ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

স্কুল গেছে নদীতে, অন্যের বাড়িতে পাঠদান

টিটু দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ৮, ২০১৫
স্কুল গেছে নদীতে, অন্যের বাড়িতে পাঠদান ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কিশোরগঞ্জ: ‘আমরার ইস্কুল খাইছে ধনু নদী, তিন বছর ধইরা স্কুল পাইতেছি না, মাইনসের (অন্যের) খোলা বারান্দায় লেহাপড়া করতেছি, এমন কইরা লেহাপড়া অয় না। ’

‘স্কুল নাই, চেয়ার নাই, টেবিল নাই, বেঞ্চ, ব্ল্যাকবোর্ড, নলকূপ নাই এমন স্কুলে লেহাপড়া অয় কেমনে।

স্কুল বানাইয়া দেন। ’

চোখে-মুখে তীব্র ক্ষোভ নিয়ে এ কথা বলছিল পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া মার্জিয়া।

শুধু মার্জিয়া নয়, তার মতো ক্ষোভ কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার সুতারপাড়া ইউনিয়নের চং নোয়াগাঁও গ্রামের চং নোয়াগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের।

তিন বছর আগে প্রমত্তা ধনু নদীর ভাঙনের কবলে পড়ে স্কুল ভবনসহ সব অবকাঠামো নদীতে বিলীন হয়ে যায়।
এরপর থেকে গ্রামের বিভিন্ন ব্যক্তির বাড়ির বারান্দা ও ভবনে চলছে সরকারি এ স্কুলের পাঠদান।

বর্তমানে স্কুলটিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২২৮ জন। তাদের জন্য শিক্ষক রয়েছেন ৪ জন। তবে বর্তমানে একই গ্রামের ‘রাঙামাটি খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেড’ নামে একটি সামাজিক সংগঠনের ভবনের মেঝেতে পাঠদান চলছে স্কুলটির।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ১৯৬৬ সালে করিমগঞ্জ উপজেলার সুতারপাড়া ইউনিয়নে চং নোয়াগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। নদীভাঙনের কবলে পড়ে ২০১২ সালের এপ্রিল মাসে স্কুল ভবনের কিছু অংশ ভেঙে গেলে কর্তৃপক্ষ স্কুলটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে।

এর এক বছর পর ২০১৩ সালের জুন মাসে স্কুল ভবন, পায়খানা, নলকূপ এমনকি প্রতিরক্ষা দেয়ালসহ পুরো স্কুলের অবকাঠামো পাশের ধনু নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এরপর থেকে নতুন করে স্কুলটি স্থানান্তর বা পুনঃস্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

ফলে কোনো অবকাঠামো না থাকায় একপ্রকার বাধ্য হয়েই গ্রামের এ বাড়ি, ও বাড়ির মানুষের বারান্দায়,  বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের ভবনে ও গ্রামের বিভিন্ন বাড়ির খালি ঘরে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে, হচ্ছে পরীক্ষাও।

জামাল মিয়া নামে স্থানীয় এক অভিভাবক বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার মাইয়া ওই ইস্কুলে ফোরে লেহাপড়া করে। কিন্তু মেঝেতে বসে লেহাপড়া অয় না। ’

চং নোয়াগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয় গত বছর উপকরণ মেলায় জেলায় প্রথম স্থান লাভ করে। কিন্তু তিন বছর ধরে বিদ্যালয় ভবন না থাকায় ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। বিত্তবানরা তাদের ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার জন্য শহরে পাঠিয়ে দিচ্ছেন।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি হাজী মো. ওয়াহেদ আলী ভূঁইয়া বলেন, ‘এ যুগে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের মেঝেতে বসে ক্লাস করতে হয়। এটা ভাবতেই কষ্ট লাগে। সরকার প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করলেও আমাদের গ্রামে তিন বছর ধরে বিদ্যালয় ভবন নেই। ’

তিনি জানান, স্কুল নির্মাণের জন্য তারা জায়গা দিতে রাজি। কিন্তু সরকারিভাবে এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।

জানতে চাইলে করিমগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুস সামাদ আকন্দ বলেন, ‘স্কুলটির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের তালিকা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি। ’

যোগাযোগ করা হলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. গোলাম মাওলা জানান, কিশোরগঞ্জ জেলার ১৩টি উপজেলার জরাজীর্ণ, ধ্বংসপ্রাপ্ত, ক্ষতিগ্রস্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য মহাপরিচালক বরাবর চিঠি দেওয়া হয়েছে।   

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৮, ২০১৫
এসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।