ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

বেতন বৈষম্য নিরসন চান প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০১৭
বেতন বৈষম্য নিরসন চান প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা

ঢাকা: মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে প্রজেশ চন্দ্র দাস ১৯৯৯ সালের ৫ ডিসেম্বর ১ হাজার ৯৭৫ টাকা বেতন স্কেলে যোগ দেন। অন্যদিকে মো. ছাইফুল ইসলাম ওই বছর ৬ এপ্রিল ১ হাজার ৮৭৫ টাকা বেতন স্কেলে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন।

২০১৪ সালে ওই প্রধান শিক্ষক ১১তম গ্রেডে এবং সহকারী শিক্ষক ১৪তম গ্রেডে পৌঁছ‍ান। অষ্টম বেতন কাঠামো কার্যকরের পর প্রধান শিক্ষকের বেতনে টাইম স্কেল যুক্ত হয়নি।

অন্যদিকে সহকারী শিক্ষকের বেতনে যুক্ত হয় তিনটি টাইম স্কেল, যা যুক্ত করে তার বেতন চূড়ান্ত করা হয়েছে। যেখানে উভয়ের বেতন ১৫ হাজার ৯৮০ টাকা হয়ে যায়।

সহকারী শিক্ষকের তুলনায় প্রধান শিক্ষক এক ধাপ উপরের স্কেলে নিয়োগ পেলেও ১৫ বছর পর প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের বেতন স্কেল ও মূল বেতন সমান। সহকারী শিক্ষকের তুলনায় প্রধান শিক্ষক পদ ২০০৬ সালে দুই ধাপ এবং ২০১৪ সালে তিন ধাপ উপরের স্কেলে উন্নীত হলেও বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন নেই। ২০১৪ সালের ৯ মার্চ প্রধান শিক্ষকদের উন্নীত বেতনে টাইম স্কেল যুক্ত করে নির্ধারণ না করায় প্রধান শিক্ষকরা এই বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।

সোমবার (১০ এপ্রিল) সচিবালয়ের অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নেতারা এই চিত্র তুলে ধরেন। অষ্টম বেতন কাঠামো বাস্তবায়নের পর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বেতনে সৃষ্ট বৈষম্য দূর করার দাবি জানান তারা।

বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী বলেন, আজকের বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল সমস্যা বোঝা। সেই উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। সমাধান আজই পাচ্ছেন না। আমরা এটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবো। এটার জন্য একটা কমিটিও আছে। আমি সেই কমিটিতে আছি। আপনাদের মন্ত্রীও সেই কমিটিতে আছেন। আমরা এ বিষয়টা সেখানে বিবেচনা করবো।

একমাত্র টাইম স্কেল দিলেই এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলে জানান প্রাথমিক শিক্ষকরা। এ বিষয়ে ২০১৪ সালের ৯ মার্চ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনের বরাত দিয়ে তারা বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণবিহীন প্রধান শিক্ষকদের পদমর্যাদা ৩ শ্রেণি থেকে ২য় শ্রেণিতে উন্নীতকরণপূর্বক তাদের বেতন স্কেল ১১ নম্বর গ্রেড ও ১২ নম্বর গ্রেডে উন্নীত করা হলো। একই সাথে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণবিহীন সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল যথাক্রমে ১৪ ও ১৫ নম্বর গ্রেডে উন্নীত করা হলো।

সংগঠনের নিবাহী সভাপতি ওয়েছ আহমেদ চৌধুরী বলেন, ২০১৪ সালের ২৭ নভেম্বরের অর্থ মন্ত্রণালয়ের দেয়া অন্য একটি চিঠির ফলে আমরা পূর্বের ওই চিঠির সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। এরপর থেকেই জটিলতা শুরু। নতুন বেতন স্কেলেও তা সমাধান করা হয়নি। সুতরাং নতুন বেতন স্কেলে জ্যেষ্ঠ প্রধান শিক্ষকদের এতদিনের সিনিয়রিটি বা চাকরিকালের টাইম স্কেল যুক্ত করে বেতন নির্ধারণ করলে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে সংগঠনের মৌলভীবাজার জেলার সভাপতি মঞ্জুলাল দে বলেন, প্রধান শিক্ষকদের টাইম স্কেল দেওয়া হলে তারা এখন ৮ নম্বর গ্রেডে চলে যেত।

সমিতির যুগ্ম সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী ২০১৪ সালে আমাদের তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেই ঘোষণা অনুসারে গেজেট হয়নি। রেট্রোসপেক্টিভ ইফেক্ট দিয়ে সেই গেজেট হলেও এই সমস্যা থাকে না।

সমিতির সভাপতি মো. আব্দুল আউয়াল তালুকদার বলেন, এই বৈষম্যের ফলে অনেক স্থানে প্রকৃত বেতন ও স্কেল উভয় দিক থেকে সহকারী শিক্ষকরা প্রধান শিক্ষকদের উপরে চলে গেছেন।

সভায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, অর্থসচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মোহাম্মদ আসিফ-উজ-জামান উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩২ ঘণ্টা, এপিল ১০, ২০১৭
এসই/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।