বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ৮টি নিবন্ধিত সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন রয়েছে। এদের মধ্যে ‘মাইম সোসাইটি’ ছাড়া বাকি ৭টি; জবি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, চলচ্চিত্র সংসদ, জবি ডিবেটিং সোসাইটি, জবি আবৃত্তি সংসদ, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পগোষ্ঠী (জবি শাখা), জবি ফটোগ্রাফিক সোসাইটি ও জবি আইটি সোসাইটি চালু বা কার্যক্রম শুরু করেছে বেশ আগে থেকে।
একসময় জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সংগঠনগুলোর কর্মী ও সদস্যরা প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে বিভিন্ন পদক ও শীর্ষস্থান দখল করলেও এই মুহূর্তে তাদের আগের সেই উজ্জ্বল অতীত ভুলে স্থবিরতায় আটকে আছে।
উল্লেখিত ৮টি সংগঠনের কোনটিরই সাম্প্রতিককালে কোনো ধরনের কর্মকাণ্ড চোখে পড়েনি। নবীন সংগঠন মাইম সোসাইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন লাভের পূর্বে বেশ কিছু অনুষ্ঠান করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিও তখন তাদের এমন অনুষ্ঠান আয়োজনে মুগ্ধ হয়ে দ্রুত অনুমোদন দেন এবং প্রশংসাতেও ভাসান। কিন্তু অনুমোদন নেওয়ার পর আর তাদের দেখা পাওয়া দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অন্যদিকে আইটির দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম দেখেছে এমন কাউকে পাওয়া যায়নি। ডিবেটিং সোসাইটি তাদের কার্যক্রম জাতীয় পর্যায়ে চালিয়ে গেলেও ক্যাম্পাসে তেমন আলোড়ন তুলতে পারছে না। ফটোগ্রাফিক সোসাইটির নতুন কমিটির দায়িত্ব নেওয়ার পর অনলাইনে কিছু কার্যক্রম দেখা গেলেও বাস্তবে দেখা যাচ্ছে না। এছাড়া বাকিগুলোর অবস্থাও আইটি সোসাইটির মতোই। নামে আছে আর অনুদানে আছে, তবে কাজে নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মনে করেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলোর দায়িত্ব হচ্ছে, সেই বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সার্বিক অবস্থাকে তাদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সকল শ্রেণীর মানুষের কাছে তুলে ধরা। কিন্তু সেখানে যদি স্থবিরতা চলে আসে তবে তা বিশ্ববিদ্যালয়কে সঠিকভাবে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয় মানে শুধু পড়াশোনা নয় বরং সংস্কৃতি বিকাশেরও জায়গা, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রায় সব অনুষ্ঠানেই তার বক্তৃতায় বলে থাকেন।
এদিকে শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর দায়িত্বরত নেতাদের সাথে কথা বললে তারা বাংলানিউজকে বিভিন্নভাবে নিজেদের কর্মসূচির বিষয়ে বোঝাতে চেষ্টা করেন এবং তাদের কর্মসূচি সঠিক পথে চলছে এমনটাই মনে করেন তারা। তবে সার্বিক কার্যক্রমকে অধিক ত্বরান্বিত করতে আরো বেশি পরিমাণে বাজেট দেওয়ার দাবিও জানান তারা।
এ বিষয়ে কথা হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের সভাপতি দেবাশীষ বিশ্বাস পাভেলের সঙ্গে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমাদের কার্যক্রম সঠিকভাবেই চলছে। আমরা নিয়মিত কর্মশালা করছি এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণে চলচ্চিত্রকে সবার মাঝে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। আমাদের জন্য আসলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বরাদ্দকৃত অনুদানের পরিমাণ অনেক কম হয়ে যায়। আমাদের ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকার প্রয়োজন হয় চলচ্চিত্র প্রদর্শনীতে, কিন্তু আমরা পাই মাত্র ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে জবির উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি শাহেদুল ইসলাম কবির বাংলানিউজকে বলেন, আমরাও পিছয়ে নেই বিশ্ববিদ্যালয়ে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর অনুষ্ঠান সময় মত হয়ে থাকে। তবে আমাদের গতিশীলতা কিছুটা কমে যাওয়ার কারণ অনেক। প্রায় সময়ই দেখা যায় যারা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবে তাদের ক্লাস, মিডর্টাম, সেমিস্টার পরীক্ষা থাকে এবং রিহার্সালের জন্যও সময় দিতে পারেন না আমাদের অংশগ্রহণকারীরা ক্লাসের এটেনডেন্সের জন্য।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবৃত্তি সংসদ এর সভাপতি নাভিদুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের আবৃত্তি সংসদের কার্যক্রম সঠিক ধারাতেই চলছে। গত ডিসেম্বরেও আমরা আবৃত্তি অনুষ্ঠান করেছি। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসের ২০ তারিখ রাত ১২ টায় আমরা ‘চেতনায় একুশ’ নামে একটি আবৃত্তি অনুষ্ঠান করে থাকি। ফেব্রুয়ারি মাসকে সামনে রেখে আমাদের প্রস্তুতি চলছে। সঠিক সময়ে আমাদের অনুষ্ঠান পরিচালিত হবে।
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক সবুজ রায়হান বাংলানিউজকে বলেন, জবির সামাজিক ও সংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর মধ্যে আমাদের ডিবেটিং সোসাইটি সবচেয়ে বেশি গতিশীল। প্রতি সপ্তাহে রবি, মঙ্গল, বৃহঃস্পতিবার আমাদের পার্টিসিপেশন হয়ে থাকে অবকাশ ভবনে থাকা আমাদের নিজেস্ব রুমে। এছাড়া আমরা আন্তঃবিভাগ বিতর্ক প্রতিযোগিতা ও আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় বির্তক প্রতিযোগিতা সঠিক সময়েই আয়োজন এবং অংশগ্রহণ করছি। আমাদের নিয়মিত কর্মশালা ও প্রশিক্ষণ হয়ে থাকে বির্তকের বিষয় নিয়ে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জবি ফটোগ্রাফিক সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক সুশান্ত বসাক বাংলানিউজকে বলেন, মাঝে কিছুটা সময় কার্যক্রম কিছুটা মন্থর থাকলেও আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর আগামী এক বছরের একটি প্ল্যান তৈরি করেছি। এর মধ্যে প্রতি মাসে একদিন ফটো আড্ডা ও একদিন ফটো ওয়ার্ক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আমাদের বাজেট অত্যন্ত নগন্য, তাই আশা করব আমাদের বাজেট বৃদ্ধি পেলে আরো অনেক কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারব।
তবে জবির সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও কল রিসিভ করেননি নেতারা। এ বিষয়ে কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ মো. সেলিম ভুঁইয়াকে ফোন করা হলে তিনিও ফোন রিসিভ করেননি।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০১৮
কেডি/এমজেএফ