এ সময় মিলনকে উদ্ধারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে ৭২ঘণ্টার আল্টিমেটামও দেন তারা।
বুধবার (১২ জুলাই) দুপুরে জবি ক্যাম্পাসের ভাস্কর্য চত্বরের সামনে মিলনকে উদ্ধারের দাবিতে এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালান করা হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে লিখিত ও মৌখিকভাবে বারবার অভিযোগ করা হলেও তাকে খোঁজার ব্যাপারে লক্ষণীয় কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না। জবি প্রক্টর ড. নূর মোহাম্মদ অবহেলা করেছেন বলেও দাবি করেন কয়েকজন শিক্ষার্থী।
মানববন্ধনে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের দশম ব্যাচের ছাত্র রাসেদ বলে, মিলনের নিখোঁজ হওয়ার পর জবি প্রক্টর জানিয়েছিলেন_ মিলন ডিবি পুলিশ হেফাজতে আছে। তাই আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে নিশ্চিন্ত ছিলাম। কিন্তু এখন প্রক্টর বলছেন তথ্যটা ভুল ছিলো। মিলন কোথায় এটা তিনি জানেন না। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কেনো ভুল তথ্য দিয়ে মিথ্যে সান্তনা দিয়েছিলেন আমাদের? প্রক্টরের অবহেলার কারণেই এতোদিন মিলনের খোঁজ পাওয়া যায়নি।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে মিলনের বাবা বলেন, প্রায় দুইমাস হয়ে গেছে। কিন্তু থানা, পুলিশ, ডিবি কোথাও ছেলের সন্ধান পাননি।
জবি শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আমিন বলেন, জবি প্রক্টর এই বিষয় নিয়ে তালবাহানা শুরু করছেন। তিনি ইচ্ছা করলেই পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করতে পারেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলতে পারেন। কিন্তু তিনি দায়িত্ব অবহেলা করছেন।
এদিকে মানববন্ধনে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের কোনো শিক্ষক অংশগ্রহণ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা বলেন, শিক্ষকদের বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেনি।
এ ব্যাপারে মিলনের বিভাগের শিক্ষক নূরে আলম আব্দুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, আসলে আমরা শুনেছিলাম ওকে (মিলনকে) নাকি প্রশ্ন ফাঁস সংক্রান্ত ব্যাপারে আটক করা হয়েছে। তাই নীতিগত কারণে আমরা মানববন্ধনে অংশ নেইনি। তবে খবরটি মিথ্যা ছিলো।
এ বিষয়ে আদাবর থানার উপ-পরিদর্শক ও মিলনের নিখোঁজের তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বাংলানিউজকে জানান, নিখোঁজ মিলনের পরিবার আদাবর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। কিন্তু আমাদের কাছে এখনো কোন খোঁজ নেই মিলনের। তবে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চায়িয়ে যাচ্ছি। ওইদিন ডিবি পরিচয়ে ঠিক কারা বাসায় গিয়ে মিলনকে ধরে নিয়ে গেছেন তাদের ব্যাপারে জানার চেষ্টা করছি।
তিনি বলেন, সঠিক তথ্য না পেয়ে আমরা কোনোকিছু বলতে পারছি না। আমরা ডিএমপি কমিশনার পর্যন্ত এ বিষয়ে কথা বলেছি এবং সবগুলো গুয়েন্দা বিভাগে তদারকি চালাচ্ছি। কোনো খোঁজ পাওয়া মাত্রই তার পরিবারকে জানানো হবে।
জবি প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. নূর মোহাম্মাদ বাংলানিউজকে বলেন, আমরা এ বিষয়ে যথেষ্ট তৎপরতা চালাচ্ছি। ইতোমধ্যে ডিএমপি কমিশনার বরাবর একটি লিখিত চিঠিও পাঠানো হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদের মানববন্ধকেও আমরা যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। আমাদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে চেষ্টার কোনো ঘাটতি নেই।
গত ২৩ মে ভোররাতে মোহাম্মদপুরের আদাবর এলাকা থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে কয়েকজন দুর্বৃত্ত মিলনকে তুলে নিয়ে যায়। আটকের খবর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অস্বীকার করলে পরদিন মিলনের পরিবার আদাবর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে।
তার সহপাঠিরা ঘটনাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে জানালে প্রক্টর নূর মোহাম্মদ পুলিশের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষার্থীদের জানান যে, মিলন ডিবি হেফাজতে আছে। এতে শিক্ষার্থীরা নিশ্চিন্ত হন। কিন্তু ডিবি কার্যালয়ে মিলনের মা বাবা ছেলের সঙ্গে দেখা করতে গেলে মিলন তাদের হেফাজতে নেই বলে জানায় ডিবি কার্যালয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৭ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০১৭
ডিআর/জিপি