয় বিভাগ, অনুষদ ও ইনস্টিটিউট সংখ্যা।

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৩টি অনুষদ, ৭৪টি বিভাগ, ১১টি ইনস্টিটিউট, ৪৮টি গবেষণা ব্যুরো ও কেন্দ্র, ১৯টি আবাসিক হল, ৩টি হোস্টেল, ৩৫ হাজার ৫৯০ জন শিক্ষার্থী ও এক হাজার ৮৬২ জন শিক্ষক রয়েছে।

শিক্ষাক্ষেত্রে অসাধারণ অবদানের জন্য প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। এশিয়া তথা বিশ্বের বরেণ্য শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও বিজ্ঞানীদের অনেকই ছিলেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্র।

এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান করতেন মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, রমেশ চন্দ্র মজুমদার, সত্যেন বসু, হরিদাস ভট্টাচার্য, জি এইচ ল্যাংলি, রাধা গোবিন্দ বসাক, জ্ঞানচন্দ্র ঘোস, বি এম সেনগুপ্ত, গণেশচরণ বসু, রাজেন্দ্র চন্দ্র হাজরা, মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, ড. জি সি দেব প্রমুখ।

এ বিশ্ববিদ্যালয়ে অবদান শুধু শিক্ষা ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নয়। বাংলাদেশ নামে জাতি রাষ্ট্রের উদ্ভবের পেছনে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান অনস্বীকার্য।

নানা সৃষ্টি ও উদ্ভাবনে এবং সঙ্গীত, নাটক, ক্রীড়া, আবৃত্তি ও বিতর্ক চর্চাসহ নানা সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে এ বিশ্ববিদ্যালয় অসামান্য অবদান রেখে আসছে।

বিশেষ করে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আন্দোলনের নানা কর্মকাণ্ডসহ ’৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ’৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ’৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা সর্বজনস্বীকৃত। অপ্রতিদ্বন্দ্বী ভূমিকার ফলে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের প্রতিশব্দ হয়ে দাঁড়ায় বিশ্ববিদ্যালয়টি।

বাংলাদেশ সময়: ০০২৬ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।