ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

পাঁচ বছরে ১৬ শতাংশ, নীরবে বাড়ছে সাক্ষরতার হার

ইসমাইল হোসেন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৮, ২০১৬
পাঁচ বছরে ১৬ শতাংশ, নীরবে বাড়ছে সাক্ষরতার হার

ঢাকা: সাম্প্রতিক কোনো জরিপ না থাকলেও দেশে অনেকটা নীরবেই বাড়ছে সাক্ষরতার হার। শুধু সই নয়, এখন তিনটি সূচকে নির্ধারণ করা হয় সাক্ষরতার হার।

 

প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বলছেন, পরিবারের সচেতনতা এবং সরকার-বেসরকারি সংস্থাগুলোর প্রচেষ্টায় গত পাঁচ বছরে সাক্ষরতার হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭১ শতাংশ।  

 

বয়স্ক মানুষদের শিক্ষা দিয়ে সাক্ষরতার হারকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য দেশের ৬৪ জেলার জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন মন্ত্রী।
 
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা তথ্যানুযায়ী, ২০১১ সালে দেশে ৭ বছরের ঊর্ধ্বে সাক্ষরতার হার ছিল ৫৫.৮ শতাংশ, ২০১৫ সালে তা হয়েছে ৬৩.৬ শতাংশ। আর ১৫ বছরের ঊর্ধ্বে ২০১১ সালে ছিল ৫৮.৮ শতাংশ এবং ২০১৫ সালে তা ৬৪.৬ শতাংশ হয়েছে।
 
‘অতীতকে জানবো, আগামীকে গড়বো’, স্লোগান নিয়ে বৃহস্পতিবার (০৮ সেপ্টেম্বর) আর্ন্তজাতিক সাক্ষরতা দিবস উদ্‌যাপিত হবে।
 
আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবসের সুবর্ণ জয়ন্তীতে এসে বুধবার (০৭ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে গণশিক্ষা মন্ত্রী বলেন, দেশে বর্তমানে সাক্ষরতার হার ৭১ শতাংশ।
 
২০১১ সালের পর বিবিএস’র সাক্ষরতার হার নিয়ে আর কোনো জরিপ হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিভিন্নভাবে অগ্রগতির কারণে আমরা ৭১ শতাংশ বলছি’।
 
এর পক্ষে মন্ত্রী বলেন, ‘বিভিন্ন মাধ্যমে জরিপ করেছি। বিভিন্ন ক্লাস্টার এলাকায় বয়সভিত্তিক জরিপ আছে’।
 
নিজ নির্বাচনী এলাকায় সাক্ষরতার হার শতভাগ জানিয়ে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিভিন্ন এমপি, এনজিওগুলো চেষ্টা করছেন, কিন্তু সেই হিসাব আসছে না। এমন কিছু কিছু কাজের মধ্যে দিয়ে সাক্ষরতার হারের অগ্রগতি হয়েছে।
 
পাশাপাশি ঝরেপড়ার হার ২০ শতাংশ হলেও বাস্তবে তা নয় বলেও দাবি মন্ত্রীর।
 
বয়স্ক ৪৫ লাখ মানুষ আসছেন জীবন দক্ষতায়
দেশের ৬৪ জেলায় ২৫০ উপজেলায় ৪৫ লাখ বয়স্ক (১৫ থেকে ৪৫ বছর) মানুষকে সাক্ষরতার আওতায় নিয়ে মৌলিক সাক্ষরতা ও জীবন দক্ষতাভিত্তিক কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।
 
আগে সাক্ষর জ্ঞান বলতে শুধু সই দিতে পারলেও ‘মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্প’ নামে এ প্রকল্পের আওতায় লিখতে, পড়তে এবং বুঝতে পারার দক্ষতার মধ্যে নিয়ে আসা হবে।
 
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, ‘জাতীয় কর্মপরিকল্পনা-২’ এবং ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ‘সবার জন্য শিক্ষা’ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং নিরক্ষরতা দূরীকরণে অবদান রাখা এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য।  
 
উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো জানায়, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার ক্ষেত্রে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ, সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতার উন্নয়ন ও প্রসার এবং তিন পার্বত্য জেলার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের জন্য মাতৃভাষায় পাঠ্যপুস্তকের উন্নয়ন করা হবে।
 
সরকারি ৪৫২ কোটি টাকার অর্থায়নে ২০১৪-২০১৮ সাল পর্যন্ত এ প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা থাকলেও প্রকল্পটি বিলম্বিত হচ্ছে।
 
প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী বলেন, জীবন দক্ষতা বৃদ্ধি এবং হাতে-কলমে কিছু শেখানোর জন্য প্রকল্প নিয়ে রিভিউ করতে গিয়ে বেশ কিছু সময় চলে গেছে।
 
এনজিওগুলোর সঙ্গে ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সম্পৃক্ত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রকল্পে অর্থায়ন করা হবে বলেও জানান মন্ত্রী।
 
বাংলাদেশে সাক্ষরতা ও কর্মসূচি
বিশ্বে নিরক্ষরতা দূরীকরণের লক্ষ্যে ১৯৬৫ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো ০৮ সেপ্টেম্বরকে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস ঘোষণা করে। দিবসটির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে- প্রতি বছর আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবসে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাক্ষরতা বিস্তারে সকলকে উদ্বুদ্ধ করা, বিগত বছরের সাক্ষরতা কার্যক্রমের মূল্যায়ন এবং পরবর্তী বছরে নতুন উদ্দীপনা নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা গ্রহণ।
 
বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে প্রথমবারের মতো সাক্ষরতা দিবস উদ্‌যাপিত হয়।
 
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার ঢাকায় ওসমানীস্মৃতি মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবসের কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন।
 
সকাল সাড়ে ৭টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের করা হবে।
 
সবার জন্য শিক্ষা এবং সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার লক্ষ্যসমূহ অর্জনে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে জাতিসংঘের মহাসচিব পাঁচ বছর মেয়াদি গ্লোবাল এডুকেশন ফার্স্ট ইনশিয়েটিভ (জিইএফআই) চালু করেন। এর ফলে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘ সদর দফতরে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বিশ্বের ১৪টি দেশ চ্যাম্পিয়ন হয়, যার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।

 

এ সাফল্যে ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউনেস্কো ‘শান্তি বৃক্ষ’ পদক লাভ করেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ০১১১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৮, ২০১৬
এমআইএইচ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।