গ্রন্থাগারে ঢোকার মুখে এভাবে গরুর জাবর-চর্বণ দেখে প্রথমেই হোঁচট খেতে হবে পাঠকদের! আর গরুগুলো ডিঙিয়ে সিঁড়ি বেয়ে দোতলার পাঠকক্ষে গেলে খেতে হবে বড় ধরনের ধাক্কা। নানা সমস্যা-সংকট আর ভবনের ঝুঁকিপূর্ণ জীর্ণদশা নিশ্চিন্তে বই পড়া আর জ্ঞান আহরণের ইচ্ছেকে উঁবে দেবে মুহূর্তেই।
বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে সরেজমিনে গণগ্রন্থাগারটিতে গিয়ে প্রবেশপথেই গরুগুলোকে নিশ্চিন্তে জাবর কাটতে দেখা গেছে। দোতলায় উঠতে উঠতে দেখা গেছে, সম্পূর্ণ ড্যাম্প পড়ে দেয়ালগুলো সবুজ শ্যাঁওলায় সয়লাব। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সাপ্তাহিক বন্ধ থাকায় তালাবদ্ধ ছিল গণগ্রন্থাগারটি। তবে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের পর লাইব্রেরিয়ান জালাল উদ্দিন এসে তাদের দুর্দশার বর্ণনা দেন।
জালাল উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের এই গণগ্রন্থাগারটি জেলা ক্রীড়া সংস্থার জায়গায়। আমরা মাসিক ২ হাজার ৭শ’ টাকা ভাড়া দেই।
অবকাঠামোগত অসুবিধার কারণে ২০০৮ সাল থেকে কোনো নতুন কোনো বই এখানে আসেনি। তবে আমাদের ‘হেড অফিসে’ প্রতি বছরের কেনা বইগুলো সংরক্ষিত রয়েছে’।
তিনি বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০১৮ সালের জুনে নতুন ভবনে চলে যাবো। ততোদিন কষ্ট করতে হবে’। এখানে দু’টি কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে। পাঠকেরা তাদের চাহিদামতো তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে থাকেন বলেও জানান জালাল উদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘শনিবার থেকে বুধবার প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গণগ্রন্থাগার খোলা থাকে। এখানে বর্তমানে ২০ হাজার ১৬৩টি বই রয়েছে। গত মার্চ মাসে আমাদের পাঠক সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৩৯ জন। এর মধ্যে নারী পাঠক ১ হাজার ১০৬ জন। দৈনিক গড়ে ১৬২ জন পুরুষ ও ৩৫ জন নারী পাঠক এখানে বই পড়তে আসেন’।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মাঝারি আকারের পাঠকক্ষে বসার স্থান সীমিত। দেয়ালের কোনো কোনো অংশ ‘ড্যাম্প’ হয়ে গেছে, চুন উঠে বিবর্ণ আকার ধারণ করেছে। মাত্র একটি বাথরুম জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তার কার্যালয় ও সরকারি গণগ্রন্থাগারের লোকজনসহ আগতরা ব্যবহার করে থাকেন।
সাইনবোর্ডটি চোখে পড়ার মতো নয় বলে রাস্তা থেকে ঝোঝার উপর নেই যে, এটি একটি সরকারি পাবলিক লাইব্রেরি। মাঠের পাশে এ পাঠাগারের অবস্থান হওয়ায় খেলার হৈ-হুল্লোড়ে পাঠগ্রহণের মনোযোগ ব্যহত হয় বলেও জানান পাঠকরা।
আরও খবর...
** ‘জনবল ও অর্থ সংকটে’ বাংলা একাডেমি গ্রন্থাগার
** খুলনা বিভাগীয় গণগ্রন্থাগারের দুর্দশা চরমে
** ময়মনসিংহের আলোর পাঠশালায় দু’দিন তালা!
** বরিশাল গণগ্রন্থাগারের সেমিনার কক্ষও বেহাল!
** ফেনীর পাবলিক লাইব্রেরি প্রাঙ্গণে জম্পেশ আড্ডা
** মানিকগঞ্জ সরকারি গণগ্রন্থাগার কুকুরের বিচরণক্ষেত্র!
** সপ্তাহে ৩ দিনই ছুটি দিনাজপুর পাবলিক লাইব্রেরিতে!
** জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রে বই আছে, পাঠক নেই!
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০১৭
বিবিবি/এএসআর